ভুয়া রপ্তানি দেখিয়ে লেমন্ড অ্যাপারেলসের রাজস্ব ফাঁকি

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম পূর্ব মাদারবাড়ী মাঝিরঘাট রোড এলাকার তৈরি পোশাকের শিল্পপ্রতিষ্ঠান মেসার্স লেমন্ড অ্যাপারেলস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বন্ড সুবিধার আওতায় চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটে নিবন্ধিত। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধা কাজে লাগিয়ে রপ্তানি চুক্তি জালিয়াতি করে ভুয়া রপ্তানি বিল তৈরি করে আমদানিকৃত কাঁচামাল অবৈধ অপসারণ করেছে, যা সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে ধরা পড়েছে। এতে রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে তিন কোটি ১৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া ও বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সি বিধিমাল লঙ্ঘন করায় প্রতিষ্ঠানটিকে চার কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট।

সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ও আর নিজাম রোড শাখা থেকে ছয় লাখ ৭০ হাজার ৯৭৭ মার্কিন ডলার মূল্যের ৯টি এবং অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড নিউমার্কেট শাখা থেকে এক লাখ ২৩ হাজার ৪৮৬ মার্কিন ডলার মূল্যমানের দুটি রপ্তানি চুক্তি সরবরাহ করে, যা পরে লিয়েন করা হয়। কিন্তু ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ই-মেইলে যোগাযোগ করলে মেসার্স লেমন্ড অ্যাপারেলস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেডের সঙ্গে কোনো প্রকার চুক্তি এবং তাদের মধ্যে কোনো প্রকার সমঝোতা নেই বলে ই-মেইলে নিশ্চিত করে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে এডি ব্যাংক শাখার কাছে ভুয়া রপ্তানি চুক্তি সরবরাহ করেছে।

অন্যদিকে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ওই রপ্তানি চুক্তির আওতায় বিল অব ল্যান্ডিংয়ের যেসব কনটেইনার নম্বরগুলো ব্যবহার করেছে, সেগুলো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কনটেইনার ট্র্যাকিং সিস্টেম হতে যাচাই করে কোনো কনটেইনারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে আদৌ কোনো ধরনের রপ্তানি না করেই জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে রপ্তানিকারক ভুয়া কনটেইনার নম্বর সংবলিত ভুয়া বিল অব ল্যাডিং উপস্থাপন করে ভুয়া রপ্তানি দেখিয়েছে। ফলে সার্বিক পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বন্ডে ওয়্যারহাউস ব্যবস্থায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল ব্যবহার করে যেহেতু রপ্তানি সম্পন্ন হয়নি, এমনকি রপ্তানিকারকের ফ্যাক্টরি/গুদাম বন্ধ রয়েছে সেহেতু উক্ত কাঁচামালসমূহ বিধিবহির্ভূতভাবে দেশীয় খোলাবাজারে বিক্রি করা হয়েছে।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির লিয়েন ব্যাংকসমূহ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে যে দুটি রপ্তানি চুক্তি করা হয়েছিল তার মধ্যে ১৯.১২.২০১৮ তারিখের চুক্তির বিপরীতে কোনো ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা হয়নি। অপর চুক্তি ১০.১২.২০১৮ তারিখে আওতায় বিবিএলসি নং ০০৩৯১৯০৬০০০১ মাধ্যমে ২৭ হাজার ৫০০ কেজি ফ্রেবিক্স আমদানি করে কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের পত্র অনুযায়ী কাঁচামাল আমদানি করে পরে রাপ্তানি সম্পন্ন না করেই খোলাবাজারে বিক্রি করে অবৈধ অপসারণ করেছে; যার সঙ্গে জড়িত রাজস্ব ৬৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৬৮ টাকা।

এছাড়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে যে ৯টি রপ্তানি চুক্তি করা হয়েছিল তার মধ্যে ১৯.০৩.২০১৯ তারিখের চুক্তির আওতায় বিবিএলসি নং ০০০০৩১৪২১৯০৫০০৫ বিপরীতে ৯ হাজার ১২৭ কেজি ফ্রেবিক্স আমদানি করা হয়। কিন্তু পরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস চালানটি রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট ঘোষণার সঙ্গে অমিল থাকার উক্ত বি/ই বাতিল করে পণ্যচালানটি বন্ডেড সুবিধার (আইএম-৭) পরিবর্তে স্বাভাবিক শুল্কহারের (আইএম-৪) আওতায় পণ্যচালানটি পুনঃশুল্কায়নসহ এক লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা ও চার লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং প্রযোজ্য শুল্ককরাদি আদায় করে পণ্য খালাস প্রদান করে। এছাড়া অন্য আরেকটি রপ্তানি চুক্তি যার বিবিএলসি নং ০০০০৩১৪২১৯০৫০০০৬ এর মাধ্যমে ২৬ হাজার ১০০ কেজি ফ্রেবিক্স আমদানি করে, যা চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা কারখানা সরেজমিন পরিদর্শন করলে দেখতে পায়, আমদানিকারক ফ্রেবিক্সগুলো অবৈধ অপসারণ করেছে। ফলে বন্ড কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অবৈধ অপসারণের দায়ে মামলা দায়ের ও দাবিনামা জারি করেন। তবে পরবর্তীতে দাবিকৃত টাকা পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠাটির বিরুদ্ধে ২০২ ধারা জারি করে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করে চট্টগ্রামস বন্ড কমিশনারেট।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড এবং অগ্রণী ব্যাংক হতে প্রাপ্ত রপ্তানি চুক্তি পর্যালোচনা দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি মাস্টার এলসি/সেলস কন্ট্রাক্টের বিপরীতে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল দ্বারা যথাসময়ে পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি না করে ভুয়া রপ্তানি দলিলাদি তৈরি করে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল অবৈধ অপসারণ করেছে। এতে বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে, যা শান্তিযোগ্য অপরাধ। এতে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি হয়ে তিন কোটি ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৯৬ টাকা।

এ বিষেয় চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, মেসার্স লেমন্ড অ্যাপারেলস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে চার কোটি টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে অবৈধভাবে অপসারিত পণ্যে জড়িত রাজস্ব ও আরোপিত অর্থদণ্ডসহ সাত কোটি ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৯৬ টাকা আদেশ জারির ১৫ দিনের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০