নজরুল ইসলাম: সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেননি। অথচ তার নামে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট পাওয়া গেছে, যার মূল্য ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৩ টাকা। আবার স্থাবর সম্পদ গোপন করতে সেই ফ্ল্যাটটি হেবা দলিলে মায়ের নামে হস্তান্তরও করেছেন। অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দিলেও সেখানে সম্পদ গোপন করেছেন। ব্যবসার কথা বললেও বাস্তবে ট্রেড লাইসেন্স ও অন্য রেকর্ডপত্রও পাওয়া যায়নি। তার গ্রহণযোগ্য কোনো আয়ও পাওয়া যায়নি। এভাবে দুর্নীতির টাকা বৈধ দেখানোর চেষ্টা করেছেন শারমিন আক্তার। তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার স্বামী মো. খায়রুজ্জামান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উত্তরা জোনের সহকারী অথরাইজড অফিসার।
দুদকের অভিযোগপত্রের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫-১৬ করবর্ষ পর্যন্ত দাখিল করা আয়কর রিটার্নে শারমিন আক্তার উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্ল্যাট নিজের হিসেবে দেখান। ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল তার এবং ২০১৬ সালের ১২ জুলাই তার স্বামীর বিরুদ্ধে দুদক থেকে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করা হয়। ওই বছরের ২৪ আগস্ট উত্তরার ওই ফ্ল্যাটটি তার মায়ের নামে হেবা দলিলে হস্তান্তর করেন তিনি। এতে প্রতীয়মান হয়, শারমিন আক্তার নিজ নামের স্থাবর সম্পদ গোপন করার উদ্দেশ্যে স্বজ্ঞানে-স্বেচ্ছায় এটি করেছেন। ফ্ল্যাটটির মূল্য ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৩ টাকা। অথচ সম্পদ বিবরণীতে তিনি কোনো স্থাবর সম্পদের তথ্য দেননি।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ব্যবসার বর্তমান পুঁজি ২১ লাখ ৭৫ হাজার ২৫৯ টাকা, বিভিন্ন কোম্পানির প্রাইমারি শেয়ার ৩১ হাজার ৫০০, মেয়ের নামে মেটলাইফ শিক্ষা বিমায় এক লাখ টাকা এবং গাড়ি কিনতে ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকাসহ মোট ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৫১৯ টাকার তথ্য দেখিয়েছেন।
তদন্তে শারমিন আক্তারের নামে ব্যবসার বর্তমান পুঁজি ২১ লাখ ৭৫ হাজার ২৫৯ টাকা, বিভিন্ন কোম্পানির প্রাইমারি শেয়ার ৩১ হাজার ৫০০, মেয়ের নামে মেটলাইফ (অ্যালিকো) শিক্ষা বিমা এক লাখ ৩৫ হাজার ৭৭২ টাকা এবং গাড়ি কিনতে ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৯৪ টাকাসহ মোট ৪৩ লাখ ৯৮ হাজার ১৮৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ তিনি আট লাখ ৮১ হাজার ৬৬৬ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ গোপন করেছেন।
শারমিন আক্তার নিজেকে একজন বিবিধ ব্যবসায়ী পরিচয়ে একটি আয়কর নথি খোলেন। ২০০৬-০৭ করবর্ষ থেকে ২০১৭-১৮ করবর্ষ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ব্যবসার আয় হিসেবে মোট ৪৭ লাখ পাঁচ হাজার ৭১৪ টাকা দেখিয়েছেন। তদন্তে ট্রেড লাইসেন্স, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক লেনদেনসংক্রান্ত রেজিস্টার, হিসাব ও শ্রমিকদের মজুরি দেয়ার রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। তার নামে মাছ ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক লেনদেনসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, মাছের খাবার কেনা-সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র ও মাছের পোনা কেনা-বেচার রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। আসামিও রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে পারেননি। সেজন্য আয়কর নথিতে ঘোষিত ৪৭ লাখ পাঁচ
হাজার ৭১৪ টাকার ব্যবসায়িক আয় বৈধ আয় হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
তদন্তকালে শারমিন আক্তারের নামে ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৩ টাকা মূল্যের স্থাবর এবং আট লাখ ৮১ হাজার ৬৬৬ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২৭ লাখ ৭৯ হাজার ১৮৯ টাকার অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ গোপনের সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৩ টাকা মূল্যের স্থাবর এবং ৪৩ লাখ ৯৮ হাজার ১৮৫ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৬২ লাখ ৯৫ হাজার ৭০৮ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিকানা অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ২০১৭-১৮ করবর্ষ সময় পর্যন্ত ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫২৫ টাকা ব্যয় করেছেন। সেই হিসেবে তার সম্পদের পরিমাণ ৮১ লাখ ৮৪ হাজার ২৩৩ টাকা। অগ্রণী ব্যাংকে এক লাখ আট হাজার ৫০০ টাকার ডিপিএস, রূপালী ব্যাংকে আরডিপিএস ৭৩ হাজার ৪৪০ টাকা, ইসলামী ব্যাংকে রেমিট্যান্স হিসেবে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩০৩ টাকাসহ মোট চার লাখ ১৬ হাজার ২৪৩ টাকার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায়। অর্থাৎ শারমিন আক্তার ৭৭ লাখ ৬৭ হাজার ৯৯০ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে তা দখলে রেখেছেন।
২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। অনুসন্ধান শেষে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করেছেন উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার স্বামী মো. খায়রুজ্জামানের মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।