শেয়ার বিজ ডেস্ক : রাশিয়ার প্রধান জ্বালানি প্রতিষ্ঠান রসনেফটকে গ্যাস উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে ভেনিজুয়েলা। সম্প্রতি রসনেফটের প্রধান নির্বাহী ইগর সেচিনের সঙ্গে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। খবর বিবিসি, রয়টার্স।
চুক্তি অনুযায়ী ৩০ বছরের পাটাও ও মেজিলোনস নামে দুটি গ্যাসক্ষেত্রের উত্তোলন কাজ করবে রসনেফট। আগামী ৩০ বছরের জন্য চুক্তিটি করা হয়েছে।
রসনেফটের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, এ দুটি গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস রিজার্ভ আছে। বছরে সর্বোচ্চ ছয় দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। চুক্তি অনুযায়ী গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলন ও রফতানির সম্পূর্ণ অধিকার পাবে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসও (এলএনজি) থাকবে।
লাতিন আমেরিকায় প্রভাব বিস্তার করতে রাশিয়া তার বন্ধুরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলাকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করে আসছে। অন্যদিকে ভেনিজুয়েলার সমাজতান্ত্রিক সরকারও নগদ অর্থ ও ঋণ সহায়তা পেতে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে।
গত আগস্টে ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি পিডিভিএসএকে ছয় বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ভেনিজুয়েলার সঙ্গে পেট্রিওমিরান্ডা, পেট্রোমনাগাস ক্ষেত্রের মতো বেশ কিছু প্রকল্পে একত্রে কাজ করছে, যেখান থেকে প্রায় ২০ মিলিয়ন টন তেল উত্তোলন করছে।
লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলায় অর্থনৈতিক মন্দা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে দেশটির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট বেড়ে চলছে। মূলত সরকারের বেশ কিছু অর্থনৈতিক নীতির কারণে ভেনিজুয়েলার মুদ্রার মূল্য দ্রুত গতিতে কমে যায়। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। চলতি বছরের নভেম্বরে দেশটির মুদ্রা ‘বলিভার’ প্রায় ৯৬ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে। আর মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার শতাংশে।
২০১৬ সালের শেষের দিকে চিরাচরিত ১০০ বলিভারের নোট বাতিল করে পাঁচ হাজার, ১০ হাজার এবং ২০ হাজার বলিভার নোটের প্রচলন শুরু হয়। এতে ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি ঘটে। এক দিনের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছায়। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বেতন না বাড়ায় তারা পড়েন বিপাকে। বলিভারের মূল্য এতটাই কমে যায় যে এক বান্ডিল ২০ হাজারের বলিভার দিয়ে একটি পাউরুটি কিনতে হচ্ছিল।
প্রচলিত মুদ্রার দাম পড়ে যাওয়ার ধাক্কার ওপর রয়েছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। বিদেশি ঋণদাতাদের কাছে ভেনিজুয়েলার ঋণের পরিমাণ আনুমানিক ১৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার পদেক্ষেপ হিসেবে নতুন একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দেশের এ অবস্থায় আর্থিক সংকট কাটাতে নতুন মুদ্রা পেট্রো ভূমিকা রাখবে বলে দাবি মাদুরোর। তবে দেশটির বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের দাবি, প্রস্তাবিত এ মুদ্রা আনতে কংগ্রেসের সমর্থন লাগবে।
এদিকে লাতিন আমেরিকায় প্রভাব বিস্তার করতে ভেনিজুয়েলার সঙ্গে মার্কিন বিদ্বেষকে কাজে লাগাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘদিনের এ মিত্র দেশটির কাছে পাঁচ হাজার মিসাইল বিক্রি করে রাশিয়া।