ভাষা আন্দোলনের পর ৭০ বছর অতিক্রম করে ফেলেছি আমরা ইতোমধ্যে। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা বাস্তবায়নের ব্যাপারে কিছু আইনও জারি করা হয়েছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ তেমনভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ৭০ বছর সময় একটা জাতির জন্য মোটেই কম সময় নয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, যে আদর্শ, চেতনা ও প্রত্যাশা নিয়ে এত আত্মদানের বিনিময়ে আমরা মায়ের ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি, সে অনুপাতে দেশে সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রয়োগ ও প্রচলন করতে সক্ষম হইনি আমরা। ভাষা আন্দোলনের ছয় দশক পেরিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ করতে গেলে তাই প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তি বড়ই কম।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বস্তরে তথা উচ্চশিক্ষাসহ প্রশাসনে, আদালতে মাতৃভাষা বাংলার ব্যবহার অতি সীমিত। দেশে অসংখ্য ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষায়তন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে দেশে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা ব্যয়বহুল, যা গ্রহণ করা সমাজের ধনীদের সন্তানদের পক্ষে সম্ভব। মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পক্ষে সে শিক্ষাগ্রহণ সম্ভব নয়। তাই পিছিয়ে পড়েছে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা, অনেকক্ষেত্রে ইংরেজি না পারায় বেকার ও কর্মহীন থেকে যাচ্ছে তরুণ সমাজ।
আমরা ইংরেজি পড়ব, দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে। মাতৃভাষার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চাই জাতীয় অগ্রগতির চাবিকাঠি। চীন, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া, জার্মানি মাতৃভাষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় এবং বিজ্ঞানে চরম উৎকর্ষ লাভ করে আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। আমরাও পারব। এ ব্যাপারে মূল বাধা চিহ্নিত করে তা অতিক্রম করে সামনের দিকে এগোতে হবে আমাদের। বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটা সেল গঠন করা যেতে পারে। আমরা চাই, অনেক রক্তের বিনিময়ে যে ভাষা আমরা পেয়েছি, সে ভাষা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকুক।
আজিজুল হক চৌধুরী
সহকারী শিক্ষক, আহলা জয়কালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম