রমজান মাসে যেসব পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর। এসব পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে গেলে মূল্যস্ফীতি অনেকাংশে বেড়ে যাবে রমজান মাসে। কারণ রমজানে এসব ভোগ্যপণ্যই সবচেয়ে বেশি ব্যবহƒত হয়। কাজেই এসব পণ্যের দাম হ্রাসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক। রমজানে এসব পণ্যের দাম যাতে কম রাখা যায়, সে লক্ষ্যে এগুলো আমদানিতে নিহিত শুল্ক-কর হ্রাস করার বিষয়ে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ চিঠি আমলে নিয়ে শুল্ক-কর হ্রাসে আশু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করি।
সহযোগী একাধিক দৈনিকে গতকাল ‘ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের শুল্ক-কর হ্রাসে এনবিআরকে চিঠি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে এসব পণ্যের ওপর আরোপিত নানা ধরনের শুল্ক করের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, চিনি আমদানিতে পাঁচ ধরনের শুল্ক-কর রয়েছে। খেজুরের ওপরও পাঁচ ধরনের শুল্ক-কর রয়েছে। আর ভোজ্যতেলের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। তেলের ভ্যাট ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আর অন্য দুটি পণ্যের ক্ষেত্রেও আমদানি শুল্ক ও করের পরিমাণ কমাতে বলা হয়েছে।
রমজানে ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গই হচ্ছে খেজুর। বর্তমানে দেশে বছরে ৫০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। এর প্রায় ৮০ শতাংশই ব্যবহƒত হয় রমজান মাসে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে খেজুরের শুল্ক-কর অনেক বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কেননা খেজুর বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। এটিকে বিলাস পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে এ পণ্যটির ওপর শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে। খেজুরের ওপর শুল্ক-কর বাড়ানোর ফলে অর্থবছরের শুরু থেকেই ব্যবসায়ীরা তা কমাতে তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। এটি কমানো না হলে সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থেকে যাবে পণ্যটি।
এছাড়া বছরে দেশে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় দুই লাখ টন। বাকি ১৮ লাখ টনই আমদানি করতে হয়। রমজানে তেলের চাহিদাও অনেক বেড়ে যায়। ফলে এ সময়ে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে তেলের ভ্যাট কমানো হলে তা ক্রেতাদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে বলেই বিশ্বাস।
একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা কম মুনাফা করেন এবং নানা পণ্যে ছাড় অফার করেন। কিন্তু বাংলাদেশে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চিত্র পরিলক্ষিত হয়। এখানকার ব্যবসায়ীরা কোনো উৎসবের উপলক্ষ পেলে আরও বেশি মুনাফা ঘরে তোলার সুযোগ খোঁজেন বলে নানা সময়ে প্রতিভাত হয়েছে। এমন পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে পণ্যের দাম যাতে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে বাড়িয়ে না দেন, তা নিশ্চিতে বাজারে তদারকি বাড়াতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহল সুলভ মূল্যে জরুরি পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।