Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 7:27 pm

ভ্যাটে একগুচ্ছ পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট আইনে বেশ পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু খাতে অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। ফলে অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করা পণ্য ও সেবায় ভ্যাট দিতে হবে। গতকাল জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এবং বিধিমালা, ২০১৬-এর প্রায়োগিক ও পদ্ধতিগত জটিলতা নিরসন, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ ও রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এর মধ্যে আইনে ‘উপকরণ’, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান’ ও বিধিমালায় ‘চুক্তিভিত্তিক উৎপাদক’-এর সংজ্ঞা সংশোধন ও অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ব্রাঞ্চ অফিস বা লিয়াজোঁ অফিসকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়ন করার প্রস্তাব করা হয়। ভ্যাট আইনে বর্তমানে কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের ক্ষেত্রে একাধিক উৎপাদনস্থল থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ব্যবসায়িক বাস্তবতা বিবেচনা করে দুই বা ততোধিক উৎপাদনস্থলের পরিবর্তে এক বা একাধিক উৎপাদনস্থলের ক্ষেত্রে কম্পিউটারাইজড অটোমেটেড পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষণের শর্তে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন গ্রহণ করার বিধান সন্নিবেশের প্রস্তাব করা হয়। আগাম মূল্য পরিশোধিত টেলিযোগাযোগ সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসকের পাশাপাশি সম্পূরক শুল্ক হ্রাস সংক্রান্ত সমন্বয়ের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়ন, একই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরবরাহের বিপরীতে রেয়াত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের বাধ্যবাধকতা তুলে দেয়া এবং ব্যাংক মাধ্যমের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করলেও রেয়াত গ্রহণ করা যাবে বলে নতুন বিধান সংযোজন, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রেয়াত গ্রহণের সুবিধার জন্য উপকরণ কর রেয়াত সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়ন, করদাতা কর্তৃক আংশিক রেয়াত গ্রহণের বিষয়টি অধিকতর স্পষ্ট করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়ন করার প্রস্তাব করা হয়।

অন্যদিকে পণ্য উৎপাদনের খরচ হ্রাসের লক্ষ্যে পণ্যের স্বত্বাধিকারী কর্তৃক আমদানিকৃত উপকরণ চুক্তিভিত্তিক উৎপাদকের কাছে সরাসরি সরবরাহের বিধান সংযোজন, উৎসে ভ্যাট কর্তনের ক্ষেত্রে সরবরাহকারী কর্তৃক হ্রাস-সংক্রান্ত সমন্বয় গ্রহণের সময়সীমা দুই কর মেয়াদ থেকে বৃদ্ধি করে চার কর মেয়াদ করা, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইস্যুকৃত ইনভয়েসকে চালানপত্র হিসেবে গণ্য করা, উৎসে কর্তনের বিধান সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সহজীকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ধারা ও বিধিমালাতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়ন, অনিবন্ধিত ব্যক্তি কর্তৃক ভুলবশত কোনো অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হলে তা ফেরত প্রদানের লক্ষ্যে আইনে নতুন ধারা সন্নিবেশকরণ, আন্তর্জাতিক দরপত্রের ক্ষেত্রে ঋণপত্রের পাশাপাশি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে সরবরাহকে প্রচ্ছন্ন রপ্তানি হিসেবে গণ্য করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়ন, বিলম্বে দাখিলপত্র পেশের ক্ষেত্রে কর মেয়াদ শেষ হওয়ার ন্যূনতম সাত দিন আগে অনুমোদন গ্রহণের পরিবর্তে কর মেয়াদ সমাপ্তির সাত দিনের মধ্যে অনুমতি গ্রহণের বিধান করা, কর নির্ধারণের বিষয়টি অধিকতর সহজবোধ্য করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নের প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য বা সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপনের শর্ত লঙ্ঘন করলে অব্যাহতি সুবিধা বাতিলের পরিবর্তে শুধু জরিমানা আরোপের বিধান সংযোজন, পদ্ধতিগত জটিলতা হ্রাস করার লক্ষ্যে মূল্য সংযোজন কর বিধিমালার আওতায় কতিপয় ফরমে সংশোধনী করা, ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অরগানাইজেশনের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম তফসিলের কিছু পণ্যের সামঞ্জস্যপূর্ণ নামকরণ কোডের সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আইনে শাস্তি ও জরিমানার বিধান অতিরিক্ত কঠোর করা হলে অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রায়োগিক জটিলতার সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়। সে কারণে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’-এ জরিমানা ও সুদের হার সহনীয় করার লক্ষ্যে কয়েকটি প্রস্তাব নেয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেÑনির্ধারিত তারিখের মধ্যে মূসক বা টার্নওভার কর দাখিলপত্র পেশ না করার ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ ‘১০ হাজার টাকা’ থেকে হ্রাস করে ‘৫ হাজার টাকা’ নির্ধারণ; ভ্যাট ফাঁকি, ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে আরোপিত জরিমানার পরিমাণ জড়িত রাজস্বের ‘সমপরিমাণ’-এর পরিবর্তে ‘অন্যূন অর্ধেক এবং অনূর্ধ্ব সমপরিমাণ’ করা; করদাতাদের অনিচ্ছাকৃত ভুলের ক্ষেত্রে জরিমানা আরোপ না করা এবং বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আবার চালু করার মধ্যবর্তী সময়ে দাখিলপত্র পেশ না করা হলে জরিমানা আরোপ না করার বিধান সংযোজন করা; আপিল কমিশনারেট, আপিলাত ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালতে আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে আরোপিত জরিমানা ব্যতিরেকে শুধু দাবীকৃত করের অংশবিশেষ জমা প্রদানের বিধান করা; আপিলাত ট্রাইব্যুনালে নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠান আপিল দায়ের করতে না পারলে মেয়াদ আরও ৬০ দিন বর্ধিত করার বিধান সন্নিবেশকরণ এবং বকেয়া মূসক আদায়ের ক্ষেত্রে সুদ আরোপের সময়সীমা সর্বোচ্চ ২৪ মাস করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসা সহজীকরণ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, সরবরাহ পর্যায়ে ব্যবসাভেদে উৎসে করের ভিন্ন ভিন্ন হার বিদ্যমান থাকার ফলে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবসায়ী করদাতাদের কার্যকর করহার অত্যধিক হয়ে থাকে। এ সমস্যা লাঘবের নিমিত্ত ট্রেডিং পণ্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কর্তনের হার সাত শতাংশের পরিবর্তে পাঁচ শতাংশ এবং সরকারি সরবরাহ ব্যতীত বই সরবরাহের ওপর উৎসে কর কর্তনের হার সাত শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে উৎপাদকদের কাছে কাঁচামাল সরবরাহের ওপর উৎসে কর কর্তনের হার সাত শতাংশ থেকে কমিয়ে চার শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।

বাজেটে কিছু খাতে অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করা হয়। ফলে এসব খাতে ভ্যাট দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছেÑশীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সার্ভিস ও প্রথম শ্রেণির রেলওয়ে সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকার এমএস প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ প্রতি ক্ষেত্রে টনপ্রতি ২০০ টাকা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কনক্রিট রেডিমিক্সের উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান মূসক অব্যাহতি প্রত্যাহার, ‘মেডিটেশন সেবা’র ওপর বিদ্যমান মূসক অব্যাহতি প্রত্যাহার এবং মোবাইল টেলিফোন সেটের ব্যবসায়ী পর্যায়ে বিদ্যমান পাঁচ শতাংশ মূসক অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। কভিড টেস্ট কিট, মাস্ক, স্যানিটাইজার ও করোনা সামগ্রীর উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।

দাম কমতে বাড়তে পারে যেসব পণ্যের

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করেছেন তাতে বিভিন্ন পণ্যের সম্পূরক শুল্ক, আমদানি শুল্ক অথবা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানো হয়েছে। এতে এসব পণ্য আমদানিতে ব্যয় কমতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদন ও বিক্রির ক্ষেত্রে করছাড় দেয়া হয়েছে। ফলে দাম কমতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন পণ্যের সম্পূরক শুল্ক, আমদানি শুল্ক অথবা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়ানো হয়েছে। এতে এসব পণ্য আমদানিতে ব্যয় বাড়তে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদন ও বিক্রির ক্ষেত্রে বাড়তি কর দিতে হবে। ফলে দাম বাড়তে পারে।

যেসব পণ্য বা সেবার দাম কমতে পারে

রেস্তোরাঁ: শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) ও নন-এসি রেস্তোরাঁর ওপর ভ্যাট হার যথাক্রমে ১০ শতাংশ ও পাঁচ শতাংশের পরিবর্তে উভয় ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে তিন তারকা বা তদূর্ধ্ব মানের হোটেলে অবস্থিত রেস্তোরাঁয় এ ছাড় নেই।

হুইল চেয়ার: শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বিশেষায়িত হুইল চেয়ার আমদানিতে বিদ্যমান সব ধরনের শুল্ককর বিলোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে হুইল চেয়ারের দাম কমতে পারে।

কাজু বাদাম: কাজু বাদামের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

মুড়ি চিনি: পণ্য দুটির ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

পোলট্রি গোখাদ্য: হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর খাবার তৈরির উপকরণে করছাড় দিয়েছে সরকার। এতে এসব পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমতে পারে।

রড: বিভিন্ন ধরনের এমএস প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ প্রতি ক্ষেত্রে টনপ্রতি ২০০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে ব্যবসায়ী পর্যায়ের ভ্যাট টনপ্রতি ৫০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

টাওয়েল: হ্যান্ড টাওয়েল/পেপার টাওয়েল/ক্লিনিক্যাল বেডশিটের উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

পয়ঃশোধনাগার: দেশের পরিবেশকে টেকসই ও দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে অনেক পয়ঃশোধনাগার (এসটিপি) স্থাপন করা হচ্ছে এবং দিন দিন এর চাহিদাও বাড়ছে বলে জানিয়ে এর আমদানি শুল্ক কমিয়ে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এত দিন আমদানি শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ।

কাঠের বাড়ি: কাঠের প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড ঘর আমদানিতে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

অন্যান্য: তরলী করা পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বাল্কে (একত্রে বিপুল পরিমাণে) বিক্রির উদ্দেশ্যে, বাল্কে কেনার ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ের ক্রয়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। সুতার ভ্যাট কমানো হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের পড়ার উপকরণ ব্রেইল মুদ্রণের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের কানে শোনার যন্ত্রে ব্যবহƒত ব্যাটারির ওপর প্রযোজ্য শুল্ক-কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

গমের আটা: গমের আটার ওপর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

দেশি মোবাইল ফোন ব্যাটারি, চার্জার ও ইন্টার?্যাক্টিভ ডিসপ্লে: তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি, চার্জার ও ইন্টারেকটিভ ডিসপ্লের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

ফ্রিজ: রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে অব্যাহতি প্রত্যাহার করে ভ্যাটের হার পাঁচ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এতে ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে। অবশ্য ফ্রিজ তৈরির উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানি এবং স্থানীয় ক্রয়ের ক্ষেত্রে করছাড় সুবিধা রয়েছে। তা ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

রেলের টিকিট: শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত/তাপানুকূল সার্ভিসের পাশাপাশি প্রথম শ্রেণির রেলওয়ে সেবার ওপর ১৫ শতাংশ মূসক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে টিকিটের দাম বাড়বে।

মোবাইল ফোন: মোবাইল ফোন সেটের ব্যবসায়ী পর্যায়ে বিদ্যমান পাঁচ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে ফোনের দাম বাড়তে পারে।

পনির: বাটার ও চিজ বা পনির পণ্য দুটি সমজাতীয় উল্লেখ করে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাটার আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান থাকলেও চিজ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক আরোপিত নেই। তাই বাটারের মতো চিজ আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

কফি: প্রক্রিয়াজাত ও রেডি টু কনজিউম কফি আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

ফোনের বিদেশি চার্জার: দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনে উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে আরও বিকশিত করার লক্ষ্যে বিদেশি চার্জারের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

দেশলাই: বর্তমানে দেশে গ্যাস লাইটার বা দেশলাই উৎপাদিত হচ্ছে। তাই দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার জন্য পণ্যটি আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই বিবেচনায় লাইটারের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র: বাসাবাড়িতে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত ওয়াটার পিউরিফায়ারের আমদানি শুল্ক এক শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

ক্যাশ রেজিস্টার: ব্যবসার ক্যাশ রেজিস্টার আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ। অন্যদিকে টিকিট ক্যালকুলেটিং যন্ত্রের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ। মেশিন দুটি প্রায় একই ধরনের হওয়ায় শুল্কহার সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। তাই ক্যাশ রেজিস্টারের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বিদেশি পাখি: বর্তমানে দেশে পাখি আমদানি হচ্ছে। ওই পণ্যের ওপর পাঁচ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রযোজ্য রয়েছে। পাখিগুলো বিলাসবহুল বিধায় আলোচ্য ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ল্যাপটপ: ল্যাপটপ কম্পিউটার আমদানিতে মূসক অব্যাহতি রয়েছে। ফলে দেশীয় কম্পিউটার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই ল্যাপটপ কম্পিউটার আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পণ্যটি আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মোট করভার হবে ৩১ শতাংশ।

অন্যান্য: আরও কিছু পণ্যে কর বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ফলে ওইসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এর মধ্য রয়েছে প্রিন্টিং প্লেট, লিফট, সোলার প্যানেল, মিটার, কাগজের কাপপ্লেট, জিআই ফিটিংস, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল, কম্পিউটার প্রিন্টার, ল্যাপটপ, টোনার, চেয়ারের পণ্য ইত্যাদি।