করোনার প্রভাব

ভোগ্যপণ্যে পাইকারিতে নিম্নমুখী খুচরায় ঊর্ধ্বমুখী

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: আসন্ন রমজান উপলক্ষে এরই মধ্যে ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকরা বিভিন্ন দেশ থেকে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন। আমদানির পথে আছে আরও কয়েক লাখ টন ভোগ্যপণ্য। এর মধ্যে দেশজুড়ে চলছে করোনা-আতঙ্ক। এতে সাধারণ মানুষ কয়েক দিনের জন্য চাহিদার অতিরিক্ত ভোগ্যপণ্য মজুত করছে। আর এ সুযোগে খুচরা পর্যায়ের দোকানদাররা ভোগ্যপণ্য ভেদে ৩০-৫০ শতাংশ দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন। বিশেষ করে চাল-ডাল-তেল-পেঁয়াজ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এমন প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এতে বিপাকে পড়ছে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের মানুষ। অথচ দেশের পাইকারি বাজারগুলোয় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের অতিরিক্ত সরবরাহ রয়েছে। আর দামও নি¤œমুখী।  

খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, আসন্ন রমজানকে ঘিরে ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে। বাড়তি সরবরাহের কারণে এরই মধ্যে বেশিরভাগ পণ্যের দাম নি¤œমুখী। বর্তমানে যে দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে, তা আমদানি মূল্যের চেয়েও কম। আর আমদানির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকায় রমজানের আগে ভোগ্যপণ্যর দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে পুরো বিশ্ব এখন আক্রান্ত করোনাভাইরাসে। অজানা আশঙ্কায় প্রতিনিয়ত পাইকারি বাজারের লেনদেন কমছে। পাশাপাশি পণ্যের দাম হ্রাস পাচ্ছে কয়েক গুণ। অথচ উল্টো দৃশ্য দেখা যায় খুচরা বাজারে। মানুষ কয়েক দিনের জন্য চাহিদার অতিরিক্ত ভোগ্যপণ্য মজুত করছে। এ সুযোগে খুচরা পর্যায়ের দোকানদাররা ভোগ্যপণ্যভেদে ৩০-৫০ শতাংশ দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে এমন প্রবণতা লক্ষ করা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, খুচরা বাজারখ্যাত চকবাজারের মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকায় এবং চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। আর ছোলা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকায়। এছাড়া সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি। রগিম নামের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, গত মঙ্গলবার যে চিনিগুঁড়া চালের দাম ছিল চার হাজার ৪০০ টাকা, পরদিন বুধবারেই সেটা ৫০০ টাকা বেড়ে চার হাজার ৯০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মিনিকেট এক হাজার ৯৫০ টাকা থেকে হয়েছে দুই হাজার ১০০ টাকা। প্রতি বস্তা কাটারিভোগ মঙ্গলবার ছিল দুই হাজার ৭০০ টাকা, তা বুধবার হয়েছে দুই হাজার ৮৫০ টাকা। হঠাৎ করে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে।

অপরদিকে খাতুনগঞ্জে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে এলাচ, সয়াবিন, পাম তেল, ছোলা ও ডালের দাম কমেছে ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত। পাইকারিতে ২০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে ভোজ্যতেলের দাম। সিটি গ্রুপের সয়াবিন তেল ২০০ টাকা কমে মণপ্রতি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ১০০ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল তিন হাজার ৩০০ টাকা। আর পামঅয়েলের দাম মণপ্রতি ৮০০ টাকা কমেছে। গতকাল প্রতিমণ পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২০০ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল তিন হাজার ২০০ টাকা।

এছাড়া সুপার পামঅয়েল মণপ্রতি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল তিন হাজার ১০০ টাকা। একইভাবে পাইকারিতে চিনির দাম ১৯০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আর রোজার জন্য একটি প্রধান খাদ্যপণ্য ছোলার দাম মণপ্রতি দুই হাজার ৮০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল দুই হাজার ৩০০ টাকা। অপরদিকে ধানের ফলন কম হওয়ায় ছিড়ার দাম বাড়তির দিকে। বর্তমানে ছিড়ার দাম মণপ্রতি চলছে এক হাজার ৮০০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল এক হাজার ৪০০ টাকা। এছাড়া মসুর ডালের দাম মণপ্রতি এক হাজার ৮০০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল এক হাজার ৯৫০ টাকা।

অপরদিকে গতকাল মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকায়। আর মেহেরপুরের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৮-৩০ টাকায়, যা কয়েক দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৩৮ টাকা দরে। এছাড়া চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়। আর মিয়ানমারের আদা বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমান মজুত পরিস্থিতি সন্তোষজনক। এছাড়া এ মুহূর্তে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি নেই, ঘাটতির কোনো আশঙ্কাও নেই। চলতি বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত সরকারের কাছে খাদ্যশস্য, বিশেষ করে চাল ও গমের মজুত ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় এক লাখ ৮৫ হাজার টন বেশি। এছাড়া ১২ মার্চ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে চাল ও গম আমদানি হয়েছে প্রায় ৫১ লাখ ৭৯ হাজার টন। এর মধ্যে গম ৫১ লাখ ৭৪ হাজার টন এবং চাল রয়েছে চার হাজার টন। চালের পুরোটাই বেসরকারিভাবে আমদানি করা হয়েছে।

অপরদিকে চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে মসুর ডাল আমদানি হয়েছে দুই লাখ ৫৪ হাজার ২৪২ টন, যদিও আগের বছরের একই সময়ে মসুর আমদানি হয়েছিল দুই লাখ ১৩ হাজার ১৭৭ টন। একই সময়ে অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের আট মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছোলা আমদানি হয়েছে এক লাখ ৯৯ হাজার ৪৭১ টন, যা আগের চেয়েও বেশি। আর রমজানের আগের দিন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টন আমদানির পথে আছে। একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চলতি অর্থবছরের আট মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় দেড় লাখ টন পাম অয়েল বেশি আমদানি হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের আট মাসে অপরিশোধিত সয়াবিন আমদানি হয়েছে তিন লাখ ৯৫ হাজার তিন টন এবং অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ৬৭ হাজার ৬৯৬ টন।

আমদানিকারকরা বলেন, রমজান কিংবা করোনা পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণের সরবরাহেও ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। এরই মধ্যে রমজান সামনে রেখে দেশে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এছাড়া সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন অব্যাহত থাকায় আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে আরও কয়েক লাখ টন পণ্য। যে পরিমাণ পণ্য আছে এবং আসবে,  এতে বাজারের সব ধরনের ভোগ্যপণ্য চাহিদার অতিরিক্ত থাকবে। ফলে যারা অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করবে কিংবা সংকট দেখাবে, তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করবে। এতে প্রশাসনের উচিত হবে এসব অতি মুনাফাকারী ও মজুতকারীদের স্থায়ীভাবে ব্যবসার অনুমোদন বাতিল করা। 

ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও চিটাগং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও বাংলাদেশের অবস্থা এখনও অনেক ভালো। তাই আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তিনি বলেন, রমজানকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে দেশে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া আমদানি অব্যাহত থাকায় পাইপলাইনে অনেক পণ্য আসছে। অদূর ভবিষ্যতে কোনো পণ্যের সংকট সৃষ্টি হওয়া কিংবা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারণকে অহেতুক অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০