ভেজাল সেমাইয়ে সয়লাব কুড়িগ্রামের বাজার

আমানুর রহমান খোকন, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে অপরিচ্ছন্ন নি¤œমানের লাচ্চা সেমাইয়ে বাজার সয়লাব হয়েছে। ঈদ ও রমজানে জেলার আনাচে-কানাচে তৈরি করা হচ্ছে এসব নি¤œমানের ভেজাল খাদ্য। এই ভেজাল খাদ্যপণ্যের গুণগত মান নিয়ে ভোক্তাদের মাঝে নানা প্রশ্ন তৈরি হলেও প্রশাসনের ভূমিকা আশানুরূপ নয়।

সরেজমিন জানা গেছে, মাহে রমজানের ১৫ দিন আগ থেকেই কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলার বিভিন্ন আনাচে-কানাচে যত্রতত্রভাবে গড়ে তোলা হয়েছে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে নি¤œমানের লাচ্চা সেমাই তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় নির্বিঘেœ তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল খাদ্য। যেকোনো পরিত্যক্ত ঘর অথবা অপরিষ্কার ঝোপঝাড়ের ভেতরে যেনতেনভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে লাচ্চা সেমাইগুলো। খোলা আকাশের নিচে ও অপরিষ্কার বাঁশের মাঁচায় সেমাই শুকাতে গিয়ে মাছি ও ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গের মলমূত্রও যুক্ত হচ্ছে। সেমাই কারখানাগুলোর আশপাশে অবাদে কুকুর ও বিড়ালের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। লাচ্চা তৈরির জায়গা অপরিচ্ছন্ন থাকায় ময়দার বস্তায় নানা প্রকার কীটস্তূপ বেঁধেছে।

কুড়িগ্রাম শহরের দাদা মোড় রেলঘুন্টিতে অবস্থিত রজনীগন্ধা বেকারিতে গিয়ে দেখা যায়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভেজাল লাচ্চা তৈরি করার দৃশ্য। নোংরা অপরিষ্কার জায়গায় যেনতেন পলিথিনের ব্যাগে পুরে স্তূপ করে রাখা হয়েছে লাচ্চাগুলো। খোলা জায়গায় তেল ঝরানোর জন্য রাখা লাচ্চার ওপর ক্ষতিকারক পাখি বসেছে। ভেজাল তেল, ক্ষতিকারক রনজক পদার্থ ও পচা ময়দা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে লাচ্চাগুলো। এ সময় কারখানার মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার বাড়ি রাজারহাট উপজেলায় আমি তিন-চার বছর আগে এখানে ভাড়া ঘরে বিস্কুট ও রুটি তৈরির কারখানা তৈরি করেছি। রমজানে বাজারে লাচ্চার চাহিদা থাকায় বেকারির পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় লাচ্চা তৈরি করছি।’ লাচ্চা তৈরির অনুমতি ও গুণগত মান ঠিক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাচ্চা তৈরির কোনো অনুমতির দরকার হয় না। লাভের আশায় লাচ্চা তৈরি করছি। মান খারাপ হবে কেন?’

একই ভাবে কুড়িগ্রাম শহরের পুলিশ ফাঁড়ির মোড়ে সাগর নামের এক যুবক পরিত্যাক্ত ঘর ভাড়া নিয়ে বেনামে ভেজাল লাচ্চা তৈরি করছে। হরিকেশ মোড়ে আপন বেকারি, নাগেশ্বরী গরুহাটির কাছে সায়েম আলী, স্বাদ বেকারির কবির উদ্দিন, নাগেশ্বরীর কাপড়পট্টিতে উদয় শংকরের ছেলে এবং ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুরের কয়েকটি জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল লাচ্চা সেমাই। নি¤œমানের প্রস্তুতকৃত লাচ্চা সেমাইগুলো নকল প্যাকেট জাত করে নামে বেনামে প্যাকেটজাত করে বাজারে দেয়া হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম পুরোনো রেলস্টেশন বাজারের দোকানদার মজিদুল ইসলাম বলেন, দোকানে সব কোয়ালিটির লাচ্চা সেমাই রাখতে হয়। স্থানীয় তৈরিকৃত লাচ্চা সেমাই বিক্রিতে লাভ বেশি পাওয়া যায়। উন্নত মানের লাচ্চার দাম বেশি হওয়ায় স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত লাচ্চার প্রতি মানুষের চাহিদা বেশি থাকে। কুড়িগ্রামে জিয়া বাজারের লাচ্চা ক্রেতা আযম আলী ও কহিনুর বেগম বলেন, আমরা নি¤œ আয়ের মানুষ তাই খোলা লাচ্চা সেমাই কিনছি। ভেজাল লাচ্চা কিনা, তা কেমন করে বুঝব। কম দাম, তাই এগুলো কিনছি।

সাবেক সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, ভেজাল ও নি¤œমানের লাচ্চা সেমাই মানুষ খেলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এতে ডায়রিয়া, লিভার, গ্যাস্টিক, কিডনিসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হবে মানুষ।

নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা গৌতম সাহা বলেন, রমজানের শুরুতেই আমরা নি¤œমানের ও ভেজাল খাদ্য এরাতে প্রস্তুতকারীদের সঙ্গে সভা করেছি। তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। নিয়মিত আমরা বাজার মনিটরিং করছি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০