ভ্যাট আইন নিয়ে শেষ সময়ের জটিলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বাকি রয়েছে আর মাত্র ১০৫ দিন। এরই মধ্যে এর জন্য কাউন্টডাউন শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে আইনের নানা বিষয়ে এখনও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি কর্তৃপক্ষের। শেষ সময়ে এ নিয়ে চলছে জটিলতা।

গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, ঢাকা দোকান মালিক সমিতি, প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সভাপতি ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ ব্যবসাবান্ধব ও সেবামূলক আইন। আইনটি বাস্তবায়ন করা জারুরি। কারণ দেশের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানো প্রয়োজন। জাতীয় আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ আইনটিকে যুগোপযোগী করা হয়েছে। তবুও কিছু ব্যবসায়ীর আপত্তি রয়েছে, এ আইনের নানা বিষয়ে।’

‘ব্যবসায়ীদের ওপর বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না’ বলে উল্লেখ করে সংসদীয় কমিটির সভাপতি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনা করে আইনটি কার্যকর করতে হবে।’ এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেরও মনমানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ভ্যাট আইন সংশোধন করে ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন পাস করা হয়। ওই আইন আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসাবে আর ১০৫ দিন বাকি রয়েছে আইনটি বাস্তবায়নে। কিন্তু আইনের বেশ কিছু বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানিয়ে আসছেন। এর আগে গত বছর জুলাই থেকে আইনটি কার্যকরের কথা ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে তা এক বছর পেছানো হয়।

এ বছরের প্রথম থেকেই এ আইনটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে এ আইন অনুসারে বিভিন্ন ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের কথা রয়েছে, যার বিরোধিতা করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা কিছু কিছু খাতে আগের মতো প্যাকেজ ভ্যাট অব্যাহত রাখাসহ নানা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গত বছর আইন বাস্তবায়ন না করলেও প্যাকেজ ভ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। অবশ্য ২০১৪ সালে এনবিআর ও এফবিসিসিআইয়ের মধ্যে একটি যৌথ কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি সাতটি নীতিগত সুপারিশ তৈরি করে। ওই সুপারিশের আলোকে ব্যবসায়ীরা বার্ষিক টার্নওভার করের ঊর্ধ্বসীমা ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকা প্রস্তাব করে। এছাড়া কিছু কিছু খাতে প্যাকেজ ভ্যাট অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়। রুটি, বিস্কুট, পিভিসি পাইপ, কৃষি যন্ত্রপাতি, ক্ষুদ্র প্লাস্টিক ও কম দামের পাদুকা শিল্পকে আইনের ২৬ ধারার আলোকে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবিও করা হয়।

এ যৌথ ব্যবস্থায় কোনো অগ্রগতি হয়নি বলেই সংশ্লিষ্টরা জানান। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইর প্রথম সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন বলেন, ‘আলোচনা, পর্যালোচনা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে নীতিগতভাবে সম্মত হওয়ার পরও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীরবতার কারণে এখনও কোনো ধরনের প্রতিফলন দেখা যায়নি। ফলে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে এনবিআরের আস্থাহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এফবিসিসিআইর চলমান পার্টনারশিপ ব্যবস্থা কার্যকর ও অর্থবহ করার দুরূহ হয়ে পড়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’

এদিকে সম্প্রতি এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের নেতারা ১৫ শতাংশের পরিবর্তে সাত শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন, যা সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অর্থমন্ত্রীর বরাত দিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, তিনি এটি চাপিয়ে দেবেন না। কমিটির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, আগামী বাজেটের আগেই বিষয়টি নিয়ে সমঝোতায় আসতে হবে। তবে আইনটিকে আরও বাস্তবমুখী ও জটিলতা মুক্ত করার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও তাদের অবস্থান বদলাতে হবে বলে মত দেন তিনি। ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাতে এখনও বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান কম বলে তিনি উল্লেখ করেন।’

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০