রহমত রহমান: কাস্টমস হাউসে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্তের ঘোড়াদৌঁড়ে পিছিয়ে নেই ভ্যাট কমিশনারেটসমূহ। কাস্টমস হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেটে এখন পর্যন্ত ৯৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে এলটিইউ ও নয়টি কমিশনারেটে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ জন। তবে খুলনা ও রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটে এখনো কেউ আক্রান্ত হয়নি।
আর কমিশনারেটসমূহের মধ্যে আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে সিলেট ভ্যাট কমিশনারেট। ৩৬ জনের ১২ জনই সিলেট ভ্যাট কমিশনারেটে। এ কমিশনারেটে থাকা জনবলের ৩০ শতাংশের বেশি আক্রান্ত হয়ে গেছেন। নমুনা দেওয়া হয়েছে ১২ জনের। সংস্পর্শে আসা কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এছাড়া প্রতিদিনই আক্রান্ত বাড়ছে। ফলে এ কমিশনারেটের ভ্যাট আহরণ হুমকির মুখে পড়ছে।
## এলটিইউ ও নয় ভ্যাট কমিশনারেটে আক্রান্ত ৩৬, কাস্টমস ও ভ্যাটে মোট আক্রান্ত ৯৯ জন
## খুলনা ও রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটে আক্রান্ত হয়নি
## সিলেট ভ্যাট কমিশনারেটে আক্রান্ত বেড়ে ১২, নমুনা দিয়েছে ১২ জন
কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সূত্রমতে, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে শুক্রবার (১৯ জুন) পর্যন্ত ৯৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা মারা গেছেন। ২৩ জনের নমুনা নেগেটিভ এসেছে। তবে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। আক্রান্তদের মধ্যে তিনজন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ও চারজন সহকারী কমিশনার (এসি)।

সূত্র আরো জানায়, ১০টিতে এখন পর্যন্ত ৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। ১০টি কমিশনারেটের মধ্যে সিলেট ভ্যাট কমিশনারেটে ১২ জন। ১২ জনের মধ্যে একজন রাজস্ব কর্মকর্তা, সাতজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, দুইজন অফিস সহকারী ও দুইজন সিপাই।
সিলেট ভ্যাট কমিশসারেট সূত্র জানায়, ১২ জনের মধ্যে শুক্রবার (১৯ জুন) নতুন করে চারজনের নমুনা পজেটিভ এসেছে। এর মধ্যে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নিজামুল হাসান ও অনিক দে, অফিস সহকারী স্বপন কুমার তালুকদার ও আফজাল হোসেন। একইদিন নতুন করে আরো ১২ জনের নমুনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে করোনার উপসর্গ থাকায় কয়েকজনের পজেটিভ আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অপরদিকে, ১২ জনের মধ্যে আগে ৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজস্ব কর্মকর্তা রুহুল আমিন, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা প্রদীপ রঞ্জন বৈষ্ণব, মো. তারিকুজ্জামান, মো. খান বাহাদুর, রাজন আহমেদ, মো. হায়াতুজ্জামান মোল্লা, সিপাই সিদ্দিকুর রহমান ও সুজন মিয়া। এদের মধ্যে তিনজনের দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে। তৃতীয়বার নেগেটিভ আসলে তারা পুরোপুরি করোনামুক্ত হবে। আক্রান্তদের সবাই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ভ্যাট বিভাগের সূত্রমতে, সিলেট ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা, তিনজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও একজন সিপাই আক্রান্ত। এছাড়া ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে দুইজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও দুইজন সিপাই। ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটে তিনজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেটে দুইজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটে একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও একজন সিপাই। রংপুর ভ্যাট কমিশনারেটে একজন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি)। বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ), ভ্যাট একজন রাজস্ব কর্মকর্তা। যশোর ভ্যাট কমিশনারেটে একজন রাজস্ব কর্মকর্তা, একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও একজন সিপাই। কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটে একজন সিপাই করোনা আক্রান্ত।

সিলেট ভ্যাট কমিশনারেট সূত্র জানায়, এ কমিশনারেটের মূলত চারটি জেলা নিয়ে চারটি বিভাগ। এর মধ্যে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ। সিলেট ও হবিগঞ্জ বিভাগ থেকে এ কমিশনারেটের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ আহরণ হয়। হবিগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি কল-কারখানা রয়েছে। যার কারণে এখান থেকে রাজস্ব বেশি আহরণ হয়। আর সিলেট শহরে হোটেল, শপিংমল, সরকারি অফিস থাকায় এখানেও রাজস্ব বেশি আহরণ হয়। আর এ দুইটি বিভাগীয় কার্যালয়ের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়ে গেছেন। এমনও হয়েছে বিভাগীয় কার্যালয়ের দু’একজন বাদে সবাই করোনা আক্রান্ত। আবার আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন অনেকেই।
কমিশনারেট সূত্র জানায়, এ কমিশনারেটের অধীনে ১৩টি এলসি স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশনে বেশিরভাগ আমদানি হয় কয়লা, পাথর, ফল ও কিছু কৃষ্টি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। আর রপ্তানি হয় ওষধ, কিছু খাদ্য পণ্য, সিরামিক পণ্য, স্যানিটারিওয়্যার, প্লাস্টিক পণ্য ইত্যাদি। আমদানি-রপ্তানিকারক আর স্টেকহোল্ডারদের জনসমাগমের কারণে এসব শুল্ক স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনার ঝুঁকিতে রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, এ কমিশনারেটে জনবল সংকট প্রকট। এর মধ্যে বর্তমানে থাকা জনবলের মধ্যে ৩০ শতাংশ করোনা আক্রান্ত হয়ে গেছে। প্রতিটি বিভাগীয় কার্যালয়ে চারজন করে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা থাকে। এর মধ্যে দু’এক ছাড়া সবাই আক্রান্ত। আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে।

সূত্র জানায়, লকডাউনের প্রথম থেকে ভ্যাট অফিস বন্ধ থাকলেও সচল ছিল শুল্ক স্টেশন। পরে সীমিত পরিসরে সব অফিস খোলা হয়। অর্থবছরের শেষ দুই মাসে বেশি রাজস্ব আহরণ হয়। লকডাউন তুলে নেওয়ার পর মিল কারখানা মোটামুটি চালু হয়ে যায়। ফলে রাজস্ব আহরণ বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনা আক্রান্ত হতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে সিলেট ভ্যাট কমিশনারেটের যুগ্ম কমিশনার মিনহাজ উদ্দিন পাহলোয়ান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ভ্যাট কমিশনারেটগুলোর মধ্যে সিলেটে করোনা আক্রান্তের হার অনেক বেশি। ছোট্ট এই কমিশনারেটে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এখন পর্যন্ত ১২ জন আক্রান্ত। বিষয়টি খুব আতঙ্ক এবং উদ্বেগের। আজও একজন এসি তার পরিবারের সদস্যসহ ৫ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কমিশনার স্যার নিজে আক্রান্তদের প্রত্যেককে টেলিফোন করে খবর নিচ্ছেন এবং পালনীয় স্বাস্থ্য নির্দেশনা প্রদান করছেন। এছাড়া কমিশনার হুমায়ুন স্যারের পরামর্শ তারা ফলো করছেন। আমরাও নিয়মিতভাবে তাদের খোঁজ-খবর রাখছি এবং সব ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। কিছুটা আশার কথা যে, এদের সবাই নিজ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সবাই মোটামুটি স্ট্যাবল আছেন।’
###