শেয়ার বিজ ডেস্ক: নেপালের লুম্বিনি প্রদেশের ভৈরাহাওয়ায় নির্মাণ করা হচ্ছে কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানা। এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হবে ২ হাজার ৫০০ মানুষের এবং বছরে ১ হাজার ৫০ কোটি রুপির ওষুধ প্রস্তুত করা হবে। লুম্বিনির রুপান্দেহি জেলার সবচেয়ে জনবহুল এই এলাকা ঘিরে ফার্মাসিউটিক্যালস কেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারে আশাবাদী দেশটির কর্তৃপক্ষ। এলাকাটি সিদ্ধার্থনগর নামেও পরিচিত। খবর: কাঠমাণ্ডু পোস্ট।
নেপালে ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলো যাত্রা করে ১৯৭২ সালে। দেশটির দক্ষিণে অবস্থিত ভৈরাহাওয়া দ্রুত বর্ধনশীল ফার্মাসিউটিক্যাল কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে। এখানের বিশাল জনসংখ্যা, নাগরিকদের উচ্চ আয়, দ্রুত নগরায়ন ও উপযুক্ত পরিবেশ এ অঞ্চলটিকে এক্ষেত্রে সহায়তা করছে।
ব্যবসা-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ অঞ্চলে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের চাহিদা বেড়েছে। এখানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তাই ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা।
ভৈরাহাওয়ায় বর্তমানে ১৪টি ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানা গড়ে উঠছে। এদের বেশির ভাগ অ্যালোপেথিক ওষুধ তৈরি করে। বাকিরা তৈরি করছে আয়ুর্বেদিক ওষুধ। তাদের বেশির ভাগ পণ্য বিক্রি হচ্ছে দেশটির সর্বত্র।
লুম্বিনির অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস প্রডিউসারস অব নেপালের সমন্বয়ক গনেশ পাঠক জানান, নেপালের সব প্রদেশের মধ্যে ওষুধ তৈরি ও বিনিয়োগে শীর্ষে রয়েছে লুম্বিনি। তিনি বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল খাত বড় হচ্ছে। তাই এখাতে কাজের সুযোগ বাড়ছে। গত কয়েক বছরে এখানে ৭০০ কোটি রুপির বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। বেশির ভাগ কারখানায় স্থানীয় কর্মীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, কয়েক বছর আগে যা ভারতীয় কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। পাঠক বলেন, শ্রমিক থেকে কারিগরÑপ্রায় সব কর্মীই স্থানীয়। সুযোগ-সুবিধা বেশি হওয়ায় এ খাতে জনবল বাড়ছে।
নেপালের অন্যতম বৃহৎ এশিয়ান ফার্মাসিউটিক্যালসের অবস্থান রুপান্দেহিতে। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৮ সাল থেকে ওষুধ প্রস্তুত করছে। বর্তমানে ২৮০ ধরনের ওষুধ তৈরি হচ্ছে তাদের কারখানায়। এশিয়ানের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর হুতানন্দ খানাল বলে, বছরে আমাদের কারখানায় ২৭০ কোটি রুপির ওষুধ তৈরি করা হয়। তাদের কারখানায় বর্তমানে কাজ করছেন ২৫০ জন। এর বাইরে বিপণন ও বিতরণ বিভাগে কাজ করছেন আরও ৩৭৫ কর্মী। খানাল বলেন, দেশের সর্বত্র আমাদের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা ১২০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছি। বিনিয়োগ আরও বাড়বে এবং পণ্যের পরিধিও বাড়বে। কেননা ওষুধের চাহিদা রয়েছে এবং ওষুধ ব্যবসায় বিক্রি ও মুনাফা বেশ ভালো। তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কাঁচামাল আমদানির খরচ অতীতের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটি ৩ হাজার ৭০ কোটি রুপির ওষুধ আমদানিও করে। প্রসঙ্গত দেশটির অর্থবছর শেষ হয় মধ্য জুলাইয়ে।
রুপান্দেহিতে আয়ুর্বেদিক ওষুধের কারখানাও প্রসারিত হচ্ছে। এখানের তিলোত্তমায় নির্মিত গ্রেস ফার্মাসিউটিক্যালস দেশটির অন্যতম বৃহৎ আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এটি। প্রতিষ্ঠানটি আয়ুর্বেদিক ট্যাবলেট, অয়েনমেন্ট, সিরাপ ও তেল প্রস্তুত করে। তাদের ৫৪ ধরনের পণ্য রয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রেস এখন পর্যন্ত ২০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে। এখানে কাজ করছেন ১১০ কর্মী। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুরাজ ভট্টরাজ বলেন, পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে পরিচালনা করা হলে আমাদের প্রতিষ্ঠান দ্বিগুণ ওষুধ উৎপাদন করতে পারবে এবং আয়ুর্বেদিক পণ্যের চাহিদা রয়েছে।
নেপালের ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানগুলো কারখানার উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন যাতে দেশের বাজারে তাদের আধিপত্য থাকে এবং আমদানি কমানো যায়। তবে আমদানি করা কাঁচামালের দাম কমানোই প্রধান চ্যালেঞ্জের। এখন পর্যন্ত যেসব অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে তার সম্পূর্ণ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এর ৮০ শতাংশ আসে ভারত থেকে, বাকিটুকুর জোগানদাতা চীন ও ইউরোপের দেশগুলো। এমনকি আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির জন্যও ৪০ শতাংশ কাঁচামালও আমদানি করতে হয়। কাঁচামালের অপ্রতুলতাকে স্বনির্ভর হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা বলে জানান ফার্মাসিউটিক্যালস মালিকরা।