Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 3:03 pm

ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ নিন

বেশ কয়েকদিন ধরে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল। কোনো পণ্যই ক্রেতাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। মজুরি-বেতনে ২০ দিনও চলে না। সব মিলিয়ে যখন সংসার চালানোই দায়, তখন দেশের বিপণনকারী কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেল ও চিনির দাম আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। বিশ্ববাজারেও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দামও বেড়েছে।

গতকাল একটি সহযোগী দৈনিক প্রধান প্রতিবেদনে বলেছে, নি¤œবিত্তের মানুষ থেকে মধ্যম আয়ের পরিবার-সবার যেন হাত পুড়ছে বাজারে গিয়ে। চাল, ডাল ও তেলের দামে অস্বস্তি আগে থেকেই ছিল। এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজ, আটা, ময়দা, মুরগি, ডিমসহ আরও কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। বেড়েছে রান্নার গ্যাস, সাবান ও টুথপেস্টের মতো নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীর দামও।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ২০২০ সালের ১ মার্চ ও গত ৭ অক্টোবর বাজারদর পর্যালোচনা করে পত্রিকাটি দেখিয়েছে, ওই সময়ের তুলনায় এখন মোটা চালের গড় দাম সাড়ে ৩১ শতাংশ, খোলা আটার ২০, খোলা ময়দার ৩৩, এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৪৩, চিনি ১৯, মোটা দানার মসুর ডাল ৩০ ও গুঁড়ো দুধের ১৩ শতাংশ বেশি।

ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১১ টাকা বাড়িয়ে ১৬৪ টাকা এবং চিনির দাম কেজিতে ৯ টাকা বাড়িয়ে ৮৪ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব রেখেছেন সরকারের কাছে। শুধু যে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, তা নয়। বেড়েছে নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যের দাম। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে আগামী দিনগুলোর কথা ভেবে অনেকেই চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার দায় কেউ নিক বা না নিক বাজারে স্থিতিশীলতা আনয়নের দায়িত্ব সরকারের। সে জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি বাড়াতে হবে।

নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে নি¤œ ও নি¤œ মধ্যবিত্ত তো কষ্টে আছেই, মধ্যবিত্ত পরিবারও নিদারুণ কষ্টে আছে। বাজার পর্যবেক্ষক ও ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠনগুলোর তদারকি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। বড়-ছোট সব বাজার ও দোকানে পণ্যের মূল্যতালিকা টানিয়ে রাখতে হবে। এর আগে যেসব কারণে পণ্যমূল্য বেড়েছিল, সেসব কারণ চিহ্নিত করে বিষয়গুলোর ওপর কঠোরভাবে নজরদারি, দায়ীদের দ্রুত জরিমানা ও শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পারলে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব।

বাজার বিশ্লেষকরা এবারের দাম বাড়ার পেছনে কভিডকালে সরবরাহ বিঘিœত হওয়া, উৎপাদন কমে যাওয়া, জ্বালানি তেলের দাম ও জাহাজভাড়া বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন দেশের মজুতপ্রবণতাকে দায়ী করছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব সৃষ্টির সুযোগ নেই আমাদের। এসব কারণের বাইরে আমাদের তৈরি কিছু কারণ বাজার অস্থিতিশীল করে। আমাদের সেগুলো দূরীকরণে মনোযোগ বাড়াতে হবে। দাম বাড়ার আগে বাড়িয়ে দেয়া, বেশি দামে বিক্রির জন্য মজুদ বাড়ানো, সংঘবদ্ধ হয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা প্রভৃতি জনস্বার্থবিরোধী তৎপরতা রুখে দিতে হবে।