ভোক্তা যেন তেলে ভ্যাট কমানোর সুফল পায়

আমাদের রাজস্ব আয়ের একটি বড় উৎস মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট। কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলেই ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভ্যাট কমানো গেলে নিত্যপণ্যের দাম কমবে। গত কয়েক দিনে পণ্যমূল্য কয়েক দফা বেড়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় বিধান রমজান সমাগত। ওই সময় কারণে-অকারণে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাÑএমন অভিযোগ বেশ পুরোনো। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলায় ভ্যাট কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দেয়ার পর বৃহস্পতিবারই ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। ধারণা করা যায়, আগামীকাল বা সোমবারের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ভ্যাট প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

ভ্যাট কমানোয় সরকারের রাজস্ব কমলেও সাধারণ মানুষের কষ্ট কমবে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে ভ্যাট কমানোর সুফল যাতে সাধারণ মানুষ পায়, অর্থাৎ নিত্য পণ্যের দাম যেন কমে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এমন যদি হয়, ভ্যাটও কমেছে, পণ্যের দামও বেড়েছে, তাহলে ভোক্তাসাধারণের দুর্ভোগ বাড়বে বই কমবে না।

অবশ্য এরই মধ্যে তেল, চিনি ও ছোলার ভ্যাট ‘প্রত্যাহার’ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কারণ ছোলা আমদানিতে কোনো শুল্ককর আগে থেকেই ছিল না। আর চিনির বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত আসবে, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। আবার বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, অর্থমন্ত্রী যেভাবে ভ্যাট ছাড় দেয়ার কথা বলেছেন, তাতে ব্যয় আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেন কোম্পানিগুলো এমন দাবি করছে, তা খোলাসা করতে হবে। এটি নতুন কোনো কৌশল কি না, সেটিও প্রশ্ন। দাম কমানোর পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সারাদেশে টিসিবির মাধ্যমে জনগণকে স্বল্প মূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহ জোরদার করতে হবে। সরকার বলছে, এতে এক কোটি পরিবারের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে এসব পণ্য পাওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। এখানেও বিতরণ পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা থাকতে হবে, নইলে টার্গেট গ্রুপ সুফল পাবে না।

ভ্যাট-শুল্ক প্রত্যাহারের পাশাপাশি টিসিবিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এটি করা হলে টিসিবির মাধ্যমে বাজারে সঠিকভাবে পণ্য বিতরণ সম্ভব এবং তখন সংঘবদ্ধ চক্র দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবে না। ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সব হিসাব কষে বাস্তবানুগ সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরাসরি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাই সংঘবদ্ধভাবে পণ্য মজুতের কারণে বাজারে কৃত্রিম সংকটের অপচেষ্টা রোধ করতে হবে। পাইকারি বাজারে তদারকি বাড়ানো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বাজার কমিটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং পরিবহন ব্যয় যৌক্তিক করা গেলে বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। ভোক্তারা যেন ভ্যাট কমানোর সুফল পায়, সেজন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০