Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:11 am

ভ্যাট ছাড়াই বিদেশি পণ্য বিক্রি করে আরাজ, ব্যাংক হিসাব তলব

## একই ধরনের ১৬টি অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট গোয়েন্দার নজরদারি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়াই অনলাইনে পণ্য বিক্রি করছে অনলাইন শপ ‘আরাজ’। তাও বিদেশি পণ্য, যা আমদানি হয় ব্যাগেজ ও পার্সেলে। অবৈধভাবে আমদানি করা পণ্য বিক্রি হচ্ছে আবাসিক ভবনে। নিবন্ধন ও ভ্যাট পরিশোধ ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠান অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করে আসছে। এর ফলে দেশিয় পণ্য বিক্রিতে প্রভাব পড়ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন ব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অভিযানে এ তথ্য উঠে এসেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব তলব করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহারে ব্যবসা করা একই ধরনের ১৬টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য পেয়ে নজরদারি করছে ভ্যাট গোয়েন্দারা। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ভ্যাট গোয়েন্দার দল রাজধানীর গুলশানের আবাসিক ফ্ল্যাটে অবস্থিত বিদেশি পণ্যের অনলাইন ব্যবসা ‘আরাজ’ এ  অভিযান চালিয়েছেন। এতে ভ্যাট আইন পরিপালন না করে ব্যবসা পরিচালনা করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভ্যাট গোয়েন্দার অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়াই রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত আরাজ অনলাইনে বিদেশি পণ্যের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। স্থানীয় গুলশান ভ্যাট সার্কেলে এই অনলাইন ব্যবসার ভ্যাট জমার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনচ্ছুক একজন ব্যক্তির সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগের ভিত্তিতে ভ্যাট গোয়েন্দার দল রোববার (২৭ ডিসেম্বর) অভিযান পরিচালনা করেন। সংস্থার উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার এতে নেতৃত্ব দেন। প্রতিষ্ঠানটি হলো-মেসার্স আরাজ ট্রেডিং, ঠিকানা-হাউস-১২, রোড-৩০, গুলশান-১, ঢাকা। এর মালিকের নাম সাজ্জাদ আলী শরীফ।

অভিযোগকারী ওই ব্যক্তি জানান, ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে কতিপয় ব্যবসায়ী অনলাইনে পণ্য বিক্রি করায় শো-রুমের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার পরিবেশ ক্ষুন্ন হচ্ছে। অভিযানে ওই আবাসিক ঠিকানায় গোয়েন্দারা তাদের ভ্যাট নিবন্ধন দেখতে পায়নি। সংশ্লিষ্ট ভ্যাট সার্কেলে যাচাই করে দেখা যায়, ওই সার্কেলে বিগত মাসগুলোতে প্রতিষ্ঠানটি কোন রিটার্ন জমা দেয়নি।

প্রতিষ্ঠানটি বিগত তিনবছর ধরে অনলাইনে অলংকার, মহিলাদের পোশাক ও অন্যান্য পণ্যের ব্যবসা পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এই অনলাইন ব্যবসার উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। অভিজাত এলাকার বাসায় তারা দীর্ঘদিন ধরে দামি ও এক্সক্লুসিভ বিদেশি পণ্য বিক্রি করছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, আরাজ এর অধিকাংশ পণ্যই পাকিস্তানের তৈরি। ব্যাগেজ ও পার্সেলে এসব পণ্য এনে বাসায় বসে তারা অনলাইনে বিক্রি করছে। তবে ভ্যাট আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন না নিয়ে এবং কোন মাসিক রিটার্ন জমা না দিয়ে এই ব্যবসা পরিচালনা করা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। বিদেশ থেকে আনীত এসব পণ্যের তারা যথাযথ শুল্ককর দিয়েছে কিনা-তা খতিয়ে দেখবে ভ্যাট গোয়েন্দার দল।

অভিযানে গোয়েন্দারা আরাজ এর প্রাঙ্গন থেকে স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রির দলিলাদি জব্দ করেছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি দুইটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির লেনদেন সম্পন্ন করছে। ইতোমধ্যে ভ্যাট গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট ওই দুইটি ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। এই হিসাব আমলে নিয়ে পরবর্তীতে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এ জাতীয় আরো অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ব্যবসা করছে; যারা ভ্যাটের আওতায় নেই। এ পর্যন্ত একই ধরনের ১৬টি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দারা। ভ্যাট আইন অনুসারে এসব প্রতিষ্ঠানর বিরুদ্ধে ভ্যাট গোয়েন্দা কঠোর পদক্ষেপ নিবে। এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আরো তথ্য সংগ্রহ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ড. মইনুল খান।

###