নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্য এবং বেশকিছু ব্যবসায়ীর ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ তালিকায় রয়েছেন বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন আমলা ও নির্বাচন কমিশনার। গত শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার। তবে কতজন এবং কাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তা জানাননি তিনি। কিন্তু ভারতের গণমাধ্যম নর্থইস্ট ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে বাংলাদেশের ৪১৭ জনেরও বেশি রয়েছেন এ ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকায়। কিন্তু তারাও এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেনি।
এদিকে ভিসা নিষেধাজ্ঞার এ তালিকা নিয়ে সংবাদটি প্রকাশের পর থেকেই গুঞ্জন-উদ্বেগ শুরু হয়েছে নানা মহলে। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সেইসঙ্গে নানা টং দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন আড্ডায় আলোচনায় উঠে এসেছে বিষয়টি। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ জনগণ পর্যন্ত ধারণা করছে, নিষেধাজ্ঞার একটি বড় অংশ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য এবং সরকারের আমলা-মন্ত্রীসহ যারা দেশের নানা পর্যায়ে কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা রেখেছেন এবং বর্তমানেও সেভাবেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে।
এছাড়া জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞায় রয়েছেন বেশ কিছু বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও মালিকরা, যারা শুধু নিজেদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন, সেই সঙ্গে এ সুযোগ পেতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন এবং নানা অঙ্কের টাকার লেনদেন করেছেন। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রাজনৈতিক বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিরোধীদের তালিকা নিয়ে বলা হচ্ছে, বিরোধীরা সব সময় সরকারের কাজের ভুল ও খারাপ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করে, সেটা সংশোধনের ভূমিকা রাখে। কিন্তু বর্তমানে যারা সংসদে বিরোধী দলে রয়েছেন, তাদের কাছ থেকে গত কয়েক বছরে এ ধরনের কোনো কথা শোনা যায়নি। বরং তারা সরকারের অধিকাংশ ভুল, অনিয়ম ও দুর্নীতি থাকলেও প্রশংসা করেছেন। এমনকি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখায় সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কোনো ধরনের চাপ দেয়নি। সরকারের ভুলগুলো সংশোধনে ভূমিকা না রাখলেও করেনি কোনো সমালোচনা।
অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে রয়েছে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ। বিরোধী দলকে দমনে তাদের ভূমিকা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। নিজেরা আইনের লোক হয়েও অনেক সময় আইন ভঙ্গ করেছে। তাই তাদের সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তাও নিষেধাজ্ঞায় রয়েছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে।
গুঞ্জন-উদ্বেগ প্রকাশের ও আলোচনা-সমালোচনার একটি বড় জায়গা বা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে মত প্রকাশ ও আলোচনা- সমালোচনা শুরু হয়। পক্ষে-বিপক্ষে এ নিয়ে চলে নানা তর্ক-বিতর্ক। পক্ষে থাকা ব্যক্তিরা যেমন তুলে ধরেন নানা যুক্তি, তেমনি বিপক্ষে থাকা ব্যক্তিরাও করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা। সেই সঙ্গে ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে কী কী সমস্যা হতে পারে, সেগুলো আবার তুলে ধরেন কেউ কেউ।