আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী: নোয়াখালীতে মিজানুর রহমান নামে এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে পরিষদের সদস্যদের সই নকল করে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এ চেয়ারম্যান।

নোয়াখালী সদর উপজেলার কালাদরাপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানে বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পাহাড় জমেছে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে। সম্প্রতি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমিনুল হক নামে এক ব্যক্তি এ অভিযোগ দেন। এর একটি কপি এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
অভিযোগেপত্রে বলা হয়, চেয়ারম্যান পরিষদের প্রায় সদস্যর সই নকল করে ও ভুয়া রেজুলেশন দেখিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বরাদ্ধকৃত সরকারি অর্থ আত্মসাত করেছেন। এসব করে গড়েছেন বিশাল বিত্ত-বৈভব। এক সময়ের জাপা নেতা মিজানুর রহমান চেয়ারম্যান হওয়ার আগে কি ছিলেন; আর চেয়ারে বসে কি হয়েছেন তার ফিরিস্তি টানলেই দার দুর্নীতি আর অনিয়মের খতিয়ান পরিষ্কার হয়ে যাবে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, কোন ইউপি সদস্যকে তিনি পাত্তা দেন না। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার আইনের বিধি অনুযায়ী পরিষদের সত্যতা ও স্বচ্ছতার স্বার্থে ১৩টি উন্নয়ন কমিটি গঠনের কথা থাকলেও বাস্তবে কোন সদস্য কোন কমিটিতে রয়েছেন তা সবার অজানা। চেয়ারম্যান সাধারণ সদস্যদের বাদ দিয়ে নিজের মনে যখন যাই আসে সে ভাবেই এক তরফা পরিষদ চালান।
আরো বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান বলেন, সরকার তো সদস্যদের কোন অধিকারই রাখেননি। বরাদ্ধকৃত সব কিছুই একমাত্র পরিষদের চেয়ারম্যানই কর্তিত্বধারী বলে দাবি করছেন তিনি। এদিকে ১% ভূমি উন্নয়ন করের পুরো বছরের অর্থই কমপক্ষে ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা হয়। যার সবই যায় চেয়ারম্যানের পকেটে। স্থাবর সম্পত্তির বেনামি উন্নয়নের নামে বরাদ্ধকৃত ১% পুরোটাই আত্মসাত করছেন।

টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের টাকাও সদস্যদের দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে চেয়ারম্যান নিজেই ভোগ করেছেন। আরো বলা হয়েছে, এলজিএসপি প্রকল্পের ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে সব বরাদ্ধ নিজেই গিলে খাচ্ছেন। এডিবি এবং জেলা পরিষদ হতে বরাদ্ধকৃত প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় এক প্রকল্পের স্থলে অন্য প্রকল্প দেখাচ্ছেন চেয়ারম্যান।
অভিযোগ রয়েছে, মিজানুর রহমান চেয়ারম্যান হওয়ার পর যেন আলাদ্দিনের চেরাগ পেয়ে গেছেন। পরিষদের সামনে দোতলা মার্কেট ছাড়াও পরিষদের জায়গায় ৪টি পাকা টিনের ঘর, বাড়িতে ৫ তলা ফাউন্ডেশনের বিলাসবহুল ভবন, উত্তর শুল্লকিয়ায় ১৫ একর জমির ওপর গরু আর মাছের প্রকল্প, উরির চরে ৪০-৫০ একর জমিতে গরু, মহিষ, ছাগল ও মাছের খামার গড়ছেন।

বর্তমানে ওই প্রকল্পে ৫০-৬০ টি মহিষ রয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়। এ ছাড়া ঢাকার মোহাম্মদপুরে চন্দ্রিমা হাউজিংয়ের বেড়ি বাঁধের পাশে রয়েছে ৭ কাঠা জমি।
১০ টাকার চাল সাধারণ মানুষের মধ্যে মাত্র সংখ্যক হারে দিয়ে বাকিটাই নিজেই ভোগ করেন। দু:স্থ ও বিধবা ভাতার নামেও ভূয়া তালিকায় চেয়ারম্যান লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিষদের অনেক সদস্য।

করোনায় সাধারণ মানুষের জন্যে বরাদ্ধকৃত সরকারি ত্রাণও যথাযথভাবে বণ্টন না করে চেয়ারম্যান নয়-ছয় করছেন বলে জানান কয়েকজন সুবিধাবঞ্চিত এলাকাবাসী। তারা জানান, চেয়ারম্যান সব কিছুতে এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর সুনাম ও সুখ্যাতি বিক্রয় করে চলেন। তারা বলেন, তিনি নাকি এমপি সাহেবের কাছের লোক। সঙ্গত কারণে আমরা ভয়ে কেহ কিছু বলার সাহস রাখি না।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মুঠোফোনে শেয়ার বিজকে বলেন, এলাকায় এসে তদন্ত করেন। কারো কোন অভিযোগ থাকলে আমার সামনে বলুক। এলজিএসপি প্রকল্পের টাকা এখনো উঠায়নি। আর প্রকল্পের সব কাজ তো হয়নি, চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, নিজের টাকায় টিআর, কাবিখা, কাবিটার কাজ করে দিয়েছি। কিন্তু এখনো এক টাকাও উঠায়নি। টাকা না উঠালে আত্মসাত কিভাবে করি।
তাছাড়া আমিনুল হক নামে ইউনিয়নে কোন ব্যক্তি থাকলেও এই আমিনুল হককে আমি চিনি না। তাকে আমার সামনে এনে জিজ্ঞাসা করলে জানা যেতো সমস্যা কোথায়। তিনি দাবি করেন, সদস্যদের সই থাকলে তো রেজুলেশন ভূয়া হয় না। তিনি আরো বলেন, যদি কেহ প্রমাণ করতে পারে যে আমি দুর্নীতি করছি, তবে পদ থেকে সরে যাবো।