শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে এক সময় ধান, গম, আলু, পাট ও সবজি চাষে বিখ্যাত হলেও এর পাশাপাশি কৃষক এখন ভুট্টা চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। গত বছর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকরা এবারও ভুট্টা আবাদে আশার আলো দেখছেন।
বাজারে প্রচুর চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভুট্টা চাষ। চাষিরা এখন ভুট্টা ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টার ভালো ফলন আশা করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। বেশি উঁচু-নিঁচু নয় এমন জমিতে আগে শোভা পেত পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, ক্রাউন, তিসি, মরিচ, কচুসহ ও অন্যান্য আবাদ। এখন এসব আবাদ বাদ দিয়ে কৃষক ভুট্টা চাষে উৎসাহী হচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, ঠাকুরগাঁও জেলায় এবার মোট রবি মৌসুমে ভুট্টা আবাদ হয়েছে ২৮ হাজার ৯৩৫ হেক্টর। খরিপ মৌসুমে এ আবাদ চলমান রয়েছে। চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ের ৫টি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪৭ হেক্টর জমিতে। পীরগঞ্জ উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। রানীশংকৈল উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ জমিতে। এ ছাড়া হরিপুর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে।
প্রতি হেক্টর জমিতে খরচ হয়েছ ৭৫ হাজার টাকা। প্রতি হেক্টর জমিতে ৮.৬ মেট্রিক টন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অল্প খরচ ও অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনকারী ফসল হওয়ায় কৃষক গম কাটার পর খরিপ মৌসুমের ভুট্টা লাগাতে বেশ ঝুঁকে পড়েন। উচ্চফলনশীল ভুট্টার মধ্যে রয়েছেÑএনএইচ ৭৭২০, এনকে ৯৪০, সুপার সাইন ২৭৪০, এম গোল্ড ইত্যাদি জাতের ভুট্টা।
সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল হোসেন বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ৩ বিঘা জমিতে এনএইচ ৭৭২০ জাতের ভুট্টা আবাদ করছি। বর্তমানে ভুট্টার খেতে সেচ ও নিড়ানি দিচ্ছি। বেশ ভালো হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে গতবারের ন্যায় বাজারে দাম ভালো থাকলে লাভবান হবো আশা করছি। আখানগর ইউনিয়নের কৃষক আহম্মদ আলী জানান, ধান চাষে তেমন লাভ হয় না। আমি দুই বিঘা গমের পাশাপাশি ভুট্টা লাগাইছি।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বরাবরই ধান চাষ ভালো হয়। আমাদের এলাকার জমিতে বিঘায় ৩৫-৪০ মণ ধান ফলন হয়। বোরো মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য ধানের দাম মৌসুমে ঠিকমতো না পাওয়ায় ও ভুট্টায় লাভ বেশি পাওয়ায় এলাকার কৃষক ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।’ ভেলাজান গ্রামের কৃষক মো. মনসুর আলী বলেন, ‘৩ একর জমিতে এবার আবহাওয়া অনুকূল মৌসুমি। সুপার সাইন ২৭৪০ জাতের ভুট্টা আবাদ করছি। প্রতি বিঘায় ৯ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখন ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত।’
ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেনের মতে, ভুট্টার আবাদে খরচ কম হওয়ায় এবং ফলন ও চাহিদা ভালো থাকায় এ ফসলটির প্রতি কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকদের ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল চাষে প্রশিক্ষণ ও সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।