Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:30 am

ভোক্তারা চাঙ্গা রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি

শেয়ার বিজ ডেস্ক : আমেরিকার ভোক্তারা খরচ করেই যাচ্ছেন, এতে চাঙ্গা হচ্ছে দেশটির অর্থনীতি। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে কতদিন চলবে? খবর: সিএনএন। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও আসন্ন মন্দা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা খুচরা কেনাকাটা করছেন। ছুটির দিনগুলোয় ব্লাক ফ্রাইডে (২৫ নভেম্বর) ও সাইবার মানডেতে (২৮ নভেম্বর) ক্রেতারা দুই হাত উজাড় করে কেনাকাটা করেছেন। আসছে ছুটির মৌসুমে এ ধারা অব্যাহত থাকার আশা বিশ্লেষকদের।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের (এনআরএফ) জরিপে দেখা গেছে, থ্যাংকসগিভিং ও সাইবার মানডে উপলক্ষে রেকর্ড ১৯ কোটি ৭০ লাখ আমেরিকান কেনাকাটা করেন। গত বছরের চেয়ে যা ১০ শতাংশ বেশি। ছুটি উপলক্ষে সপ্তাহান্তে ক্রেতারা কেনাকাটার পেছনে গড়ে ৩২৫ ডলার ব্যয় করেন, যা ২০২১ সালের তুলনায় বেশি। গত বছর তারা গড়ে ৩০১ ডলার ব্যয় করেন। ফেডারেশনের পূর্বাভাস, ছুটির দিনগুলোয় সামগ্রিক বিক্রি বাড়বে ৬ থেকে ৮ শতাংশ। যদিও বিক্রি বৃদ্ধির এ হার গত বছরের তুলনায় ধীরগতির, তবে ঐতিহাসিক মোট গড়ের তুলনায় বেশি।

অ্যাডোবি অ্যানালাইটিকসের সমীক্ষা অনুসারে, ক্রেতারা চলতি বছরে অনলাইন কেনাকাটায়ও নতুন রেকর্ড করেছে। তারা সাইবার মানডেতে মোট ১ হাজার ১৩০ কোটি ডলার খরচ করেছে। বার্ষিক হিসেবে অর্থাৎ গত বছরের সাপেক্ষে এ বছর যা ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের কেনাকাটার এ প্রবণতা মন্দা দূরে সরিয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ব্যাংক অব আমেরিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রায়ান ময়নিহান। তার মতে, আমেরিকানরা এখনও চাকরি করছেন, তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট অর্থ রয়েছে এবং তারা এখনও সেই অর্থ ব্যয় করছেন। দিন শেষে তারাই কেনাকাটা করছেন, তারাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন।

এনআরএফের মতে, অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি ভোক্তাব্যয় এবং কোনো খুচরা বিক্রেতার ক্ষেত্রে বছরের শেষ দুই মাসে মোট বিক্রির ২০ শতাংশ বিক্রি বেড়ে যায়, কোনো কোনো বিক্রেতার কাছে এ হার আরও বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড গত মাসে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কভিড-১৯ মহামারির সময়ের সব রিজার্ভ এখনও শেষ হয়নি। তাদের এখনও ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে, যা মোট নগদ অর্থের ৭৫ শতাংশ। এ রিজার্ভ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। তবে ভোক্তাব্যয়ের জন্য এখনও যথেষ্ট রিজার্ভ রয়েছে।

ক্রেতাদের আচরণ এখনও সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে, তবে ফেড মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে চললে, ঝুঁকি তৈরি হবে। অর্থনীতিবিদ ওয়েলস ফারগো জানিয়েছে, ক্রেতাদের খরচ শুধু মূল্যস্ফীতির কারণে বাড়ে না, বরং দাম নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্দেশ্যে বাড়ানো সুদের হারের ওপর নির্ভর করে। ব্যয়ের উচ্চহার বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর কিংবা দুঃসংবাদ, দু-ই হতে পারে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। তার মানে, ফেড সুদের বাড়ানোর জন্য ডেটার ওপর নির্ভর করতে পারে।
তবে ভোক্তাব্যয় কম হলে মন্দা দেখা দিতে পারে এবং স্বল্পমেয়াদে অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তবে কয়েকজন অর্থনীতিবিদ
বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতির তুলনায় এ পরিস্থিতি ভালো।
আমেরিকার ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো এখনও শক্তিশালী হলেও, তা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। তবে ২০২২ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমানতের হার বেড়েছে ১৫ শতাংশ। ২০০৪ সালে নিউ ইয়র্ক
ফেড-এ হিসাব রাখা শুরু করার পর যা সর্বোচ্চ বার্ষিক উল্লম্ফন।
কনফারেন্স বোর্ডের জ্যেষ্ঠ পরিচালক লিন ফ্রাঙ্কো বলেন, বাড়ি, অটোমোবাইল প্রভৃতি কেনাকাটা কিছুটা কমেছে। মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার বৃদ্ধি যৌথভাবে ২০২৩ সালের শুরুতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
এফডব্লিউডিবন্ডস এলএলসি’র অর্থনীতিবিদ ক্রিস রুপকি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ভোক্তাব্যয় দীর্ঘমেয়াদি হবে না। কেননা একটা পর্যায়ে গিয়ে মহামারির সময় সঞ্চিত অর্থ ফুরিয়ে আসবে। এ কারণে ক্রেতার কেনাকাটা কমাতে বাধ্য হবে।
ইতোমধ্যে আবাসন খাতে এর প্রভাব পড়েছেÑগত আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে বাড়ি বিক্রি কমেছে।