ভালো নেই উপকূলের জেলেরা

ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা): মাছের ওপর নির্ভর করেই চলে উপকূলীয় জেলেদের জীবন-জীবিকা। ইলিশের মৌসুম শুরুতেই ২০ মে-২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৩ জুলাই মধ্যরাত থেকে সাগরে ফের মাছ ধরা শুরু হয়। শুরুতে দুদিন ইলিশ ধরা পড়লেও এর পর থেকে আর ধরা পড়ছে না পর্যাপ্ত ইলিশসহ অন্যান্য সমুদ্রের মাছ। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমুদ্রে যেতে পারছে না, অন্য দিকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি-দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন জেলেরা।

গভীর সমুদ্রে ও স্থানীয় নদীতে ১০ থেকে ১২ দিন ধরে সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। এর মধ্যে চড়া মূল্যে জ্বালানি কিনে সাগরে নামার পর মাছ ধরা না পড়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ট্রলার মালিকরা সাগরে ট্রলার পাঠাচ্ছেন না। এ কারণে প্রায় তিনশ ট্রলার ঘাটে নোঙর করা আছে। বিপাকে পড়েছেন জেলেরা ও বিপণন পেশায় নিয়োজিত উপকূলের পাথরঘাটার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার। মাছ ধরতে না পারায় অভাবের তাড়নায় দিশেহারা অবস্থায় জেলেরা। এনজিও থেকে লোন নিয়ে দিতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক জেলে।

এদিকে শনিবার দেশের বৃহত্তম সমুদ্রের মাছের পাইকারি বাজার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে (বিএফডিসি) ঘুরে দেখা যায় ঘাটে কয়েকটি ট্রলার ভিড়েছে, এসব ট্রলারগুলোতে অল্প পরিমাণ মাছ ধরা পড়েছে। মাছ ধরা না পড়ায় এখনও প্রাণ ফিরে পায়নি এ বন্দরটি। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন বন্দরটির শ্রমিকরা। মাছ না থাকায় বন্দরে অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। বন্দর এলাকায় দেখা যায়, অন্তত ৩শ ট্রলার ঘাটে নোঙর করে আছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও সাগরে বৈরী আবহাওয়া থাকায় ট্রলারগুলো সাগরে যাচ্ছে না।

পাথরঘাটায় জেলের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। এর মধ্য নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১১ হাজার ৪১১ জন। নিবন্ধিত জেলেদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে প্রথম ধাপে ৫৬ কেজি করে চাল দেয়া হলেও অনিবন্ধিত জেলেরা

পায়নি সরকারি কোনো সহায়তা। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, সাগরে মাছ ধরা না পড়া, জেলেদের আয়ের বিকল্প পথ না থাকা-এহেন পরিস্থিতিতে তারা বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলার হাড়িটানা এলাকার জেলে ফোরকান, রফিক ও নুরুল ইসলাম বলেন, ট্রলার ও জাল মেরামত করে বসে রয়েছেন তারা। সাগরে ইলিশ নেই, অন্যান্য মাছও ধরা পড়ছে না। এমন অবস্থায় অতিরিক্ত টাকা খরচ করে সাগরে ট্রলার নামিয়ে লাভ নেই। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, সাগরে মাছ না থাকায়  আয়ের পথ বন্ধ, এখন চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি। এনজিওর লোন আছে, দিতে না পরলে এলাকা ছেড়ে পালাতে হবে।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হোসাইন বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ ধরা না পড়ায় পাথরঘাটা মাছের পাইকারি বাজারে তেমন ইলিশসহ সমুদ্রের মাছ আসছে না। জেলেদের দাদন দেয়া, মাছ না পাওয়ায় জেলেরা সেই টাকা শোধ করতে পারছে না। বাজারে মাছ না আসায় আমাদের শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। এখন আমাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পথে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সাগরে পর্যাপ্ত ইলিশ নেই। তেলের  মূল্য বৃদ্ধি, ১০ থেকে ১২ দিনের প্রতিটি ট্রিপে একটি ট্রলারে প্রায় ৩ হাজার লিটার ডিজেল লাগে। তেলের দাম বাড়ায় খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এত দাম দিয়ে তেল কিনে সাগরে ট্রলার পাঠিয়ে আশানুরূপ মাছ ধরা পড়ছে না, এতে অনেক টাকা লোকসান হচ্ছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বরগুনার প্রায় দেড় হাজার ট্রলার ঘাটে নোঙর করা আছে বলে জানান তিনি।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ুন্ত কুমার বলেন, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ভিজিএফের উপজেলায় ১১ হাজার ৪১১ জন জেলে খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন। জেলেদের জীবনমান ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ‘সাসটেইন্যাবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের উপকরণ বিতরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সম্পদের উন্নয়ন টেকসই করার লক্ষ্যে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যস্থাপনা প্রকল্প’ মৎস্য অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের অধীনে গত অর্থ বছরে পাথরঘাটায় ২৬৫ জন জেলেকে ও মাঝিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ৪৫টি পরিবারকে গরু দিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০