নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভার আশুলিয়া পলাশবাড়ীর আলফা কম্পোজিট টাওয়েল লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্য শূন্য হারে রফতানি দেখিয়ে চালান ইস্যু করেছে। কিন্তু সেই রফতানির সপক্ষে কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। আসলে ভ্যাট ফাঁকি দিতে প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া রফতানি দেখিয়েছে।
সম্প্রতি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (পশ্চিম) কমিশনারেট প্রতিষ্ঠানটির প্রায় পৌনে চার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। গতকাল প্রতিষ্ঠানটি চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হয়েছে। ভ্যাট পশ্চিমের ভ্যাট কমিশনার ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট আলফা কম্পোজিট টাওয়েল লিমিটেডের বিরুদ্ধে ভুয়া রফতানি দেখিয়ে তিন কোটি ৭৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। গতকাল চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করে প্রতিষ্ঠানকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত টেরি টাওয়েল উৎপাদন করে।
তিনি আরও বলেন, আলফা কর্তৃপক্ষ ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার ১৬৭ মেট্টিক টন পণ্য (টেরি টাওয়েল) রফতানি দেখিয়ে শূন্য হারে ভ্যাট চালান ইস্যু করেছে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আকস্মিক পরিদর্শন করে ভ্যাটের একটি দল কারখানা থেকে কাগজপত্র জব্দ করে। জব্দ করা কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা যায়, এসব পণ্য প্রকৃত অর্থে রফতানি হয়নি। এসব পণ্য তারই অন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করেছেন। এ পণ্যের ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট পরিহারের উদ্দেশ্যে শূন্য হারে মূসক চালান ইস্যু করেছে মর্মে তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।
প্রতিষ্ঠানকে রফতানির সপক্ষে প্রমাণ দেখাতে বললে দেখাতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানকে শুনানির সুযোগ দিলেও রফতানির প্রমাণাদি দেখাতে পারেননি। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে এ ভ্যাটের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের পাশাপাশি দুই শতাংশ হারে সুদও দিতে হবে। সময়মত ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট সরকারি খাতে জমা দিতে ব্যর্থ হলে ভ্যাট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
দাবিনামায় বলা হয়, গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি কেজি পণ্যের মূল্য ৩৫ টাকা। এ হিসেবে সাত হাজার ১৬৭ টনের মোট বিক্রয়মূল্য ২৫ কোটি ১৮ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছর ৩৭১, ২০১১-১২ অর্থবছর এক হাজার ৩৬৩, ২০১২-১৩ অর্থবছর ৯০৯, ২০১৩-১৪ অর্থবছর ১৮৯, ২০১৪-১৫ অর্থবছর তিন হাজার ৫৬০ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৭৭১ টন। এর বিপরীতে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট তিন কোটি ৭৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। দুই শতাংশ হারে সুদ সাত লাখ ৫২ হাজার টাকা। ভ্যাট পশ্চিমের বিভাগীয় দফতরের তদন্ত টিমের প্রতিবেদনে বলা হয়, আলফা কম্পোজিট হেনা টেক্সটাইল লিমিটেডের সঙ্গে ভাড়া চুক্তি করে। প্রতিষ্ঠানের দাবি অনুযায়ী, আলফা কম্পোজিটের সঙ্গে ভাড়া ভিত্তিতে উৎপাদনের জন্য চুক্তি হয় ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর। কাঁচামাল সরবরাহ চালানপত্রের মাধ্যমে উৎপাদনের জন্য সরবরাহ করা হয়। উৎপাদন শেষে আলফা কম্পোজিট এর চালানের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য হেনা টেক্সটাইলের ফ্যাক্টরিতে নিয়ে এসে হেনা টেক্সটাইলের নামে রফতানি করা হয়।
কিন্তু মূসক-১১ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একই বইয়ে আলফা কম্পোজিট বিসমিল্লাহ টাওয়েলস লিমিটেড হেনা টেক্সটাইলস লিমিটেডকে, এস ট্রেড ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক সরবরাহকারী নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে বিদেশি ক্রেতার নাম ব্যবহার করে মূসক-১১ ইস্যু করা হয়েছে। একটি মূসক-১১ বইয়ে একাধিক সরবরাহকারীর নাম, ঠিকানা ও মূসক নিবন্ধন ব্যবহার করার কারণে বোঝা যায় যে প্রতিষ্ঠান আলফা কম্পোজিট ভ্যাট ফাঁকি দিতে এ কৌশল নিয়েছে। এছাড়া ভ্যাট উত্তর কমিশনারেট থেকে পাওয়া প্রতিবেদনেও একই বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
আলফা কম্পোজিট টাওয়েল লিমিটেড
ভুয়া রফতানি দেখিয়ে পৌনে চার কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি
