শেয়ার বিজ ডেস্ক: নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ভারতের দালাল স্ট্রিটে। ভোট গণনা শুরু হতেই ধস নেমেছে পুঁজিবাজারে। বেলা যত বাড়তে থাকে, ততই পতন হয় সূচকের। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের সময় বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ছয় হাজার পয়েন্ট পতন হয়েছে সেনসেক্সের। খবর: দ্য ইকোনমিক টাইমস।
ভোট গণনায় দেখা গেছে, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট প্রায় ২৯৫টি লোকসভা আসনে এগিয়ে। বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটও পিছিয়ে নেই। তারা এগিয়ে রয়েছে ২৩০টি আসনে। ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বারানসিতে একসময় পিছিয়ে পড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে অবশ্য মোদি এগিয়ে গেছেন। ভারতের পুঁজিবাজারে মঙ্গলবার মূলত এর প্রভাবই পড়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ কারণে সেনসেক্সের পতন হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, এনডিএ জোট ৩০০ আসনে এগিয়ে না থাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হবেন না। যদিও ুঢ়ড়১বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবার দাবি করেছিল, তারা ৪০০ আসনে জিতবে।
ভারতীয় সময় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় নিফটি সূচকের পতন হয় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এই সূচকটি নেমে আসে ২২ হাজার ৫৫৭ পয়েন্টে। এসঅ্যান্ডপি বিএসই সূচকের পতন হয়েছে ৩ শতাংশ। সকাল সাড়ে ৯টায় এই সূচকটি নেমে দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ১০৭ পয়েন্টে। গতকাল ট্রেডিং শুরু হওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের দাম কমেছে প্রায় ২০ লাখ কোটি রুপি। এরপর বেলা ১১টা ১০ মিনিটে নিফটির পতন হয় ৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
এদিন সকালে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বাজারগত মূলধনের পরিমাণ ৮ কোটি ৭৮ লাখ রুপি হ্রাস পেয়ে হয় ৪১৭ দশমিক ১৪ লাখ কোটি রুপি।
মঙ্গলবার সকালের ট্রেডে বড় ধাক্কা খায় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ার। এদিন বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ারে ১০ শতাংশ পর্যন্ত পতন লক্ষ করা গেছে। ব্যাংক অব মহারাষ্ট্রের শেয়ারের দাম ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। ইউকো ব্যাংকের শেয়ারের দাম প্রায় ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাংকের শেয়ারের দাম প্রায় ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমে। জেকে ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ হ্রাস পায়। পাঞ্জাব অ্যান্ড সিন্ধ ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ নিম্নগামী হয়। স্টেট ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ হ্রাস পায়। ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার স্টকের দাম ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ কমে যায়। সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার শেয়ারের দর প্রায় ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ নিম্নগামী হয়। এছাড়া পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক এবং ইন্ডিয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৬৯ ও ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ হ্রাস পায়। ইউনিয়ন ব্যাংক, কানাডা ব্যাংক এবং ব্যাংক অব বরোদার শেয়ারেও যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৮৮, ১৪ দশমিক ৭৯ ও ১৫ দশমিক ০২ শতাংশ পতন হয়।
এর আগে গত সোমবার ভারতের পুঁজিবাজারে নজিরবিহীন উত্থান হয়। বাজারের সূচক আবারও ৭৬ হাজারের ঘরে উঠে যায়। নিফটিও নজির গড়ে ২৩ হাজারের ঘরে উঠে যায়; উত্থান হয় ৭৩৩ পয়েন্ট। গত তিন বছরের মধ্যে এই দুই সূচকের সবচেয়ে বেশি উত্থান হয়েছিল সোমবার। শেয়ারের দাম বাড়ে ১৪ লাখ কোটি রুপি।
বিনিয়োগকারী ও বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, বুথফেরত সমীক্ষার প্রভাবে সোমবার এমন উত্থান হয়েছিল ভারতের পুঁজিবাজারে। এদিন ভারতের বাজারবিশেষজ্ঞ কমল পারেখ দাবি করেন, এমন উত্থানের ফলে
আরও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে পুঁজিবাজার। সমীক্ষার ফলের সঙ্গে বাস্তব গণনা না মিললে বাজারের পতন হবে। তার সেই আশঙ্কাই মঙ্গলবার সত্যি হয়েছে।
তবে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক সন্দ্বীপ সবরওয়ালের মতে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অতিরিক্ত বিয়ারিস দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্যণীয়। বাজারে একাধিক খাত বর্তমানে দুর্দান্ত পারফর্ম করছে। বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে শেয়ার বিক্রি করার পথে হাঁটা উচিত। কিন্তু অপ্রয়োজনীয়ভাবে নগদ অর্থ বৃদ্ধি করা বোকামি বলে তিনি মনে করেন।