লালমনিরহাটের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসছে ভুট্টাপাতার হাট। বর্তমানে মাঠে কাজ না থাকায় দিনমজুররা ভুট্টা গাছের পাতা বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন। এতে একদিকে তাদের আয় হচ্ছে, অন্যদিকে খামারিরা গবাদিপশুর খাদ্য পাচ্ছেন তুলনামূলক কম দামে।
তিস্তা, সানিয়াজান ও ধরলা নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল ভুট্টা। এ বছর ভুট্টার আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে গেছে। ফলন ভালো হওয়ায় ইতোমধ্যে চর এলাকাগুলোর ক্ষেত থেকে ভুট্টা তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষক। ভুট্টা তোলার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে গাছের পাতা ও মাথা কেটে দিতে হয়। এতে ভুট্টায় সূর্যের আলো পড়ে। ফলে ভুট্টার রং ভালো হয়। প্রতি বিঘা ভুট্টাক্ষেতে পাতা ও মাথা কাটতে কমপক্ষে দুজন শ্রমিক লাগে। কিন্তু এখন আর ভুট্টাচাষিদের ক্ষেতের পাতা ও মাথা কাটতে শ্রমিক লাগে না। নিজ তাগিদে কোনোরকম পারিশ্রমিক ছাড়াই দিনমজুররা গাছের পাতা ও মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে নি¤œ আয়ের লোকজন তাদের জীবন-জীবিকা চলার পথ পেয়েছে।
কয়েকজন পাতা বিক্রেতা বলেন, বর্তমানে এলাকায় কোনো কাজ নেই। তাই পরিবারের সবাই মিলে প্রতিদিন সকালে চরে গিয়ে ভুট্টাপাতা এনে কালীগঞ্জ উপজেলার ভুল্লাহাট, ভোটমারী, হাতীবান্ধা উপজেলার ঘুন্টি, পারুলিয়া, হাতীবান্ধা হাটসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এ দিয়ে কোনো রকম সংসার চলছে। তবে পাতার জন্য ক্ষেতমালিকদের কোনো টাকা দিতে হয় না। কয়েক দিন পর ভুট্টা তোলা শুরু হলে তখন ভুট্টা তোলার কাজ করবেন তারা।
হাতীবান্ধা উপজেলার চর সির্ন্দুনা ও দক্ষিণ পারুলিয়া এলাকার কৃষকরা জানান, ভুট্টা তোলার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে গাছের পাতা ও মাথা কেটে দিলে সূর্যের আলোয় ভুট্টার রং উজ্জ্বল হয়। তাই প্রতি বিঘা ভুট্টাক্ষেতে কমপক্ষে দুজন করে শ্রমিক নিতে হয়। এতে বিঘাপ্রতি শ্রমিকের জন্য ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ হতো। কিন্তু এখন তা আর হচ্ছে না। আমাদের উৎপাদন খরচ অনেকটাই কমে গেছে।
হাতীবান্ধা নদী ও চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান জানান, এ সময়টা কাজ না থাকায় চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের লোকজন বেকার হয়ে পড়েন। ভুট্টা গাছের পাতা ও মাথা বিক্রি করে কিছু মানুষ কয়েক দিনের জন্য হলেও তাদের কর্মসংস্থান করতে পারেন।
জাহেদুল ইসলাম সমাপ্ত