Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:53 am

ভিয়েতনামের অর্থনীতির কিছু দিক আমাদের জন্য অনুকরণযোগ্য

আবুল কাসেম হায়দার: বাংলাদেশের অর্থনীতি এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। ব্যাংকিং ও অ-আর্থিক খাত নানা সমস্যায় নিমজ্জিত। সরকার নানাভাবে চেষ্টা করেও সামাল দিতে কষ্ট হচ্ছে। মানুষের জীবনযাপন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে জনজীবনে একটি রুগ্ন ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন যেমন সরকার চাচ্ছে, তেমনি দেশের মানুষের কাম্য দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজেদের দৈন্যদশা দূর হোক।

ভিয়েতনামের প্রসঙ্গ : ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে স্বাধীন দেশের যাত্রা শুরু। দীর্ঘদিন যুদ্ধ করে দেশটি একেবারে ‘ছারখার’ হয়ে গিয়েছিল। ভিয়েতনাম ছিল বীর জনগণের দেশ। দেশটি কখনো কোন দেশের কাছে মাথানত করেনি, ভিক্ষাও করেনি। এমনকি অনুদান বা সফট ঋণের জন্য জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হতেও আবেদন করেনি।

১৯৭৪ সালে ভিয়েতনামের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬৫ ডলার। ১৯৮৫ সালে ছিল ২৮৫ ডলার। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০২ সালে ভিয়েতনামের জিডিপি ৪৩৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে ভিয়েতনামের মাথাপিছু আয় জিডিপি ৪ হাজার ৩১৬ ডলার। ২০২২ সালে দেশটি জিডিপি পৌঁছে গেছে ১২ হাজার ৮১০ পিপিপি ডলার।

২০০৫ সালে ভিয়েতনামের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। এক দশক ধরে তা ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খেয়েছে। ২০২২ সালে মানব উন্নয়ন সূচকের বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ভিয়েতনামের অবস্থান ১০৭ নম্বরে, বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯ নম্বরে। ২০২২ সালে ভিয়েতনামের স্বাক্ষরতার হার ছিল ৯৬ শতাংশ আর বাংলাদেশের মাত্র ৭৩ শতাংশ।

উন্নয়ন অর্থনীতিতে চারটি দেশকে ‘এশিয়ার টাইগার’ বলা হয়। এগুলো হচ্ছে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও হংকং। ইতোমধ্যে অর্থনীতিবিদেরা ভিয়েতনামকে ‘দ্য নেক্সট এশিয়ান টাইগার’ বলা শুরু করেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ উন্নয়নের প্রশ্নে ভিয়েতনামের উদীয়মান অর্থনীতির গতি প্রকৃতি বোঝা দরকার এবং শিক্ষণীয় বিষয়ে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া অতি জরুরি। ভিয়েতনামের এই ‘মিরাকল’ এর মূল কারণ কি? কিভাবে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রনায়করা দেশকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্বের দরবারে ‘রোল মডেল’ হিসেবে দাঁড় করালেন। ভিয়েতনাম এখনও একটি সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনামে পরিচিত।

‘দোই মোই’ কর্মসূচি: কিন্তু ১৯৮৬ সালে ‘দোই মোই’ অর্থাৎ ‘রিনোভেশন’ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার ৩৮ বছর পর তখন পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চিন্তকেরা ভিয়েতনামের অর্থনীতিকে ‘সোশ্যালিস্ট ওরিয়েন্টেড’ মার্কেট ইকোনমি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু আজ ৬৩ বছরে বাংলাদেশে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।


দোই মোই’ কর্মসূচিতে কালেকটিভ ফার্মিং’ নিষিদ্ধ হয়েছে, জমির ওপর জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় উভয় উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
‘দোই মোই’ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের প্রধান তিনটি দিক রয়েছে। যা হচ্ছে ১. অত্যন্ত শক্ত হাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উদারীকরণ ২. অত্যন্ত দ্রুত অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির বিনিয়ন্ত্রণ এবং সরাসরি হস্তক্ষেপ হ্রাসের মাধ্যমে ব্যবসা করার খরচ ও বাধা বিঘ্ন কমিয়ে আনা এবং ৩. রাষ্ট্রীয় খাতের বিনিয়োগ প্রবণভাবে জোরদার করার মাধ্যমে মানব উন্নয়ন (শিক্ষা) ও ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নকে প্রথম অগ্রাধিকার পরিণত করা।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে : বিশেষত, প্রাথমিক শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক তথা ভোকেশনাল শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভিয়েতনাম ২০০০ সালের মধ্যে পুরো জনসংখ্যাকে শতভাগ শিক্ষিত করে তুলেছে এবং জনগণের একটি বিশাল অংশকে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে সফল করে তুলেছে। একইভাবে ভিয়েতনাম তার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধির কোনো সুযোগ দেয়নি। ভিয়েতনামে ২০২১ সাল থেকে ৯১ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্য বীমার আওতায় সেবা পেয়েছে। সেই অনুযায়ী আমাদের স্বাস্থ্য বীমার কোনো খবর নেই। শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছেন। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ স্লোগানে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ফলাফল কী? ভিয়েতনাম আবার দুই সন্তান নীতি কঠোরভাবে পালন করছে। জনসংখ্যা এখন প্রায় ১০ কোটি।

আয় ও সম্পদ বৈষম্য : আয় ও সম্পদ বৈষম্যের ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম বৈষম্য বৃদ্ধির প্রবণতাকে কঠোরভাবে দমন করেছে। ২০১৬ সালে আয় বৈষম্য পরিমাপক ছিল ০.৪৮৩ এবং ২০২২ সালে হয়েছে ০.৪৯৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ধনকুবের প্রবৃদ্ধি হার ২০১৭ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করলেও ভিয়েতনাম সক্রিয়ভাবে ধনাঢ্য ব্যক্তি সৃষ্টিকে নিরুৎসাহিত করেছে। নগরভিত্তিক উন্নয়ন না করে সাড়া দেশে উন্নয়ন ছড়িয়ে দেয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যদিও আমাদের সরকার ঘোষণা করেছেন ‘গ্রাম হবে শহর’। কিন্তু ফলাফল আশানুরূপ অর্জিত হয়নি। চেষ্টা চলেছে।

বিদেশি বিনিয়োগ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভিয়েতনামের চরম শত্রু দেশ। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এবং পরবর্তী সময় চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ এক ডজন দেশের সঙ্গে ‘ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট’ করেছে ভিয়েতনাম। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এসব দেশ থেকে বিপুল শুল্ক হ্রাস ও সহজ রপ্তানি সুবিধা পেয়েছে দেশটি। ২০০৭ সালে ভিয়েতনাম বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য হয়েছে। তাও অনেক দেরিতে। বৈদেশিক বিনিয়োগকে প্রবলভাবে উৎসাহিত করেছে ভিয়েতনাম। স্যামসাং, এলজি, আলম্পাস, পাইওনিয়ার প্রভৃতি কোম্পানির দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় হাব এখন ভিয়েতনামে। অথচ বাংলাদেশে এসব কোম্পানি ইপিজেডে কারখানা স্থপনের জন্য বহু চেষ্টা করে চলে গেছে।

বর্তমানে ভিয়েতনামে প্রতিবছর বৈদেশিক বিনিয়োগের দাঁড়াচ্ছে ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে কম। ২০২২ সালে ভিয়েতনামে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়োগ ছিল ২৭ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ ব্যাংকিং এ ভিয়েতনামের অবস্থান ২০০৭ সালে ১০৪তম থেকে ২০১৭ সালে ৬৮ এসে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান দিন দিন নিচে নামছে।

ব্যাংকিং ব্যবস্থা: ভিয়েতনামে ব্যাংকিং ব্যবস্থা এখনো রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। ব্যাংক ঋণের সুবিধা অনেক সহজ ও বিস্তৃত করা হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ব্যাংকের সেবা বেশ সহজ ও বিস্তৃত। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি ক্যাম্পের পাশাপাশি প্রচুর বেসরকারী ব্যাংক রয়েছে। দেশে বর্তমান ব্যাংকের হাল খুবই খারাপ। কুঋণের ভারে ব্যাংক পাড়া এখন বিধ্বস্ত। অনেক ব্যাংকের এখন ঋণ তো দূরের কথা— পাওনাদারকে টাকা চাহিদা মোতাবেক দিতে পারছে না। অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ পাচার ব্যাকিং খাতের নিত্যদিনের ঘটনা। ন্যায়ের শাসনের অভাবে দেশের মানুষ ব্যাংকের প্রতি বিমুখ। একক ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও পরিবারতন্ত্রের কু-ব্যাংকনীতিতে দেশের আর্থিক খাত দিশেহারা। জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। রাজনৈতিক বিবেচনা পরিহার করে পেশাগত দক্ষতা দিয়ে ব্যাংক পরিচালনার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। ভিয়েতনামে ব্যাংক খাতের সুন্দর সহজ ও সাধারণ নীতি বিরাজমান।

রপ্তানি ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম: গত এক দশক ধরে চীনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা পঁজিবাদী দেশগুলো নানা রকম বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাধা-নিষেধ আরোপের কারণে ভিয়েতনাম অনেক রকমের সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে চীনের বিকল্প হিসেবে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম বাংলাদেশ হারিয়ে গণচীনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসছে। ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানিতে সিঙ্গাপুরের পর ভিয়েতনাম ওঠে এসেছে। চাল রপ্তানিতে থাইল্যান্ডকে হারিয়ে ভারতের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থান দখল করেছে।

ব্রাজিলের পর কফি রপ্তানিতে ভিয়েতনাম বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে ওঠে এসেছে। প্রায় ১০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভিয়েতনামের মোট রপ্তানি আয় বাংলাদেশের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ২০২৩ সালে ভিয়েতনামের রপ্তানি আয় ৩৭১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক যুদ্ধের কারণে চীনে উৎপাদিত অনেক শিল্প-কারখানা এখন ভিয়েতনামে স্থাপিত হয়েছে। তাতে ভিয়েতনামের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ববাজার তাই তাদের অনেক কাছে।

রাজনীতি ও অর্থনীতি: ভিয়েতনাম একটি সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার দেশ। বহুদলীয় গণতন্ত্র নেই দেশটিতে। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়ন সবার জন্য শিক্ষনীয়, অনুকরণীয়। অন্যদিকে আমাদের দেশে বহু দলীয় গণতন্ত্রের চর্চা আছে। কিন্তু বাস্তবে না থাকার কারণে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নেই। তখন আমাদের দেশের গণতন্ত্রের চর্চা বাক্যে, কথায়, বাস্তবে অনেক দূরে। কিন্তু ভিয়েতনামে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা খুবই চমৎকার। প্রতিনিধিত্বমূলক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ভিয়েতনামকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

উৎপাদনের সবক্ষেত্রে সমবায় ব্যবস্থার মাধ্যমে শ্রমজীবী জনগণের ক্ষমতায়ন ও গ্রাম সমবায়ের ক্ষেত্রে ও ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে শিক্ষা দিতে পারে।
দুর্নীতি, অর্থ পাচার : ভিয়েতনামে যে দুর্নীতি একেবারে নেই, তা বলা যাবে না। তবে আমাদের দেশের মতো দুর্নীতি সীমাহীন নয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধের কঠোর আইনের শাসন ভিয়েতনামে রয়েছে। অর্থ পাচারে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ স্থানে। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। আর ভিয়েতনামে অর্থ পাচারের ঘটনা নেই বললে চলে।

আমাদের করণীয় : ১. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আমাদের প্রতি বছরের বাজেট অনেক অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। প্রবৃদ্ধির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষাকে কর্মসূচি, শিক্ষাশীল করা দরকার। টেকনিক্যাল শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ঢালাওভাবে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া দ্রুত বদ্ধ করা প্রয়োজন। শিক্ষাকে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক নীতিমালায় গড়ে তোলা দরকার। চতুর্থশিল্প বিপ্লবের জন্য শিক্ষাকে না সাজাতে পারলে আমরা ব্যর্থ হব; ২. দেশের সব স্তরে গণতন্ত্রকে গুরুত্ব, মর্যাদা দিতে হবে। জাতীয় নির্বাচনগুলো নিরপেক্ষ, সব দলের অংশগ্রহণ ও আন্তর্জাতিকমানের করতে হবে। সবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন অনুরূপ চরিত্রে বাস্তবায়ন জরুরি; ৩. আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। সবার জন্য আইন সমান— এই নীতি কার্যকরী করতে হবে।

বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। পাচারকারীদের নাম প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে; ৪. অবকাঠামো উন্নত করে, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিশ্চয়তা দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আনার ব্যবস্থা করতে হবে। বড় বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশ শিল্প স্থানে এগিয়ে আনার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আইনকে সহজ করতে হবে। ব্যবসাকে জটিল না করে সহজ ও ব্যয় হ্রাসে করার ব্যবস্থা করতে হবে; ৫. সরকারি কর্মচারীদের স্থাবর অস্থাবর সম্পদের হিসাব প্রতিবছর প্রদানে বাধ্যতামূলক করতে হবে। অনিয়ম হলে দ্রুত তদন্ত করে সুবিচার কায়েম করতে হবে; ৬. ব্যাংক খাত থেকে সরকারকে ঋণ নেয়া বন্ধ করতে হবে। বর্তমান বাজেটে ও ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে।

নতুন নতুন শিল্প স্থাপন হচ্ছে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ার ফলে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে যুবসমাজ বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অনেকে সাগরে ডুবে জীবন হারাচ্ছে; ৭. কালো টাকাকে সাদা করার জন্য ১৫ শতাংশ কর দিয়ে যে সুযোগ রাখা হয়েছে, তা অনৈতিক, অন্যায়, অবিচার তাতে সৎ কর দাতারা হতাশ। এক দেশে দু’আইন থাকা উচিত নয়। কর ফাঁকির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে তাদের সুন্দর মানুষ হিসেবে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি বড়ই বেমানান; ৮. দুর্নীতি প্রতিরোধে শূন্য সহনশীল হতো হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সব উন্নয়ন বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
দুর্নীতির কারণে সরকারের গৃহীত প্রকল্পগুলোর খরচ বাড়ছে, সময় বেশি লাগছে, মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।
কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতি সারা আমলাতন্ত্র বদনামের ভাগীদার হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে জাতি মুক্তি চায়। এই অবস্থা আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামে নেই। তাই তাদের উন্নতি দৃশ্যমান, উদাহরণযোগ্য।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, আইএফআইএল, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম।