Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 11:34 pm

ভেজালবিরোধী অভিযান ও আন্দোলন জোরদার হোক

 

যদি বলা হয়, শুধু খাবার নয় সবকিছুতেই ভেজাল পাওয়া যাবে, তাহলে সম্ভবত কেউ প্রতিবাদ করবে না। চারদিকে ভেজাল দেখে দেখে আমরা এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, ভেজালবিহীন খাবার বা পণ্য বিক্রির জন্য আজকাল বাড়তি সাইনবোর্ড ঝোলাতে হয়। এমনকি ওই রকম সাইনবোর্ড দেখেও সেই দোকানের পণ্যের প্রতি ক্রেতাকে আরও বেশি সন্দেহ পোষণ করতে দেখা যায়। আমাদের প্রকৃত অবস্থা এরকমই। সামনে আমের মৌসুম আসছে। ঢাকার প্রায় প্রতিটি এলাকায় ফরমালিনমুক্ত বা ভেজালমুক্ত আমের সাইনবোর্ডসহ দোকান দেখা যায়। আবার ভ্রাম্যমাণ আদালত গিয়ে ঠিকই সেখানে ফরমালিন খুঁজে পায়। বড় শহরগুলোতে একটু স্বস্তিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাকাটার জন্য অনেক সুপার শপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানেও ভেজাল ধরা পড়ছে হামেশা। জরিমানাও গুনতে হচ্ছে। যে মিষ্টির দোকান দীর্ঘদিন ধরে বিখ্যাত গুণ ও মানের জন্য, সেখানেও ভেজালের খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেক সময় সন্দেহ হয় আমরা কি পণ্যের মানের স্ট্যান্ডার্ড অনেক উঁচুতে নিয়ে তারপর পণ্য যাচাই করছি? নাকি দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল খেয়ে খেয়ে ওটাকেই স্ট্যান্ডার্ড ধরে নিয়েছি? দেশে সাক্ষরতার হার বাড়ছে। বলা হয়, শিক্ষিত মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। সে হিসেবে যারা পণ্য তৈরি ও বিক্রির কাজ করেন, তাদের মধ্যেও নিশ্চয়ই শিক্ষিতের হার বাড়ছে। তাহলে কি ধরে নেওয়া যাবে একদিকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়াচ্ছি, কিন্তু সুশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা দিন দিন কেবল কমছে?

গতকালের শেয়ার বিজে ভেজালবিরোধী অভিযান বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন বা বিএসটিআই ২৮ মার্চ নরসিংদীতে অভিযান চালিয়ে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৯৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান খাদ্যপণ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত, একটি কসমেটিকসের। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং অবৈধভাবে পণ্য উৎপাদন করা, সিএম লাইসেন্স ছাড়া বিএসটিআইর মানচিহ্ন বা লোগো ব্যবহার এবং আমদানিকৃত নামি ব্র্যান্ডের পণ্যের সঙ্গে ভেজাল পণ্য রাখার অভিযোগে তিনটি দোকানকে জরিমানা করা হয়। ভেজালবিরোধী অভিযান থেকে এও দেখা যাচ্ছে, আগে সতর্ক করা হলেও দোকানদার বা ব্যবসায়ীরা তা আমলে নিচ্ছেন না। যে টাকা তারা জরিমানা দিচ্ছেন, তা যেন কোনো টাকাই নয় তাদের কাছে। ভেজাল দিয়ে কী পরিমাণ লাভ করতে পারলে এমন বেপরোয়া হওয়া সম্ভব, তা অনুমেয়। একটি-দুটি নয়, এ ধরনের খবর এখন হামেশাই প্রকাশিত হচ্ছে পত্রপত্রিকায়।

নৈতিক অবক্ষয়ের চিহ্ন চারপাশে। এরই একটি দৃশ্যমান অবস্থা খাবারে ভেজাল। মানুষ যদি নিজ থেকে সচেতন না হয়, অপরের কথা চিন্তা না করে, নিজের বিবেক জাগ্রত না করে তাহলে শুধু আইন করে ভেজালের সংস্কৃতি থামানো যাবে না। ভেজালবিরোধী অভিযান চলার পাশাপাশি সামাজিক প্রতিবাদ হিসেবে ভেজালবিরোধী আন্দোলন জোরদার হোক।