নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘নিরাপদে’ ভোট হবেÑএ আশ্বাস দিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আহŸান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা। ভোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ‘নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি’ নিয়ে ভোটে দায়িত্ব পালন করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ হবে ইভিএমে। দুই সিটি করপোরেশনের ভোটার রয়েছেন ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন।
গতকাল সকাল থেকে আটটি করে মোট ১৬টি ভেন্যু থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রের ভোটের সরঞ্জাম বিতরণ করা হচ্ছে।
ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে ভোটের সরঞ্জাম বিতরণ কার্যক্রম দেখতে এসে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে ভোটারদের আহŸান জানাবÑআজ শনিবার তারা যেন প্রত্যেকেই ভোটকেন্দ্র যান। ইভিএমে ভোটদানের ব্যাপারে আমাদের প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যে কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা তারা করবে। ইভিএমে ভোট দিয়ে তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, এ আহŸান আমি ভোটারদের প্রতি জানাই।’
সিইসি হুদা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা বারবার বলেছি, তারা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে দায়িত্ব পালন করবে। প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি, বারবার বলেছি, সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা দায়িত্ব পালন করবে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন, তাদেরও সে রকম ইনস্ট্রাকশন দেওয়া আছে।’
মেয়র ও কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরা তাদের ‘ইচ্ছা ও সুবিধামতো, নির্বিঘেœ, বিনা বাধায়’ প্রচার চালাতে পেরেছেন দাবি করে সিইসি বলেন, ‘এতে ভোটারদের মধ্যে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের আস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে আমি মনে করি। আশা করি আগামীকালের নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হবে, অবাধ হবে, সুষ্ঠু হবে, নিরপেক্ষ হবে।’
এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ফিরে আসবে বলে মনে করেন কি নাÑএ প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। আস্থা-অনাস্থা তাদের মানসিকতার ওপর, কে কীভাবে দেখে, সেটার ওপরে। আমরা কখনও কোনো পক্ষপাতিত্ব নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করিনি, করবও না।’
নূরুল হুদা বলেন, ‘দেখেন এ দেশে নির্বাচন কমিশনের প্রতি কোনো দিনও সব রাজনৈতিক দলের আস্থা ছিলÑতা আমি দেখিনি। সুতরাং একদল যারা ক্ষমতায় থাকবেন তাদের এক ধরনের বক্তব্য থাকবে, আবার যারা বাইরে থাকবেন তাদের কখনও আস্থা আসবে না নির্বাচন কমিশনের উপরে, এ রকম একটা পলিটিক্যাল কালচার হয়ে আসছে।’
নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থাহীনতার এ সংস্কৃতি থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে মত দিয়ে সিইসি বলেন, ‘তাদেরই দেখতে হবে কতখানি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে নির্বাচন কমিশন, এখানে আমার বলার কিছু নেই।’
এক প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘ভোটাররা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, এটা এখন তারা মনে করে না বলে আমি মনে করি। নির্বাচন যখনই প্রতিযোগিতামূলক হয়, ভোটাররা বের হয়ে আসে।’
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, তারা যেন তাদের অবস্থান নিয়ে থাকেন। তারা যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সৃষ্টি না করেন। ভোটার ভোট দেবে, ভোট দিয়ে চলে আসবে, ভোটারদের প্রতি যেন আস্থা রাখে। সুশৃঙ্খলভাবে তারা যেন নিজ নিজ অবস্থানে অবস্থান করে।
ভোট সামনে রেখে ‘জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের’ ঢাকায় জড়ো করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ আওয়ামী লীগের রয়েছেÑসে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি বিশেষ কোনো নির্দেশনা ইসির আছে কি না, সে প্রশ্ন রাখেন একজন সাংবাদিক। জবাবে সিইসি বলেন, ‘এ রকম বিশেষভাবে আমরা বলিনি। কে কোন দলের, সেটা বড় কথা না। তবে সন্ত্রাসী যদি ভেতরে ঢোকে অথবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তবে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেটা দেখবে।’
এছাড়া বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নীতিমালা মেনেই দায়িত্ব পালন করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন হুদা।