Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 1:32 pm

ভালো প্রস্তুতি ছাড়া এলডিসি থেকে টেকসই উত্তরণ সম্ভব নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়া দেশের জন্য মর্যাদার ব্যাপার। কিন্তু সে উত্তোরণ হতে হবে টেকসই। কারণ এলডিসি হিসেবে আমরা যেসব সুবিধা পায়, তার অনেকগুলো বিলুপ্ত হবে। তাই এলডিসি থেকে টেকসই উত্তোরণের জন্য প্রয়োজন খুব ভালো প্রস্তুতি।

রাজধানীল সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ও টেকসই উন্নয়ন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এমন মত দেন। তারা বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

ইক্যুইটিবিডি এবং এলডিসি ওয়াচের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতির বক্তব্য রাখেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম। আরও বক্তব্য রাখেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন, ডব্লিউটিও সেলের পরিচালক ও যুগ্ম সচিব হাফিজুর রহমান, এলডিসি ওয়াচের আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারী নেপালের গৌরি প্রধান। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কোস্ট ট্রাস্টের উপ-পরিচালক সৈয়দ আমিনুল হক এবং সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ইক্যুইটিবিডির প্রধান সঞ্চালক রেজাউল করিম চৌধুরী।

কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে আমাদের জাতীয় মর্যাদা। এ মর্যাদা আমারা যোগ্যতার ভিত্তিতে অর্জন করেছি, এটি কারো দয়া-দাক্ষিণ্য নয়। বিশ্ব বাণিজ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলো যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, এ উত্তরণের ফলে তার কিছু কিছু হয়তো আমরা হারাবো, কিন্তু আমাদের এখন সামনে তাকাতে হবে, যাতে সাহায্যের বদলে আমরা নিজেরাই কিছু করতে পারি।

ড. শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের উন্নয়ন চাহিদা শতভাগ পূরণ করছে না। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের কালে বাংলাদেশকে যে সংকট মোকাবিলা করতে হতে পারে তার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থাই হওয়া উচিত আমাদের মূল মনোযোগ। তিনি আরও বলেন, ২০২৭ সালের পর বাংলাদেশ নিজেই একটি বিনিয়োগকারী দেশে পরিণত হবে। ফলে আমাদের আর বৈদেশিক সাহায্য প্রয়োজন হবে না।

হাফিজুর রহমান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবেও আমরা যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার মতো উন্নত দেশ থেকে ডব্লিউটিওর স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্ট সুবিধা পুরোপুরি পাইনি। এমনকি চীন ও ভারতের মতো বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশও আমাদের সেই সুবিধা দেয়নি। কাজেই নতুন করে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে সেসব সুবিধা আর আমরা পাবো না- এমন আশঙ্কার অবকাশ নেই।

ইক্যুইটিবিডির প্রধান সঞ্চালক রেজাউল করিম চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে স্থায়িত্বশীলতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলবায়ুভিত্তিক দুর্যোগ ও বিদ্যমান বৈষম্য। জলবায়ু সহনীয় অবকাঠামো তৈরিতে আমাদের জোর দিতে হবে।

আনোয়ার হোসেন বলেন, উত্তরণের ফলে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যেসব সুবিধা আমরা পেতাম, তার কিছু হয়ত আমরা হারাব। কিন্তু আমাদের পাবারও অনেক কিছু রয়েছে। মানসম্পন্ন শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক যোগ্যতা বাড়াতে হবে।

সৈয়দ আমিনুল হক মূল বক্তব্য উপস্থাপনায় ইক্যুইটিবিডি ও এলডিসি ওয়াচের সুপারিশ তুলে ধরেন। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- সরকারের নিজস্ব বিনিয়োগ সামর্থ্য বাড়াতে কর ফাঁকি ও অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের মূল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, উপকূলীয় মানুষ ও সম্পদ বাঁচাতে জলবায়ু মোকাবিলায় সক্ষম অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং উন্নয়ন কার্যকারিতা বাড়াতে কার্যকর সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।