Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 8:55 pm

 ‘ভ্যাট আদায় সন্তোষজনক’

নিজস্ব প্রতিবেদক: অক্টোবর মাসে ভ্যাট আদায় প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর অক্টোবর পর্যন্ত (জুলাই-অক্টোবর) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ পরিস্থিতির মধ্যেও ভ্যাট আদায় সন্তোষজনক। ভ্যাট খাতের এ প্রবৃদ্ধি বড় ধরনের সাফল্য বলে মনে করেন এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) ড. মইনুল খান। গতকাল এনবিআর সম্মেলন কক্ষে ইএফডি লটারির ড্র অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এনবিআর ভ্যাট আহরণে ইতিবাচক সূচক সৃষ্টি করছে। অক্টোবর মাসে আগের বছরের একই মাস থেকে ১৭ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অর্থাৎ অক্টোবর মাসে অতিরিক্ত ১ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় বেশি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুন-অক্টোবর) আনুপাতিক লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করেছে ভ্যাট অনুবিভাগ। টাকার অঙ্গে পূর্ববর্তী চার মাসের তুলনায় ৪ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে। চলমান বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনীতির নানামুখী বাস্তবতায় এই অর্জন সরকার ও দেশের জন্য আশাব্যঞ্জক। এনবিআরের চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব এবং মাঠ পর্যায়ের ভ্যাট কর্মকর্তাদের নিরলস ও আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। আগামী মাসগুলোতেও এই ধারা বজায় থাকবে বলে ভ্যাট বিভাগ মনে করে।

ইএফডি বিষয়ে মইনুল খান বলেন, আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ে ইতোমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। ভ্যাট আদায়ে বর্তমান যে পদ্ধতি, তা ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা দেখেছি, যারা আগে অল্প পরিমাণে ভ্যাট দিত ইএফডির প্রচলন হওয়ার ফলে তাদের ভ্যাটের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ ভ্যাট হিসেবে ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার, পাঁচ হাজার টাকা এ রকম করে ভ্যাট দিত। সেসব প্রতিষ্ঠান এখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০ হাজার বা এক লাখ বা তার বেশি করে ভ্যাট দিচ্ছে। আমরা দেখেছি, যখন ইএফডি থেকে ইনভয়েস ইস্যু করা হয়, সেটা সরকারি কোষাগারে জমাদানের একটা নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, রিটেইল সেক্টরের সংখ্যা এত ব্যাপক যে, ম্যানুয়ালি পদ্ধতিতে মনিটরিং ও এনফার্স করা সম্ভব নয়। দোকান মালিক যে মোট মূল্য ঘোষণা করেন, তার ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। প্রত্যেকটি দোকানে আমরা ইএফডি চালু করতে পারলে, সেই ইএফডি বলে দেবে মোট বিক্রির পরিমাণ কত এবং প্রযোজ্য ভ্যাট কত। সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছি। ১০ হাজার মেশিন বসাতে আমরা কার্যাদেশ দিয়েছি। তবে দুই বছরের অধিক সময়েও তারা ১০ হাজার মেশিন বসাতে পারেনি। ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট প্রথম ইএফডি মেশিন বসানো উদ্বোধন করা হয়। এই পর্যন্ত ৮ হাজার ৩৯৯টি মেশিন বসানো হয়েছে। তাদের সক্ষমতায় আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। যার ফলে আমরা আউটসোসিংয়ের বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছি।

মইনুল খান বলেন, আমরা ৫ বছরের মধ্যে ৩ লাখ মেশিন বসাব। প্রথম বছর ৬০ হাজার বসানো হবে। ভ্যাট নিবন্ধন চার লাখ অতিক্রম করেছে। কিন্তু মেশিন বসাতে হবে তিন লাখ। এখনও অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। বিশেষ জরিপের মাধ্যমে তাদের আমরা ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসার কার্যক্রম চলছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমে ভ্যাট নিবন্ধন ছিল তিন লাখ। চার মাসে বিশেষ গাইড দিয়ে নিবন্ধন ৪ লাখে নিতে পেরেছি। অর্থাৎ চার মাসে নিবন্ধন বেড়েছে ৩০ হাজারের বেশি। আমরা বিশ্বাস করি, এখনও আনাচে-কানাচে অনেক ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা ভ্যাট নেটের আওতায় আসেনি। মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট কর্মকর্তারা অত্যন্ত সচেতন। ১০ ডিসেম্বর ভ্যাট সপ্তাহ। ভ্যাট সপ্তাহের মধ্যে কমিশনারেটগুলো তাদের আওতাধীন বিশেষ জরিপ করে ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নেটের আওতায় নিয়ে আসবে। সে জন্য কমিশনারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে মূল্যায়ন করবে যে, কে কত ভ্যাট নিবন্ধন বাড়াতে পেরেছেন এবং কমিশনাররা নিশ্চয়তা দেবেন যে, তাদের অধীনে কোনো ভ্যাটযোগ্য অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান নেই।

নতুন ভ্যাট আদায়ের ব্যবস্থায় নতুন উপাদান যোগ হচ্ছেÑজানিয়ে মইনুল খান বলেন, এখন ইএফডি মেশিনে ভ্যাট আদায়ে যে ব্যবস্থা, সেখানে ইনভয়েস ইস্যু করার ক্ষেত্রে ভেন্ডারের কোনো দায় নেই। আমরা এখন যে চুক্তি করেছি তাতে এই দায় ওই প্রতিষ্ঠানের নিজের। ইএফডিতে যত বেশি ইনভয়েস ইস্যু করা যাবে, তত বেশি চুক্তি করা প্রতিষ্ঠানের লাভ হবে। ঢাকার দুটি ও চট্টগ্রামের একটি জোনে মেশিন বসানো হবে। এক লাখ টাকার মধ্যে ৫২০ ও ৫৩০ টাকা করে কমিশন পাবেন। ক্রেতা যেন ইনভয়েস বুঝে নেন এবং বিক্রেতা যেন ইনভয়েস ইস্যু করেন এজন্য ভেন্ডারের একটি বিশেষ তদারকি থাকবে।