মূলত হাড়, দাঁত ও মাংসপেশির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন ‘ডি’। ক্যানসার প্রতিরোধ, হƒদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মাল্টিপল স্কেলেরোসিসসহ আরও কিছু রোগ প্রতিরোধে এর বেশ ভূমিকা রয়েছে। ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রেখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি সাহায্য করে। এ ছাড়া এই ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতার জন্য যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। বর্তমান করোনা মহামারিকালে প্রত্যেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা খুব জরুরি। তাই এই ভিটামিনের সমতা রক্ষার কথা বলা হচ্ছে বেশ জোরেশোরে, বিশ্বজুড়ে।
প্রধান উৎস সূর্যালোক: ভিটামিন ‘ডি’র প্রধান উৎস সূর্যালোক। রৌদ্রস্নান তাই খুব দরকারি। এ ছাড়া কলিজা, ডিমের কুসুম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য, ছানা, পনির, মাখন, সামুদ্রিক মাছের তেল, সামুদ্রিক মাছ টুনা, স্যামন, ম্যাকারেল, সারডিন, কিছু মাশরুম আর ভিটামিন ‘ডি’-সমৃদ্ধ গুঁড়া দুধ, কমলার শরবত, সাপ্লিমেন্টারি ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়।
ভিটামিন ‘ডি’ শুধু নিরেট ভিটামিন নয়, বরং এটিকে বলা যায় হরমোন প্রাণরস। সূর্যরশ্মির পরশ দেহে লাগলে তখন ত্বকের নিচে তৈরি হয় ভিটামিন ‘ডি’র প্রাথমিক যৌগ। সাধারণত ৫০-৯০ শতাংশ ভিটামিন ডি তৈরি হয় সূর্যালোক থেকেই। সূর্যের আলোকছটায় থাকে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে আলো। সাধারণত ২৯০-৩১৫ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে আলোকরশ্মি জোগান দেয় ভিটামিন ‘ডি’। এই তরঙ্গের আলোক ঢেউয়ের আরেক নাম আলট্রা ভায়োলেট-বি, বাংলায় যার নাম অতিবেগুনি রশ্মি-বি। যেভাবে রূপান্তর ঘটে ভিটামিনের: ত্বকের নিচে আলোর ছোঁয়ায় তৈরি হয় ভিটামিন ‘ডি’; কিন্তু কাঁচা ভিটামিন, বলা যায় এই ভিটামিনের প্রথম ধাপ। এটাকে বলা যেতে পারে প্রাক-ভিটামিন ‘ডি’। এই ত্বক কারখানায় উৎপন্ন যৌগটিকে রক্ত এসে বহন করে নিয়ে যায় বিশাল এক কারখানা লিভারে। এখানে রূপান্তর ঘটে ভিটামিনের। তখন এর নাম হয় ক্যালসিডিয়ল। রক্তে ভিটামিন ‘ডি’র মাত্রা বলতে বোঝায় ক্যালসিডিয়লের মাত্রা। এই যৌগটি নিষ্ক্রিয়, যা রক্তবাহিত হয়ে পৌঁছে যায় কিডনিতে। কিডনি এই যৌগটিকে আরও শানিত করে। তখন এর নাম হয় ক্যালসিট্রায়ল। এটি মোক্ষম, কার্যকর ও শানিত ভিটামিন ‘ডি’। [ক্রমশ]
লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ
মেডিসিন ও হরমোন বিশেষজ্ঞ
সিএমএইচ, ঢাকা