Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:55 pm

ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোগ সফল হোক

 

মিঠাপানির মাছে বাংলাদেশ এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এতে সবচেয়ে বড় অবদান মৎস্যখামারিদের। কয়েক দশক ধরে পুকুর, খাল, বিল ও নদীনালায় অব্যাহতভাবে মাছের পরিমাণ কমলেও পুকুরে মাছচাষিরা উৎপাদন বৃদ্ধিতে যেভাবে অবদান রেখেছেন, তাতে এ অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এদিকে পুকুরে চাষের পাশাপাশি মাছচাষিরা নিত্যনতুন কৌশল উদ্ভাবন করেও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেন। এমনই একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। নওগাঁর মহাদেবপুরে আত্রাই নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করে লাভবান হয়েছেন চাষিরা। এটি যদিও একেবারে নতুন উদ্ভাবন, কিন্তু পদ্ধতিটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এবং ক্ষুদ্র আয়ের মাছচাষিরা এর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। বিশেষত মাছ চাষের জন্য যাদের পর্যাপ্ত জায়গা নেই, তারা পদ্ধতিটির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন বেশি।

এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় না বড় পুঁজিরও। একসঙ্গে কয়েকজন মিলেও মাছ চাষ করা যায়। ড্রাম, নেট ও বাঁশ দিয়ে নদী বা খালের একটি নির্দিষ্ট অংশ ঘিরে সেখানে মাছের চাষ করা হয়। বিশেষ করে তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ বা এ-ধরনের মাছ যেগুলো প্রতিকূল অবস্থায়ও বেড়ে উঠতে সক্ষম, সেগুলোর চাষ হয় বেশি। মহাদেবপুরেও সেভাবেই চাষিরা মাছের চাষ করেছেন। এতে তারা যে খরচ করেছেন, তা বাদ দিয়েও কয়েক লাখ টাকা লাভ থাকবে বলে আশা। লাভের অঙ্ক নেহাত কম নয়!

এও মনে রাখতে হবে, পুঁজি যতই কম হোক, এ-ধরনের চাষের আয়োজনের খরচ কিন্তু একেবারে কম নয়। সমবায় পদ্ধতিতে না গিয়ে কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে চাষ করেন, তাহলে তার বড় অঙ্কের অর্থই খরচ হবে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তারাও নানা পর্যায়ে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন। ব্যক্তিপর্যায়ের বদলে সমবায় পদ্ধতিতে চাষ হলে তা একদিকে যেমন আর্থিক চাপ কমাতে সহায়ক হবে, তেমনি চাষের ঝুঁকি কমানোতেও কার্যকর হবে এটি।

ভাসমান খাঁচা ব্যবহার করে মাছ চাষের এ উদ্যোগ তাৎপর্যপূর্ণ সন্দেহ নেই। এটাও মনে রাখতে হবে, মাছ চাষের কারণে খাল বা নদীর বড় অংশ ব্যবহার করায় নৌচলাচল কিংবা নদীর অন্যান্য ব্যবহার যেন বন্ধ না হয়ে যায়। মাছ চাষের নামে নদী দখলের দৃষ্টান্ত এর আগে আমরা দেখেছি। নদীর বিভিন্নমুখী ব্যবহার অবশ্যই কাম্য, কিন্তু মাছ চাষের উসিলায় কেউ যেন নদী দখলের পাঁয়তারা না করেন। নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি কিংবা ব্যবহার যেন মাছ চাষের জন্য ব্যাহত না হয়, সেদিকটি মাথায় রেখেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে।