সেতু নির্মাণের সময় যেমন খরচ হয়, তেমনি পরবর্তী সময়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায়ও খরচ হয়। সেতু নির্মাণের খরচ নানাভাবে জোগাড় হতে পারে। সরকার উন্নয়ন বাজেট থেকে খরচ করতে পারে, আবার পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ থেকেও খরচের জোগান হতে পারে। জনগণের কাছ থেকেও প্রত্যক্ষ খরচ আদায় করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে সিনেমার টিকিটে এক টাকা করে অতিরিক্ত নেওয়া হতো সেতুর খরচ বাবদ। সাধারণত ছোট বা মাঝারি সেতু নির্মাণ করে সেগুলো থেকে টোল আদায় করা হয় না; তবে বড় সেতু থেকে আদায় করা স্বাভাবিক। সেতু পুরোপুরি বিদেশি অনুদানে নির্মিত হলে সেখানেও টোল নির্ধারণের প্রয়োজন হতে পারে; কারণ রক্ষণাবেক্ষণ খরচ একেবারে কম নয়। টোল হার নির্ধারণে নানা বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন এবং সেগুলো রাখা হয় বলেই আমরা মনে করি। একটি সেতু আশপাশের জনজীবনে কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে, তার সঙ্গে টোলের হার সরাসরি সম্পর্কিত। জাতীয় অর্থনীতিতেও এর প্রভাব রয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু যমুনা নদীর দুই প্রান্তের মানুষের মধ্যে সংযোগ ঘটিয়েছে। বর্তমানে সেখানে যে টোল হার রয়েছে, সেটি পর্যালোচনা করে সরকার ৩৮ থেকে ৪২ শতাংশ বাড়িয়েছে বলে গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। পাশাপাশি মুক্তারপুর সেতুর টোল হারও বাহনভেদে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর পেছনে সরকারের যুক্তিসংগত কারণ থাকার কথা। তবে আমরা মনে করি, টোল হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরও ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
প্রথমবার টোল নির্ধারণের সময় প্রতিদিন কত সংখ্যক বাহন চলাচল করে, ভবিষ্যতে কী পরিমাণ চলতে পারে, কত বছর টোল গ্রহণ করা হবে, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কী হতে পারে ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে তা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে নির্দিষ্ট সময় পরপর টোল হার বাড়ানো হলে সেটা তিন ধরনের প্রশ্নের জন্ম দেয়। প্রথমত, প্রথমবার কি ভেবেচিন্তে টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছিল? দ্বিতীয়ত জনগণকে তাহলে কতদিন নির্মাণব্যয় বহন করতে হবে? তৃতীয়ত রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কতটা বাড়ছে, যে কারণে টোল হার পুনর্নির্ধারণ করতে হচ্ছে, নাকি রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাড়ানো হচ্ছে? আমরা মনে করি, কোনো উপায় না থাকলেই কেবল টোল হার বাড়ানো উচিত। এটি সরকারের আয়ের কোনো উৎস নয় বা উৎস হতেও পারে না। টোলের রাস্তা বা টোলের সেতু বিদেশে প্রচুর দেখা যায়। এ ধরনের রাস্তা বা সেতু এদেশে প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের সুশাসনের অভাব রয়েছে। সরকার বাসপ্রতি ১০০ টাকা টোল বাড়ালে যাত্রীপ্রতি হয়তো দুই টাকা বাড়ার কথা; কিন্তু বাসমালিকরা কি ১০ টাকার কম ভাড়া বাড়াবেন? এ দিকগুলো মনিটর করার প্রক্রিয়াও গড়ে ওঠেনি। সুতরাং টোল হার বাড়ানোর সঙ্গে জনজীবনে এর প্রভাব সরাসরি সম্পর্কিত। আমরা তাই মনে করি, টোল হার বাড়ানো হোক ভেবেচিন্তে।