ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং প্রতিকারে করণীয়

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তথ্য অনুযায়ী, বছরে দেশে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এদিকে দেশে মানুষের তেল খাবারের পরিমাণও বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। দেশে গত চার বছরের ব্যবধানে জনপ্রতি তেল খাওয়ার পরিমাণ বা খাবার তেলের ভোগ প্রায় ৫ কেজি বেড়েছে বলে সরকারি এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

সর্বশেষ গবেষণার ফলাফল বলছে, ২০১৫ সালে মাথাপিছু খাবার তেল ব্যবহারের পরিমাণ যেখানে ছিল ১৩.৮০ কেজি, ২০১৯ সালে তা ৩৬ শতাংশ বেড়ে জনপ্রতি ১৮.৭ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে হয়তো এর ভোগের পরিমাণ আরও বেড়েছে। ফলে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে।

২০১৯ সালে দেশের বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ১০৪ টাকা। ২০২০ সালে সেটি বেড়ে হয় ১১৩ টাকা, ২০২১ সালে ১৩০ টকা এবং ২০২২ সালের শুরুতে মাত্রাতিরিক্ত তেলের দাম সাধারণ মানুষের অনুক‚লে রাখতে সরকার তেলের ওপর শতকরা ১৫ ভাগ শুল্ক প্রত্যাহার করে দাম নির্ধারণ করেন ১৬৮ থেকে ১৭০ টাকা। যদিও এখন লাগামহীন ঘোড়া সেখানেই সীমাবদ্ধ নেই বর্তমানে সেই তেল লিটার প্রতি ১৯৮ টাকা ধরে বিক্রি হয়ে থাকলেও বাজারে রয়েছে তেলের সংকট।

সয়াবিন তেলের সংকট কমাতে বিকল্প হিসেবে যে পামওয়েল ব্যবহার করার সুযোগ গ্রহণ করবে সাধারণ মানুষ সেখানেও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। পামওয়েল তেলের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়াও তাদের অভ্যন্তরীণ ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে পামওয়েল তেল রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছেন সম্প্রতি। অপরদিকে দ্বিতীয় পামওয়েল উৎপাদনকারী  দেশ মালেয়েশিয়াতেও এর উৎপাদন ও সরবরাহে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ফলে পামওয়েল তেল আমদানিও ব্যাহত হওয়ায় সয়াবিন তেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পামওয়েল তেলের দামও বর্তমানে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

তেল সংকটের এই সময়ে আমাদের ভোজ্যতেল ভোগের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। একদিকে এতে যেমন তেলের মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা কমে তেলের বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি আমাদের শারীরিক সুস্থতাতেও ভ‚মিকা রাখবে। কেননা মাত্রাতিরিক্ত সয়াবিন তেল হার্টের জন্য খুব বেশি স্বাস্থ্যকর না। অন্যদিকে সরকারি মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে অন্ততপক্ষে সর্বশেষ যেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে মানুষ যেন সেই দাম দিয়ে বাজারে স্বাভাবিকভাবে তেল কিনতে পারেন। সরকারি নজরদারি বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক তেলের কৃত্তিম সংকট তৈরির পরিস্থিতিও মোকাবিলা করতে হবে এবং বর্তমান আমদানিকারকদের পাশাপাশি অন্য ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানকেও  ভোজ্যতেল আমদানির সুজোগ করে দেয়া যেতে পারে। এর ফলে ভোজ্যতেলের বাজারের শক্ত সিন্ডিকেট দুর্বল হয়ে পড়ে ভোজ্যতেলের বাজার স্বাভাবিক হতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে এবং তেল সংকটের স্থায়ী সমাধানের পূর্ব পর্যন্ত সাময়িক সময়ের জন্যে ভোজ্যতেল আমদানিতে পূর্ণাঙ্গ শুল্কমুক্ত আমদানির সুজোগ দেয়া যেতে পারে যেন ভোজ্যতেলের দাম নি¤œ আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার তুলনামূলক হাতের নাগালে থাকে। অপরদিকে দেশের ধনিক শ্রেণির মানুষের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভোজ্যতেল কিনে মজুত করার অনৈতিক চর্চা থেকে বিরত থাকতে হবে। এই ক্রান্তিলগ্নে সর্বশ্রেণির মানুষের  ভোজ্যতেল প্রাপ্তির মানবিক দিক বিবেচনা করতে হবে তাদের।

বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষের সক্রিয় ভ‚মিকা ও দেশের সর্বশ্রেণির মানুষের কথা বিবেচনা করে সরকারের আমদানিনির্ভর তেল জোগানের অতিদ্রæত  বিকল্প চিন্তা করতে হবে অন্যথায় আরও দুর্ভোগ পোহাতে হবে আমাদের।

অপু দেবনাথ

খিলগাঁও, ঢাকা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০