Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:32 am

ভোজ্য তেলে ৭০% ও ডালে ৬০% ঘাটতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যচাহিদা অনুযায়ী যে পরিমাণ ভোজ্য তেল প্রয়োজন, উৎপাদনে ঘাটতি থাকে তার ৭০ শতাংশ, যা মেটাতে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। একইভাবে ডালের চাহিদার ৬০ শতাংশ এবং মসলায় ৩০-৩২ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) এক যৌথ প্রতিবেদনে।

তবে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে এসব খাদ্যপণ্যের আমদানিনির্ভরতা ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পÑতৃতীয় পর্যায় (১ম সংশোধিত)’ নিয়ে এক কর্মশালায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন প্রকল্পের পরিচালক খায়রুল আলম। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা যেখানে ১০ দশমিক ৫১ লাখ মেট্রিন টন, সেখানে উৎপাদিত হচ্ছে তিন দশমিক ৫২ লাখ মেট্রিক টন।

বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এখন ১৮ গ্রাম তেলের চাহিদা রয়েছে। আর ডালের চাহিদা ৪৫ গ্রাম। সে হিসাবে বছরে ২৬ দশমিক ২৮ লাখ মেট্রিক টন ডালের চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে ৯ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন। আর বছরে ৪০ দশমিক চার লাখ মেট্রিক টন মসলার চাহিদা থাকলেও দেশে উৎপাদিত হয় ৩৯ দশমিক ৫৩ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু ফসল সংরক্ষণের উন্নত ব্যবস্থা না থাকায় সেখান থেকে ১০-১২ লাখ মেট্রিক টন মসলা নষ্ট হয়। ফলে শতকরা হিসাবে ৩০ শতাংশের মতো ঘাটতি থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই বিপুল পরিমাণ ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প’ হাতে নেয় ২০১৭ সালে। তবে প্রকল্পের মূল কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে।

২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৫ কোটি ২৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে সারা বছর ডাল, তেল ও মসলাজাতীয় ফসলের বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। সেইসঙ্গে উন্নত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে এসব ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং তাতে আমদানিনির্ভরতা কমে আসবে। প্রকল্পে মৌচাষ সম্পৃক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ১৫-৩০ শতাংশ ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি মধু উৎপাদন এবং পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ উৎসাহিত হবে বলে সরকার মনে করছে।

প্রকল্প পরিচালক খায়রুল আলম বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে ১২ দশমিক শূন্য সাত লাখ মেট্রিক টন, ডাল ১১ দশমিক ২২২ লাখ মেট্রিক টন ও মসলা ৪০ দশমিক ৭৭৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করতে সম্ভব হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। এর আওতায় সারা দেশে চার হাজার ৫০০টি বীজ এসএমই’র অধীনে চার বছরে ডাল, তেল ও মসলাজাতীয় বিভিন্ন ফসলের মোট ৩৫ হাজার ৯১৫টি বীজ উৎপাদন ব্লক স্থাপিত হবে। প্রতিটি ব্লকের আয়তন এক একর ও পাঁচ শতক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ২৭৫টি বীজ উৎপাদন ব্লক তৈরি করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ হাজার ৩২০টি বীজ উৎপাদন ব্লক স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ প্রকল্পের পুরো সময়ে প্রায় ১১ হাজার ৯৬৫ মেট্রিক টন উন্নতমানের বীজ উৎপাদিত হবে ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দেশে ডালের উৎপাদন বেড়ে এখন আট-নয় লাখ মেট্রিক টন হচ্ছে। তারপরও একটা বিরাট পরিমাণ ডাল আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তেল আমদানি করতে আমাদের দুই বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘দেশের উপকূলীয় এলাকায় এখন ডাল হচ্ছে; ডালের সম্ভাবনাও আছে। ডালের ভালো জাত ছিল না। সম্প্রতি আমরা দেখতে পাই, তারা মুগডালের অনেক ভালো জাত উদ্ভাবন করেছে। সেগুলো যদি মাঠপর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি, তবে উৎপাদন বাড়বে। তবে ভুট্টা, ড্রাগন ফল ও টমেটোর মতো ‘অপ্রচলিত অর্থকরী’ ফসলের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। এসব এখন সারা বছর ধরেই চাষ হচ্ছে, কারণ চাহিদা আছে। স্ট্রবেরির পাশাপাশি এখন নীলফামারীতে কফির চাষও হচ্ছে। এগুলো তো অনেক লাভজনক। সম্প্রতি আমার এলাকায় (মধুপুরে) একজন বিদেশি ব্যবসায়ী জানালেন, যদি প্রতিদিন ৩০ টন অ্যালোভেরা দিতে পারি, তিনি রপ্তানি করবেন। কিন্তু সেখানে আমি কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, দু-এক টনের মতো অ্যালোভেরা দিতে পারবে।’

এসব অর্থকরী ফসলের উৎপাদন বাড়াতে ‘সবাইকে এক জায়গায় বসে’ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার তাগিদ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কোন এলাকায় কোন ফসলটি আসলে ভালো হবে, তা বৈজ্ঞানিকভাবেই ভাবতে হবে।’