ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ তথা ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে দেশের সেবা খাতগুলোকে আরও জনবান্ধব করা অত্যাবশ্যক। একই সঙ্গে সেবাদান পদ্ধতি সহজকরণের বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে বলা যায় ভূমিসেবার কথা। দেশের সব নাগরিক সরাসরি ভূমিসেবার অংশীজন। সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সঙ্গে এখন ভূমি অফিসগুলোতেও নানা উদ্ভাবন ও উত্তম চর্চার মাধ্যমে নাগরিক সেবাকে উন্নত ও সহজকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে সম্প্রতি কয়েকটি উদ্ভাবন ও উত্তম
চর্চার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, যা ভূমিসেবাকে আরও জনবান্ধব ও হয়রানিমুক্ত করতে ভূমিকা রাখছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম জনহিতকর ভূমিসেবাদানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রসঙ্গত তিনি দায়িত্ব পালন করছেন ২০১৭ সালের ১০
অক্টোবর থেকে। তার নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে
সিটিজেনস চার্টার
এসি ল্যান্ডের অফিসে প্রবেশ করেই ডান দিকে দেখতে পাবেন ‘সিটিজেনস চার্টার’/‘সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি’, যেখানে ভূমি অফিস থেকে প্রদেয় সব সেবার তালিকা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের বিবরণ ও প্রাপ্তিস্থান, প্রয়োজনীয় সরকারি খরচ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নামসহ ফোন নম্বর রয়েছে।
ফরম গ্যালারি
‘ফরম গ্যালারি’তে সেবা-সংক্রান্ত যাবতীয় আবেদন ফরম রাখা আছে। পাশে ‘সততা বাক্সে’ রাখা আছে কোর্ট ফি। আবেদনকারী নিজে আবেদন ফরমটি পূরণ করে প্রয়োজনীয় কোর্ট ফি লাগিয়ে ‘সেবা ডেস্ক’-এ জমা দিতে পারবেন।
সেবা ডেস্ক
চমৎকারভাবে সাজানো ওয়ানস্টপ সার্ভিসের আদলে তৈরি করা হয়েছে সেবা ডেস্ক। নাগরিকদের সব ধরনের আবেদন জমা ও ডেলিভারির জন্য বানানো হয়েছে এই ডেস্কটি।
সবুজ অফিস
সবুজায়নের মাধ্যমে অফিসের সার্বিক পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। অফিস প্রাঙ্গণে নানা প্রজাতির শোভাবর্ধক ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে।
সিসি ক্যামেরা
অফিসের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সব কক্ষে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
ভূমিবার্তা
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অন্য সরকারি-বেসরকারি পেশাজীবী নাগরিকদের উপস্থিতিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০টি ভূমিবিষয়ক জ্ঞানার্জন ক্লাস ‘ভূমিবার্তা’ পরিচালিত হয়েছে। ‘ভূমিবার্তা’ ক্লাসের মাধ্যমে ভূমি বিষয়ে মৌলিক বিষয় যেমন মৌজা, দাগ নং, খতিয়ান/পর্চা, ভূমি উন্নয়ন কর, খাসজমি, উত্তরাধিকার আইন-সংক্রান্ত বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়। এ উদ্যোগটি ইতোমধ্যে অনেক প্রশংসা ও নাগরিক সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
ই-নামজারি
ভূমিসেবাকে ডিজিটাইজড করার জন্য সরকারিভাবে পরিচালিত অনলাইনে নামজারির আবেদন ও নিষ্পত্তি তথা শতভাগ ই-নামজারি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
মাটির পরশ
শুনানিতে আগত সব সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকের বসার জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘মাটির পরশ’ নামে একটি অপেক্ষাগার। সেবা প্রত্যাশীদের বসার কক্ষ এটি। নাগরিকদের অপেক্ষার সময়টি ক্লান্তিহীন করার লক্ষ্যে ‘মাটির পরশ’-এ রাখা আছে সুপেয় পানি, সুন্দর ওয়াশরুম, পত্রিকা পড়ার টেবিল ও টেলিভিশন।
ভূমি লাইব্রেরি
মাটির পরশে ভূমি লাইব্রেরি নামে একটি বুকশেলফ রাখা আছে। এখানে ভূমি আইন ও সেবা-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর অর্ধশতাধিক বই রাখা আছে। সেবাপ্রত্যাশী যে কোনো নাগরিক চাইলে বুকশেলফ থেকে বই নিয়ে দীর্ঘ সময় বসে ভূমিবিষয়ক জ্ঞানার্জন করতে পারবেন।
গণশুনানি
প্রতি বুধবার ‘মাটির পরশ’-এ সেবা প্রত্যাশী যে কোনো নাগরিক কোনো আবেদন ছাড়াই সরাসরি ‘গণশুনানি’তে এসি ল্যান্ডের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।