ভোলায় আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে পুলিশ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোলার বোরহানউদ্দিনে ‘তৌহিদী জনতা’র বিক্ষোভ সমাবেশ কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহতের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ কিংবা অন্য কারও দায়িত্বে অবহেলা আছে কি না, সে বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে কারও অবহেলা প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অবশ্য ওই এলাকার দায়িত্বরত ওসি এবং এসপির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবকের হ্যাক করা ফেসবুক আইডি থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে তারা (তৌহিদী জনতা) সমাবেশ করে। একটা পর্যায়ে সমাবেশ শেষ করে তারা চলে গিয়েছিল। এ সমাবেশের ২০০ থেকে ৩০০ লোক এসে পুলিশ এবং ইউএনও যেখানে ছিলেন, সে জায়গাটি এসে মারমুখী আচরণ শুরু করে। একই সঙ্গে দরজা ভাঙা শুরু করে।’

‘তখন ইউএনও গুলিবর্ষণ করতে বলেন। এটাও অবশ্য শোনা কথা। তবে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষ হলেই বুঝা যাবে কে গুলি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনাটা ঘটার পর পুলিশ আত্মরক্ষার জন্য ওপেন গুলি করে। সেই গুলিতে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। চারজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহতসহ একজন পুলিশও আহত হন। এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’

তিনি বলেন,    ‘ওই এলাকার সংসদ সদস্য তাৎক্ষণিক ওখানে যান। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। এ বিষয়ে সরকার আরও ব্যবস্থা নিচ্ছে। যাতে করে তারা আর্থিক সহযোগিতা পায়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, তারা যেসব দাবি করছে, তার ভিত্তিতে এক্ষেত্রে কেউ (ওসি এবং এসপি) যদি কর্তব্যে অবহেলা করে থাকে অবশ্যই তার বিচার হবে। তাকে সরিয়ে দেব, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

পুলিশের সঙ্গে রোববার ‘তৌহিদী জনতা’র সংঘর্ষে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবকের হ্যাক করা ফেসবুক আইডি থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট’ দেওয়া কেন্দ্র করে দিনভর এ সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত দুই ছাত্রসহ চারজন নিহত এবং ৩০ পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, রোববার সকাল ১০টায় বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ঈদগাহ মাঠে সমাবেশ শেষে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষে গুলি, টিয়ারশেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। সংঘর্ষে আহত ৪৫ জনকে ভোলা সদর ও ৩০ জনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং বাকিদের বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আহতদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাবের টহল জোরদার করার পর বিকালেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিহতরা হলেনÑবোরহানউদ্দিন উপজেলার মহিউদ্দিন পাটওয়ারীর মাদরাসা ছাত্র মাহবুব (১৪), উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেনের কলেজপড়ুয়া ছেলে শাহিন (২৩), বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজ (৪৫) এবং মনপুরা হাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা মিজান (৪০)।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০