নিজস্ব প্রতিবেদক: ইএফডি মেশিনের মাধ্যমে ভ্যাট আদায় হবে। সেই মেশিন বসানো ও তদারকি করবে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়ীকে বিনা খরচে সেই মেশিন সরবরাহ করা হবে। তবে আদায় করা ১০০ টাকা ভ্যাটের ৫২ পয়সা পাবে মেশিন বসানো ও তদারকি করা সেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বলতে গেলে আউটসোর্সিং বা সহযোগীর মাধ্যমে এই ভ্যাট আদায় হবে। দেশে ভ্যাট ব্যবস্থা চালুর ৩১ বছর (১৯৯১ সালে দেশে ভ্যাট ব্যবস্থা চালু হয়) পর এনবিআর ভ্যাট আদায়ে সহযোগীর সহযোগিতা নেয়া শুরু করে।
ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট আদায়ে এনবিআরের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইএফডি মেশিন বসাবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড। গতকাল মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টিপারপাস হলে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফডিএমএস) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। অটোমেশনের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ে শৃঙ্খলা আসবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি এনবিআরকে উদ্দেশ করে বলেন, রাজস্ব আহরণে রাজহাঁসের পালক তুলবেন, কিন্তু হাঁস যেন ব্যথা বা কষ্ট না পায়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পুরো বিশ্ব এখন অটোমেশনের দিকে ঝুঁকেছে। ভারতেও সরকার ও ব্যক্তি খাতের যৌথ উদ্যোগে ভ্যাট আদায়ে জিএসটি নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা প্রতিটি লেনদেন অনলাইনে করতে পারেন। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড সব দেশেই ভ্যাট আদায়ে অটোমেশন
রয়েছে। আমাদের ভ্যাট ব্যবস্থাপনায় অটোমেশনের মধ্য দিয়ে ভ্যাট আহরণে আরও শৃঙ্খলা বিধান হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করতে গিয়ে যেন কারও ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে, তিনি সেদিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানান। রাজস্ব আহরণ কীভাবে করতে হবে, তার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের একটি গল্প বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই যখন ওই দেশের প্রধানমন্ত্রীও, সেই সময় ওই দেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন জন ব্যাপটিস্ট কোলবার্ট। তিনি একটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন, আপনাদের সবাইকে রাজস্ব আহরণ করতে হবে। রাজস্ব আহরণ (এভাবে) করবেন যেন রাজহাঁস থেকে প্লাক করবেন (পালক তুলবেন)। কিন্তু লক্ষ রাখবেন, রাজহাঁসটি যেন কোনোভাবে ব্যথা না পায়, কষ্ট না পায়।
দেশের রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমেও সেই নীতি অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে, আমরাও ট্যাক্স অর্জন করব, ট্যাক্স আদায় করব। কিন্তু যিনি ট্যাক্স দিচ্ছেন, তার ওপরে যেন প্রেশার না আসে। শুধু একজন দেবে অন্যরা দেবে না… আমরা যেটা বারবার বলে আসছি যে, নেটটা (আওতা) বড় করতে হবে। এসময় অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, এটা হাই টাইম আমাদের জন্য। ম্যানুয়ালি করতে গেলে যে প্রতিবন্ধকতা থাকে, সেই প্রতিবন্ধকতা এখন থাকবে না।
মন্ত্রী স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রাজস্ব আহরণ বড় আকারে উদ্বোধন করার প্রসঙ্গে বলেন, আপনারা শুরু করে দেন। শুরু করলে এটা রেলওয়ের মতো। রেলওয়ের বগি যদি একবার রাস্তার ওপরে উঠে যায়, তাহলে আর পেছনে থাকে না, সামনেই যায়। আমরা এখন যে জায়গায় এসেছি, ইনশাআল্লাহ আমরাও আর পেছনে যাব না। ২০৪১-এর স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতে হবে। রাজস্ব আদায় ধর্মীয় দায়িত্বের মতো বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্মীয় দায়িত্ব এই রকম যে, মানুষের জন্য কাজ করো, সমাজের জন্য কাজ করো। সমাজের প্রত্যেক মানুষকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাও। আমি মনে করি এনবিআরের চেয়ারম্যান একজন সৎ মানুষ। তাকে আপনারা সহযোগিতা করবেন।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, হয়রানি থেকে রক্ষা পাই এমন নিশ্চয়তা পেতে হবে। অটোমেশনের বিকল্প নেই। ইএফডিএমএস ব্যবসাবান্ধব হবে আশা করছি। অটোমেশনের মাধ্যমে যদি দেশ এগিয়ে যায় আমরা উপকৃত হবো। তবে ব্যবসায়ীদের যেন হয়রানি না করা হয়। ইএফডি সুন্দর পরিকল্পনামাফিক, এতে সবাই উপকৃত হবে। ভ্যাটের পরিধি বাড়ানো দরকার। এখন যারা দিচ্ছে তারা সবসময় দিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মানসম্মানের সঙ্গে ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে চায়। তারা হয়রানির শিকার হতে চায় না।
অনুষ্ঠানে অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) ড. মইনুল খান, জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ জালাল উদ্দিন বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর চুক্তি অনুযায়ী, বিনা খরচে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানে ইএফডি মেশিন বসাবে জেনেক্স। বিনিময়ে প্রতি ১০০ টাকা ভ্যাটে ৫২ পয়সা কমিশন হিসেবে পাবে। শর্ত অনুযায়ী, জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডকে প্রতিটি জোনে প্রথম বছরে ন্যূনতম ২০ হাজার ইএফডি-এসডিসি সরবরাহ ও স্থাপন করতে হবে। চুক্তির পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিটি জোনে মোট এক লাখ করে তিনটি জোনে পর্যায়ক্রমে তিন লাখ ইএফডি এবং সেলস ডেটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) সরবরাহ ও স্থাপন করতে হবে।