ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প

ভুল পরিকল্পনায় দুই দফায় নির্মাণব্যয় বাড়ছে ৫২%

ইসমাইল আলী: দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৭টি সেতু, সাতটি কালভার্ট ও দুটি এক্সেল লোড কেন্দ্র নির্মাণে ২০১৬ সালে নেয়া হয় ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও এখনও অর্ধেকই শেষ হয়নি প্রকল্পটির। এরই মধ্যে ২০১৮ সালে এক দফা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। আবারও ব্যয় বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে প্রকল্পটির। দুই দফা মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৫২ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটির প্রাথমিক পরিকল্পনায় কিছু ত্রুটি ছিল। সেগুলো সংশোধনের জন্য প্রথম দফা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এ সময় সেতু ও কালভার্টগুলোর দৈর্ঘ্য, সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য এবং জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো হয়। তবে ওই সময় জমি অধিগ্রহণে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল, তা সঠিকভাবে প্রাক্কলন করা যায়নি। এজন্য দ্বিতীয় দফা ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সম্প্রতি প্রকল্পটির বিশেষ সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) সভায় ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। এর আওতায় নড়াইলে কালনা সেতুসহ ছোট ও মাঝারি ১৭টি সেতু ও সাতটি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। সে সময় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৪৮৬ কোটি ১২ লাখ টাকা।

২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। সে সময় এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৬৮৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আর দ্বিতীয় দফা প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে তিন হাজার ৭৪৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই দফায় ব্যয় বাড়ছে প্রায় এক হাজার ২৭৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বা ৫১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

প্রথম দফা ব্যয় বৃদ্ধির কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটিতে জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৩০ দশমিক ৩০ একর। এজন্য জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭২ কোটি ছয় লাখ টাকা। পরে জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪ দশমিক ৭৬ একর। আর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বেড়ে গেছে ৩০২ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

জমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি প্রকল্পটির আওতায় নির্মাণাধীন সেতু ও কালভার্টগুলোর দৈর্ঘ্য এবং সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সেতু ও কালভার্টের দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল দুই দশমিক ১৫ কিলোমিটার। আর সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল ১৪ কিলোমিটার। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৩৮০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। পরে সেতু ও কালভার্টের দৈর্ঘ্য বেড়ে দাঁড়ায় দুই দশমিক ১৬৮ কিলোমিটার। আর সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। এতে নির্মাণব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৫১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে ৭৭১ কোটি ৯ লাখ টাকা।

এর বাইরে প্রকল্পের মূল অফিস, সিকিউরিটি সার্ভিস ও এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণ খাতে ব্যয় বেড়েছে। তবে টোলগেট নির্মাণ খাতে ব্যয় কমেছে। এদিকে দ্বিতীয় দফা সংশোধনে শুধু জমি অধিগ্রহণ ব্যয় বাড়ছে ৬০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। তবে অন্যান্য ব্যয় অপরিবর্তিতই থাকছে। তবে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক শ্যামল কুমার ভট্টাচার্য শেয়ার বিজকে বলেন, প্রকল্পটির পরিকল্পনায় বিভিন্ন সংশোধনের জন্য প্রথম দফা ব্যয় বেড়েছিল। তবে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণে তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। এতে জমি অধিগ্রহণ না বাড়লেও পুনর্বাসন খাতে ব্যয় বাড়ছে। মূলত এ কারণে দ্বিতীয় দফা প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, দুই দফা ব্যয় বাড়লেও প্রকল্পটির বাস্তবায়নে গতি নেই। মোট চারটি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে গত জুন পর্যন্ত প্রথম প্যাকেজের বাস্তবায়ন হয়েছে ৫০ দশমিক ৫০ শতাংশ, দ্বিতীয় প্যাকেজের ৪২ শতাংশ, তৃতীয় প্যাকেজের ৫০ ও চতুর্থ প্যাকেজের ৪০ শতাংশ। সব মিলিয়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ৫০ শতাংশেরও নিচে রয়েছে। `

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০