আলমগীর হোসেন:‘ও দাদা ভাই! মূর্তি বানাও, নাক মুখ চোখ সবই বানাও।’ লতা মুঙ্গেশকরের এই গানটি মনে আছে নিশ্চয়ই। গানে গানে একজন ভাস্করের প্রতিমূর্তি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এতে। তেমনই একজন ভাস্কর সঞ্জয় রায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি দেখে দেখে তৈরি করছেন বিশ্বের প্রখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য।
অসচ্ছলতা তাকে ভাস্কর্য বানানোর শখ থেকে টলাতে পারেনি। এটাই সঞ্জয়ের নেশা। পেশাও বটে। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নেপালতলীর রহিমারপাড়া গ্রামের মৃত সুধীর চন্দ্র রায়ের ছেলে সঞ্জয়।
অসচ্ছলতার কারণে মাধ্যমিকের পরে পড়ালেখা করার সুযোগ পাননি। সঙ্গত কারণে দীর্ঘদিন বেকার ছিলেন। কিন্তু ছোটবেলার শখকে নেশায় পরিণত করে দূর করেন অভাব অনটন। একই সঙ্গে এলাকায় ভাস্কর্য প্রেমিক হিসেবে খ্যাতিও অর্জন করেছেন।
তার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মাটির তৈরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। এখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাস্কর্যও রয়েছে। একইসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও সুকান্ত ভট্টাচার্য্যসহ ১৫ জন মনীষীর আবক্ষ মূর্তি গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালী ও নামকরা কয়েকজন মানুষের ভাস্কর্য রয়েছে তার বাড়িতে।
ভাস্কর্য তৈরিতে সঞ্জয় ব্যবহার করেন মাটি, পাটের আঁশ, তুলি ও রং। একটি মূর্তি তৈরি করতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় নেন। খরচ হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। তার কাজ দেখতে প্রায় প্রতিদিনই ভিড় লেগে থাকে।
সঞ্জয় বলেন, ‘অর্থের অভাবে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারিনি। তবে ভারতের কুচবিহার সাহেবের হাট নি¤œ বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কারুশিল্পের শিক্ষক ছিলাম। এরপর বাংলাদেশে এসে প্রথমে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাস্কর্য তৈরি করি।’ তিনি ভাস্কর্য তৈরিকে যৌথ কাজ বলে মনে করেন। এ কারণে প্রাথমিকভাবে তৈরি করার পর কমপক্ষে ১০ জন দর্শকের মতামত নিয়ে বাকি কাজ শেষ করেন। তবে প্রায়ই সাধ্যের কাছে হেরে যান তিনি। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অর্থাভাবে অনেক মানুষের ভাস্কর্য তৈরি করতে পারছেন না।
মূলত গ্রামের শিশুদের নানা বিখ্যাত সব ব্যক্তি সম্পর্কে জানাতে ভাস্কর্য তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন সঞ্জয়। তিনি জানান, আমার স্ত্রী আলপনা রানী ও পুত্র সজীব আমাকে সহযোগিতা করে’। মাটির মূর্তি ছাড়াও কাগজ দিয়ে ফুলদানি, ঘোড়া, বাঘ, নানা ধরনের খেলনা, আম ও কাঁঠাল তৈরি করেন তিনি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কাজী আবদুল হান্নান বলেন, ‘মানুষের মুখে সঞ্জয়ের মূর্তি তৈরির কথা শুনে দেখতে গিয়েছিলাম। সে বঙ্গবন্ধুসহ বেশ কয়েকজন গুণী ও জ্ঞানী মানুষের মূর্তি বানিয়ে বাড়িতে রেখেছে। আমার খুব ভালো লেগেছে’।
নেপালতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মতিউল ইসলাম মিন্টু জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিখুঁতভাবে তৈরি করেছে সঞ্জয়। এছাড়া বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিও অনেক সুন্দর করে তৈরি করেছে।
বগুড়া