নিজস্ব প্রতিবেদক: ভ্যাটের মামলার আপিল দায়ের কর অর্ধেক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে ব্যবসার খরচ কমবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। আগে যে দাবি করা করের ২০ শতাংশ জমা দিতে হতো, আগামী করবর্ষে তা ১০ শতাংশ হারে দিতে হবে। তবে জরিমানার ওপর কোনো কর জমা দিতে হবে না। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণে আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও আপিল কমিশনারেটে আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে তর্কিত আদেশে উল্লিখিত দাবি করা করের ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তবে জরিমানা ব্যতীত এই কর পরিশোধ করতে হবে। এজন্য এ-সংক্রান্ত আইনের সংশোধনের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
এনবিআর সূত্রমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর বাজেটে আপিল দায়েরের খরচ ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। সেজন্য ভ্যাট আইনের ১২১ ও ১২২ ধারা সংশোধন করা হয়। মূলত অযৌক্তিক মূসক মামলা দায়েরের প্রবণতা হ্রাসের লক্ষ্যে দাবিকৃত করের ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ অর্থ পরিশোধের বিধান করা হয়।
ভ্যাট আইনের ১২১ ধারায় বলা রয়েছে, ভ্যাট কর্মকর্তা ব্যতীত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তর্কিত আদেশের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে দাবিকৃত করের ১০ শতাংশ জমা দিয়ে আপিল কমিশনারের কাছে আপিল করতে পারবেন। তবে কমিশনার চাইলে আরও ৬০ দিন সময় দিতে পারবেন। একইভাবে ১২২ ধারার অধীনে আপিলাত ট্রাইব্যুনালেও তর্কিত করের ১০ শতাংশ দিয়ে আবেদনের সুযোগ রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার নিচের কোনো কর্মকর্তার আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে করদাতা আপিল কমিশনারের কাছে আবেদন করতে পারেন। আপিল কমিশনারের আদেশে সন্তুষ্ট না হলে আপিতাল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা যায়। এ ট্রাইব্যুনালেও ন্যায়বিচার না পেলে উচ্চ আদালতে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রেও আইনের ১২৪ ধারা ১০ শতাংশ জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ করদাতা সব ধাপে আবেদন করলে তাকে নতুন করে তর্কিত ভ্যাটের ৫০ শতাংশ জমা দিতে হবে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, আপিলের হার কম হওয়ায় অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সময়মতো রাজস্ব পরিশোধ না করতে অহেতুক আইনের আশ্রয় নেয়। আপিল করলে এসব মামলা শেষ হতে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়। ফলে সরকারের ওই রাজস্ব আটকে রাখা যায়। কিছু ব্যবসায়ী রয়েছেন, তারা সব সময়ই এই কাজটি করে থাকেন। দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায় এনবিআর মামলায় জয়লাভ করলেও শুধু ওই তর্কিত কর আদায় করা হয়। কিন্তু অহেতুক সময়ক্ষেপণ করে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করার কারণে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার প্রচলিত আইন নেই। মামলার পরিবর্তে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) কার্যক্রমের মাধ্যমে তর্কিত বিষয় সুরাহা করতে ব্যবসায়ীদের সব সময় উৎসাহিত করছে এনবিআর। বর্তমানে আপিলাত ট্রাইব্যুনালের আওতায় আয়কর খাতের জন্য সাতটি বেঞ্চ এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও শুল্ক খাতের জন্য তিনটি বেঞ্চ রয়েছে।
অন্যদিকে কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার ১০ কোটি টাকার অধিক হলে সেই ব্যক্তি বা কোম্পানিকে উৎসে মূসক কর্তনকারী সত্তা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট
বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভার ১০ কোটি টাকার অধিক, সেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসে মূসক কর্তনকারী সত্তা হিসেবে নির্ধারণ করা হচ্ছে। সেজন্য আইনের ধারা ২(২১)-এ প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়।’
উৎসে মূসক কর্তনকারীর বিষয়ে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে ছোট-বড় অনেক কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার ১০ কোটি টাকার বেশি। প্রতিষ্ঠানগুলো উৎসে কর কর্তন করে না। আইনি দুর্বলতার কারণে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে উৎসে কর আদায় সম্ভব হয় না। আইনে সংশোধনী আনার ফলে এসব প্রতিষ্ঠান এখন উৎসে কর্তন করতে বাধ্য হবে।