আলোচনা সভায় বক্তারা

ভাসানীর আগে কেউ ফারাক্কার ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলেননি

নিজস্ব প্রতিবেদক: মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ফারাক্কা লং মার্চের আগে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক নেতা বা পরিবেশবিদ ফারাক্কার ভয়াবহতা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। দূরদর্শী মওলানা মনে করতেন, ভারত এখন শুধু ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে আমাদের পানি বন্ধ করবে না, ভবিষ্যতে অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীগুলোয় বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করবে। তিনি লং মার্চের আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে ফারাক্কা ভয়াবহতা নিয়ে চিঠি  লেখেন।

গতকাল ফারাক্কা দিবস (মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ফারাক্কা অভিমুখে লং মার্চ) উপলক্ষে ভার্চুয়াল নাগরিক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর পরিচালনায় ভার্চুয়াল নাগরিক আলোচনা সভায় দেশ-বিদেশ থেকে বক্তব্য দেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের নির্বাহী চেয়ারম্যান, পরিবেশবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন আহমেদ (কানাডা), জাতিসংঘের সাবেক পানি বিশেষজ্ঞ ড. এসআই খান, জাতিসংঘের সাবেক অর্থনৈতিক পরিচালক ও অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন ও সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।

আরও ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী ইমাম (নিউ ইয়র্ক), মশিউর রহমান জাদুর মেয়ে রিটা রহমান (নিউ ইয়র্ক), নিউনেশন পত্রিকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।

এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর, রাষ্ট্রচিন্তার অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, পানি বিশেষজ্ঞ ম ইনামুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান প্রমুখও উপস্থিত ছিলেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মওলানা ভাসানী নিজ দেশের সংস্কৃতি ও স্বার্থ নিয়ে এবং মজলুম জনগণের সমস্যা সমাধানে সোচ্চার ছিলেন। অন্যদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। আজ অন্তরে মওলানাকে ধারণ করে আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন ধরে গাজায় শিশু ও মানুষ হত্যা, নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা চলছে, আমরা কিছুই করতে পারিনি। অন্তত একটা সিম্বলিক প্রতিবাদও করিনি। মুসলিম রাষ্ট্র ইহুদিদের নির্মমতায় নীরব। এ সময় যদি মুসলিম রাষ্ট্র নিজেদের ঝগড়া ভুলে এক হয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াত, তাহলে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া যেত।

আলোচকদের উদ্দেশ তিনি বলেন, কেবল ফারাক্কার পানি নয়, নানাভাবে অন্যায়-অবিচারের মূল সূত্র জনবিচ্ছিন্ন সরকার ক্ষমতায়। ঈদের আগে গণপরিবহন বন্ধ রাখা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এতে মানুষের কষ্ট হয়েছে। মানুষ সরকারের ভুলে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করছে। ঈদের সময় নারীরা ঝুলে ঝুলে বাড়ি যায়, এত বড় অন্যায় কোনোদিন হয়নি। সরকারকে বলছি, আপনারা ভুল করছেন। ভুলের পর ভুল করছেন।

সরকারের উচিত হবে ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট বাস-ট্রেন চালু করা এবং বিনা পয়সায় ঢাকায় ফেরানোর ব্যবস্থা করা। ঢাকায় ফেরা প্রত্যেক ব্যক্তির টেস্টের ব্যবস্থা করা। তাহলে মওলানা ভাসানীর মতো মহানুভবতার পরিচয় দেয়া হবে।

অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ফারাক্কা লং মার্চের আগে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক নেতা বা পরিবেশবিদ ফারাক্কার ভয়াবহতা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। দূরদর্শী মওলানা মনে করতেন, ভারত এখন শুধু ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে আমাদের পানি বন্ধ করবে না, ভবিষ্যতে অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীগুলোয় বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করবে। তিনি লং মার্চের আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে ফারাক্কা ভয়াবহতা নিয়ে চিঠি  লেখেন।

ড. এসআই খান বলেন, গঙ্গার পানি পুরোটা ভারতের নয়, কিন্তু ভারত পানির ওপর একচ্ছত্র অধিকার ভোগ করতে চায়। বন্যার সময় প্রতি সেকেন্ডে ২৭ লাখ কিউবিক ফুট পানি প্রবাহিত হতো। ২০০১ সালে রাজশাহির মানুষ পায়ে হেঁটে নদী পার হতে পারত। নদীতে প্রবাহ না থাকায় উপকূলীয় অঞ্চলের পানি লবণাক্ত হয়ে যাচ্ছে। যে পানি ভারতে আছে তার ১৫ শতাংশ পানি ভারতের জন্য যথেষ্ট। অথচ তারা বাংলাদেশকে পানিশূন্য করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ৫৪টা অভিন্ন নদীর মধ্যে ৫২ নদীতেই ভারত বাঁধ দিয়েছে।

দৈনিক নিউ নেশন সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, সময়টা হোলো সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্টের। এখন বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখা যাবে না। আমাদের চিৎকার করে দাবি করতে হবে। তাহলে সবাই জানতে পারবে। কোনো সরকারই সর্বশেষ সরকার নয়। ফারাক্কার লং মার্চ সবাই সমর্থন করেছিল। সেটার যৌক্তিকতা এখন ফুরিয়ে যায়নি।

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, লাখ লাখ মানুষ সেদিন একত্র হয়েছিল ভাসানীর ডাকে। আমি সেদিন খুবই অভিভূত হয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজনও আমাদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ২০১৪ সালে আমরা তিস্তা অভিমুখে রোডমার্চ করেছিলাম। এর আগেও হয়েছিল। কাজেই এই আন্দলন অব্যাহত আছে। টিপাইমুখ বাঁধের সময়ও আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। এই আন্দোলনগুলো বাংলাদেশে আছে। নদিতে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ার এই পরিকল্পনা ব্রিটিশ আমল থেকেই ছিল। তখনও বাঙালি প্রকৌশলীরা বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু সাতচল্লিশের পর তারাই আবার একে রাজনৈতিক কারণে সমর্থন দিয়েছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নদীকে রক্ষা করার জন্য যেমন প্রয়োজন, নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী মানুষের জন্যও প্রয়োজন।

ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর বলেন, ভাসানির মতো একজন মজলুম জননেতা আজ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দরকার। ভারত আমাদের বন্ধু হলেও তাদের আচরণ বন্ধুসুলভ নয়। ভারতের কারণে আমাদের পরিবেশ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইউম বলেন, ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ একটি কমিশন করেছিল ভাটির দেশের পানি পেতে। এ বিষয়ে একটি আইনও হয়েছিল। ভাটির দেশগুলো কীভাবে পানি ব্যবহার করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কনভেনশন আছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও সেখানে স্বাক্ষর করেনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০