ভোলা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে এআইবিবিতে অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: জমির ন্যায্যমূল্য না দেয়া, দলিলে উল্লেখকৃত পরিমাণের চেয়ে বেশি জমি দখল, খাসখাল ভরাট ও খালের পানি দূষণের অভিযোগ উঠেছে ‘ভোলা ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের’ বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) ও এনজিও ফোরাম অন এডিবি’র সহায়তায় ছয়জন ভুক্তভোগী এ অভিযোগ দাখিল করেন।

ভারতীয় শাপুরজি-পালনজি গ্রুপের মালিকানাধীন নতুন বিদ্যুৎ বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনবিবিএল) বিরুদ্ধে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকে (এআইআইবি) এ অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ভোলা ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য এনবিবিএলের নিয়োগকৃত মধ্যস্বত্বভোগীরা জোর করে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে জমি নিয়ে নেয়। পরবর্তী সময়ে দলিলে উল্লেখকৃত জমি ছাড়াও অতিরিক্ত জমি নিজেদের দখলে নিয়ে দেয়াল তুলে দেয়।

উল্লেখ্য, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে শাপুরজি-পালনজি গ্রুপকে এআইআইবি ৬০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) এ প্রকল্পে এআইআইবি’র সঙ্গে সহ-অর্থায়ন করেছে।

এ বিষয়ে ক্লিনের প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে এনবিবিএল যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে তা স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭-এর সরাসরি লঙ্ঘন। এ আইনানুসারে বেসরকারি কোম্পানি জমি অধিগ্রহণ করলে জমির মালিক বাজারদরের অতিরিক্ত তিনগুণ অর্থ পাওয়ার দাবিদার। কিন্তু ক্ষুদ্র কৃষকরা সে দাম পাননি। আবার কোম্পানিটি তাদের নিজস্ব জমিও দখল করে নিয়েছে। প্রথমবার জমি অধিগ্রহণের সময় কৃষকদের কোনো রশিদ দেয়া হয়নি বলেও তারা অভিযোগ করেন।

কোম্পানিটি স্থানীয় পরিবেশের জন্যও হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালি ও অন্যান্য বর্জ্যে স্থানীয় মান্দারতলী শাখা খাল ভরাট হয়ে গেছে; যার ফলে বর্ষাকালে দক্ষিণ কুতবার অনেকাংশ জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। ফলে চার শতাধিক পানচাষির জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। কোম্পানিটির জেটি পার্শ্ববর্তী দেহুলার খালের অর্ধেকের বেশি দখল করে রেখেছে। ফলে ঢাকাগামী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের কলোনির বাথরুম থেকে তিনটি পাইপ দিয়ে সব ধরনের বর্জ্য সরাসরি মান্দারতলী শাখা খালে ফেলা হয়। এসব বর্জ্যরে কারণে খালের পানি পুরোপুরি দূষিত হয়ে গেছে। জোয়ারের সময় দূষিত পানি নিচু জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে এনজিও ফোরাম অন এডিবি’র নির্বাহী পরিচালক রায়ান হাসান বলেন, ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ গত তিন বছর ধরে এআইআইবি’র কর্মকর্তাদের কাছে এসব সমস্যা তুলে ধরছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ দূর করার শেষ প্রচেষ্টা হলো এআইআইবি’র ‘জবাবদিহিতা নীতিমালা’র আওতায় অভিযোগ পেশ করা। ব্যাংকটির গত সাত বছরের ইতিহাসে এই প্রথম অভিযোগ পেশ করা হলো।

স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশে দেয়াল তুলে দেয়ার কারণে গরু-ছাগল চড়ানোর জন্য খালের চরে যওয়ার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীকে তথ্য না দেয়া, যথাযথ পরামর্শ না করা, ভুল ও বিভ্রান্তিকর অনুবাদ এবং পরামর্শ সভার বিবরণী না দেয়ারও অভিযোগ করেন তারা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০