নিজস্ব প্রতিবেদক: ভালো ঋণগ্রহীতাদের ‘রিবেট’ দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা পালন করছে না ব্যাংকগুলো। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল সোমবার চিঠি দিয়ে সব ব্যাংককে সতর্ক করেছে। পাশাপাশি কোন ব্যাংক কতজনকে রিবেট দিয়েছে এবং প্রাপ্য রিবেট দেয়নি এ তথ্য চাওয়া হয়েছে। দুদিনের মধ্যে এ তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠাতে বলা হয়েছে চিঠিতে।
জানা গেছে, আগামী ৩ জানুয়ারি ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় ভালো ঋণগ্রহীতাদের রিবেট সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন গভর্নর। এজন্য সব ব্যাংকের কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকঋণ নিয়ে সময়মতো পরিশোধ করেন যেসব গ্রহীতা, তারা ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে পরিচিত। ২০১৫ সালের মার্চে এক সার্কুলার জারি করে এ ধরনের গ্রাহককে চিহ্নিত করে প্রতিবছর রিবেট দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রাহকদের উৎসাহিত করতেই এ নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এসব নির্দেশনা ঠিকঠাকমতো পরিপালন করছে না ব্যাংকগুলো। বেশিরভাগ ব্যাংকই এ নির্দেশনা মানছে না, জানতে পেরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে চিঠি দিয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি কোন কোন ব্যাংক গ্রাহকদের রিবেট দেয়নি, তাদের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাঠাতে বলা হয়েছে।
২০১৫ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো গ্রাহকের ঋণ যদি তিন বছর অ-শ্রেণীকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় থাকে এবং ঋণের মঞ্জুরিপত্রের শর্তানুসারে এ ঋণ হিসাবের লেনদেন সন্তোষজনক হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত হবেন। ভালো ঋণগ্রহীতা চিহ্নিতকরণে মোট পাঁচটি বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যারা ভালো গ্রহক তাদের চলমান, তলবি এবং মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে তিন বছর একাধিক্রমে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ সাপেক্ষে তৃতীয় বছর শেষে ভালো ঋণগ্রহীতার ঋণ হিসাবের বিপরীতে সে বছর আদায় করা সুদ বা মুনাফার কমপক্ষে ১০ শতাংশ রিবেট সুবিধা দিতে হবে। এছাড়া ভালো ঋণগ্রহীতার প্রয়োজনীয়তার নিরিখে বর্ধিত ঋণ সুবিদাও দেওয়া যাবে। পরবর্তী বছরগুলোতেও এ গ্রহীতা নিয়মিত ঋণের কিস্তি দিতে থাকলে তাকে প্রতিবছরই এ সুবিধা দিতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ব্যাংকগুলো নিয়মিতভাবে প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে। এর বিপরীতে যারা ভালো গ্রাহক তাদের রিবেট দেওয়ার কথা থাকলেও ব্যাংকগুলো দেয়নি। ২০১৫ সালে যাদের এ সুবিধা দেওয়া হয়নি তাদের এটি দিতে হবে। পাশাপাশি ২০১৬ সালের ওপর চিহ্নিত গ্রাহকদের রিবেট দিতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ যারা ১৫ সালেরটা দেয়নি সেটাসহ সব ব্যাংক যেন ২০১৬ সালে তাদের গ্রাহকদের এ সুবিধা দেয়, এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারা এখন পর্যন্ত রিবেট সুবিধা দেয়নি তাদের তথ্যগুলো ২৮ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা চাই ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের এ সুবিধা প্রদান করুক। এতে গ্রাহকরা উৎসাহিত হবেন। ঋণ পরিশোধে তাদের মধ্যে আলাদা একটি তাগিদ থাকবে। কিন্তু ব্যাংকগুলো এ নির্দেশনা মানছে না। তারা এ সুবিধা দিচ্ছে না। তাদের অবশ্যই এটা করতে হবে। এটা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। অনীহা প্রকাশ করা মানে নির্দেশনা অমান্য করা।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছিল, ব্যাংকের ঋণ আদায় ও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে। এসব সুবিধার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নীতিমালার আলোকেও গ্রাহকদের সুবিধা দিয়ে থাকে। কিন্তু ভালো ঋণগ্রহীতাদের উৎসাহিত করার কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দেওয়ার নীতিমালা নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশে উন্নত ঋণ সংস্কৃৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন অর্থাৎ ভালো ঋণগ্রহীতাদের অতিরিক্ত কিছু সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এজন্য তাদের প্রণোদনা দেওয়ার এ নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।