ভুলে ভরা গুচ্ছের ফল শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ

আশিকুল ইসলাম : প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে দেশের ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ‘বি’ ইউনিটের (মানবিক বিভাগ) ফল ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বিকাল ৫টায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়। তবে ফলাফল প্রকাশের পরই শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছে, তাদের ভরাটকৃত উত্তরপ্রশ্নের সঙ্গে ফলাফলের মিল নেই। আবার প্রশ্ন ভরাটের চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন বলেও অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, ফলাফল নিয়ে কারও সন্দেহ থাকলে তা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ থাকছে।

যদিও বিতর্কের মুখে গতকাল রাতে ফল ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সংশোধিত ফলাফল পরে প্রকাশ করা হবে।

রাজধানীর দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা থেকে এইচএসসি পাস করা আবু নোমান সালমান ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রকাশিত ফলাফলে ১০০ নম্বরের মধ্যে ২২ দশমিক পাঁচ নম্বর পান এ শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বাংলা অংশে ৪০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের মধ্যে ৩৫টি ভরাট করেছি, কিন্তু রেজাল্টে দেখাচ্ছে বাংলায় ২০টা ভরাট। আবার ইংরেজিতে ৩৫টার মধ্যে ১৭-১৮টা, কিন্তু ফলাফলে দেখাচ্ছে ইংরেজিতে ৩০টা ভরাট করেছি। আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়েই উত্তর করেছিলাম। আমার হিসাব অনুযায়ী আমি ৪৩-৪৪ মার্র্কস পাওয়ার কথা। কিন্তু অতিরিক্ত ভরাট দেখিয়ে সেটা আবার মাইনাস দেখাচ্ছে, পেয়েছি ২২ দশমিক পাঁচ। এই শিক্ষার্থী বলেন, আমি সেকেন্ড টাইম পরীক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে অনেক যুদ্ধ করে প্রায় দুটা বছর ধরে প্রস্তুতি নিলাম। অনেক স্বপ্ন ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তু গুচ্ছ পরীক্ষার এমন ফলাফলে আমার সব শেষ হয়ে গেল।

নরসিংদী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আবির। তিনি ইংরেজিতে কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েও ২২ পেয়েছেন। আবার বাংলায় ৩১টি প্রশ্নের উত্তর দিলেও ফলাফলে চারটি উত্তর দিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জের এক শিক্ষার্থী সজিব হাসান ফল প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ইংরেজি থেকে ৩৫টা প্রশ্নের সবই পূরণ করেছি, কমন ছিল ২৭টা। এখন রেজাল্ট অনুযায়ী আমি নাকি ৩১টা অ্যানসার করছি, যেখানে ১১টাই আবার ভুল! প্রকাশিত ফলাফলে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৫৭ দশমিক পাঁচ নম্বর পান এ শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থী বলেন, ইংরেজিতে এত কম নম্বর পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিশ্বাস করেন, এদেশ থেকে এর চেয়ে বেশি আশা করিনি, আর করবও না। ভর্তি আয়োজক কমিটির যাদের অবহেলার কারণে আমাদের স্বপ্ন ধ্বংস হচ্ছে, তাদের বিচার যেন আল্লাহ করেন।

শুধু আবির, সালমান আর সজীবই নন, ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া অনেক শিক্ষার্থীই প্রকাশিত ফলাফল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী

 মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থী ওএমআর পূরণ করতে ভুল করে। অর্ধেক ভরাট, অস্পষ্ট হলে কম্পিউটারে সেটা রিড করে না। এখানে ওএমআর সম্পূর্ণ কম্পিউটারের মাধ্যমে রিড হয়, তাই ফলাফল ভুল হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এর পরও যারা চ্যালেঞ্জ করতে চায়, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের পরীক্ষার পর আমরা একটা নোটিস দেব। নির্ধারিত ফি দিয়ে শিক্ষার্থীরা আবার ফলাফল চেক করতে পারবে।’

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, “আজ আমাদের ‘বি’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। জানা গেছে, এতে সর্বোচ্চ মার্কস ৯৩ দশমিক ৭৫।” শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থী যে অভিযোগ করেছে, এগুলো ভিত্তিহীন। কম্পিউটারে রেজাল্ট কাউন্ট হয়েছে, ভুল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কোনো শিক্ষার্থী যদি অভিযোগের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাহলে পরীক্ষা শেষে আমরা তাদের পুনর্নিরীক্ষণের ব্যবস্থা করব।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০