ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ দ্রুত ছাড় করানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক: অধিগ্রহণ করা জমির টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যাতে দ্রুত পান, সে জন্য অর্থছাড় প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুততর করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে জটিলতা কমাতে হবে। সেইসঙ্গে  কোথাও জমি অধিগ্রহণের চিন্তা করা হলে আগেই সেখানকার ছবি তুলে রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোপনে ছবি তুলে রাখার কারণ হলো, যাতে পরে অধিগ্রহণের খবর শুনে মানুষ তড়িঘড়ি করে বাড়িঘর নির্মাণ কিংবা কোনো গাছপালা লাগাতে না পারে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কোনো অবকাঠামো বা রাস্তাঘাট নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বৈদ্যুতিক খুঁটি বা অন্যান্য ইউটিলিটি সার্ভিস সরানোর জন্য আলাদা কোনো প্রকল্পের প্রয়োজন নেই। কেননা দেখা যাবে, এ প্রকল্প দেখভাল করতেই আবার প্রকল্প নিতে হচ্ছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে গতকাল এমন নির্দেশ দেন তিনি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

এনইসি বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি)।  মূল এডিপি থেকে অর্থ কমিয়ে আরএডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ সাত হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। শুরুতে এডিপির আকার ছিল  দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ হিসেবে সার্বিক বরাদ্দ কমছে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আরএডিপিতে খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। প্রকল্পভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন-আল-রশীদ, মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমসহ অন্য সদস্যরা।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এনইসি বৈঠকে আমরা আর্থিক ছয়টি খাতের শক্তিশালী অবস্থান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। এগুলো হলো, জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় সাত শতাংশের মতো অর্জিত হয়েছে। এছাড়া রয়েছে কৃষি খাতের চমৎকার অর্জন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও কভিড-১৯ মোকাবিলায় সাফল্য। এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি একটু বাড়লেও তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। কেননা আমেরিকা ও ভারতসহ বিশ্বের আরও অনেক অর্থনীতির দেশের তুলনায় আমাদের মূল্যস্ফীতি এখনও কম।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার যুদ্ধের পক্ষে নই। বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে। রাশিয়া ও ইউক্রেন দুটি দেশই আমাদের বন্ধু। রাশিয়া মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অনেক সহায়তা করেছে। তা না হলে ৩০ লাখের পরিবর্তে  হয়তো ৬০ লাখ মানুষকে জীবন দিতে হতো। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কোনো প্রভাব পড়বে না। এটা হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে। এছাড়া করোনা মহামারির মতো যুদ্ধেও রাশিয়া প্লেন ভাড়া করে লোকবল ও যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

বৈদেশিক অর্থের ব্যবহার কেন কমেÑএমন প্রশ্নের জবাবে আইএমইডি সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের নানা শর্ত থাকে। এর চেয়ে বড় কথা হচ্ছে পরামর্শক ও যন্ত্রপাতি আনতে হয় বিদেশ থেকে। করোনার কারণে সেসব বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। এজন্য এত টাকা কমাতে হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সংশোধিত এডিপিতে  সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ আছে এক লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে বৈদেশিক সহায়তা অংশে  ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে মোট বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। মূল এডিপিতে বৈদেশিক অংশে বরাদ্দ ছিল ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা।

অনুমোদন পাওয়া  সংশোধিত এডিপিতে  প্রকল্প রয়েছে এক হাজার ৭৫৪টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প এক হাজার ৫০৭টি, কারিগরি প্রকল্প ১৪০টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রকল্প রয়েছে ১০৭টি। মূল এডিপিতে প্রকল্প ছিল প্রায় দেড় হাজার। সংশোধিত এডিপিতে মোট প্রকল্পের মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ১৯৯টি। এছাড়া চলমান অর্থবছরের মূল এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত নেই এমন বাদ পড়া ২১টি প্রকল্প বরাদ্দসহ আরএডিপিতে রাখা হয়েছে। এদিকে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ৪৫৪টি। বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত প্রকল্প আছে ১৩২টি। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দহীন নতুন প্রকল্প রয়েছে ১২টি। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) প্রকল্প আছে ৭৮টি। এছাড়া চলতি অর্থবছরের মধ্যেই সমাপ্ত করার জন্য নির্ধারিত প্রকল্প রয়েছে ৩৭৮টি।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, সংশোধিত এডিপিতে  সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাতের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ  খাতে সর্বোচ্চ  ৫৫ হাজার ৮২৭ কোটি ৩৬ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি  খাতে ৩৯ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ২৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা খাতে ২০ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়নে ১৫ হাজার ৫০২ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা, পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ খাতে ৯ হাজার ৮৪ কোটি টাকা, কৃষি খাতে সাত হাজার ২৯৭ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় চার হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা এবং জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতে তিন হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।

এছাড়া সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি প্রকল্পের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ  প্রকল্পে বরাদ্দ হচ্ছে ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে ছয় হাজার ১৬২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে ছয় হাজার ১১৩ কোটি টাকা। এছাড়া পর্যায়ক্রমে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে ছয় হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। মেট্রোরেল প্রকল্পে চার হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে তিন হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুই হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। সাসেক রোড সংযোগ প্রকল্প: এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ  প্রকল্পে দুই হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে দুই হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। এছাড়া সাপোর্ট টু ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়ক প্রকল্পে দুই হাজার ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০