ভেটেরিনারি শিক্ষার জন্য গণবিশ্ববিদ্যালয়

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে খাদ্যে স্বনির্ভরতার জন্য প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের বিকল্প নেই। প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি সমস্যার সমাধান করে সমাজকে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তি উপহার দিয়েছে। নদীবিধৌত উর্বর ভূমির এ দেশে কিছুদিন আগেও গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ আর গোলাভরা ধানের গল্প মুখে মুখে প্রচলিত থাকলেও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে পিছিয়ে আছি আমরা এখনও। তাই তরুণদের মাঝে ‘গ্রামে চল, গ্রাম গড়’ সেøাগানের স্বপ্নবীজ ছড়িয়ে দিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদে অধ্যয়নের সুযোগ করে দিয়েছে গণবিশ্ববিদ্যালয়। ভেটেরিনারি শিক্ষার প্রসারে বেসরকারি পর্যায়ে নবউšে§াচিত এই দিগন্তের বিস্তারিত জানুন।
সময় বদলেছে। রাশভারী বিষয়গুলোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা এখন প্রফেশনাল নানা বিষয়ে পড়ালেখার দিকে ঝুঁকছেন। বর্তমানে ভেটেরিনারি বিষয়ে পড়ালেখা তাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একজন ভেটেরিনারিয়ান পশু-পাখির চিকিৎসা ও গবেষণার মাধ্যমে উন্নত জাত উদ্ভাবনসহ মাংস, দুধ ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের মানুষের খাদ্যতালিকায় আমিষের পরিমাণ নিশ্চিত করে থাকেন। পাশাপাশি পশুপাখির চিকিৎসার মাধ্যমে রক্ষা করেন প্রকৃতির ভারসাম্য।
ভেটেরিনারি সায়েন্সেস ও মেডিসিন বিষয়ের কোর্সগুলো সাধারণত পাঁচ বছরের হয়ে থাকে। এর মূল উপজীব্য হলো পশু-পাখির চিকিৎসা। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ের বাইরেও ওষুধবিদ্যা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনেক কিছুই পড়ানো হয়ে থাকে বিশেষায়িত এই কোর্সে।
২০১৬ সালের এপ্রিলে শুরু। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদন দিয়েছে ২৫ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের এ ফ্যাকাল্টিতে। এখন পর্যন্ত এ বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেয়েছেন তিনবার। প্রতিবারই ২৫ শিক্ষার্থী নেওয়া হয়েছে। তথ্যগুলো পেয়েছি ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ফ্যাকাল্টির ডিন ড. মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে।
নয়জন শিক্ষক ছাড়াও অন্য বিভাগের চারজন শিক্ষক ক্লাস নেন নিয়মিত। শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে বিচক্ষণ ও মেধাবী করার লক্ষ্যে তিন একর জমিতে প্রসিদ্ধ খামার বানানো হয়েছে। এই খামারে পালন করা হয় ১১০০টি বড় লেয়ার, ৪০০টি পিউর বার্ড, ৫০০ ব্রয়লার ও গাভি। মুরগির ডিমগুলো বাজারজাত করা হয়। গাভির দুধ দৈনিক প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয়। গাভির জন্য রয়েছে ফটার কালটিভেশন। এখানে উন্নত জাতের ঘাস (নেপিয়ার, পাড়া) উৎপাদন করা হয়। খামারের পাশে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা রয়েছে।
খামার পরিদর্শনকালে দেখা গেল, গাভির জন্য চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন কৃষক আফজাল মিয়া। তিনি জানান, আমার ভাই সবুজ মিয়ার কাছ থেকে শুনেছি এখানে গরুর চিকিৎসা করানো যায়। এখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করায় আমাদের ভালো হয়েছে।
অনুষদের ডিন মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমরা আরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে উন্নত মানের কবুতর ও হাঁসের খামার করা হবে। গবেষণার জন্য ফ্রোজেন এমব্র্রায়ো ট্রান্সফারের সুযোগ-সুবিধা উন্নত করা হলে বিভিন্ন প্রাণীর খামার করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ভেটেরিনারি সায়েন্স কিংবা পশুচিকিৎসার ভালো চাহিদা রয়েছে। দেশের বাইরে চাকরির সুবিধা ছাড়াও রয়েছে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ। এসব বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পরই চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী
মো. সুমন আলম জানান, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কৃষিকে প্রাধান্য দিতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নয়নের জন্য প্রাণিসম্পদের উন্নয়নও অপরিহার্য। প্রাণিসম্পদের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান।
উপাচার্য (চলতি দায়িত্ব) ডা. লায়লা পারভিন বানু জানান, অন্য কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি ফ্যাকাল্টি নেই। আমাদের ক্যাম্পাসে এই ফ্যাকাল্টি রয়েছে। আমি খুবই আনন্দিত আশেপাশের কৃষক ও খামারিরা এ ফ্যাকাল্টির চিকিৎসাকেন্দ্র হতে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।
রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, এ ফ্যাকাল্টির প্রতি আমার বিশেষ মনোযোগ রয়েছে। পশুপালন আমার ভীষণ পছন্দের। দেশ ও দশের স্বার্থে কাজ করবে আমাদের শিক্ষার্থীরা। স্বপ্ন দেখি, প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে গণবিশ্ববিদ্যালয়।

বিধান মুখার্জী ও মুন্নি আক্তার

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০