Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 8:15 pm

ভ্যাট ফাঁকিতে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি

রহমত রহমান: দেশের অন্যতম বেসরকারি ইউনিভার্সিটির মধ্যে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির (ইইউ) বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের মাধ্যমে কৌশলে বিপুল অঙ্কের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে এ ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিপুল অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। ফাঁকিকৃত ভ্যাট পরিশোধে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিকে দাবিনামা জারি করা হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এনবিআরের আওতাধীন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ) ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি তথ্য গোপন করে কৌশলে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পায় এনবিআর। প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে উৎসে ভ্যাট দিচ্ছে কি না, তা নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিতে অনুরোধ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল করে। এসব নিরীক্ষা প্রতিবেদন যাচাই করে ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইউনিভার্সিটির কেনাকাটা, বিজ্ঞাপন, মুদ্রণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন ব্যয়ের ওপর উৎসে ভ্যাট সঠিকভাবে পরিশোধ করেনি। এছাড়া স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাটও সঠিকভাবে পরিশোধ করেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন ব্যয় বা সেবা ক্রয়ের ওপর ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬০ লাখ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ২৩ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টাকাসহ মোট এক কোটি ৪২ লাখ টাকার উৎসে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভ্যাট এখনও হিসাব করা হয়নি। চার বছরে ইউনিভার্সিটি সেবা ক্রয় বা ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের উৎসে ভ্যাট পরিশোধ করেনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইউনিভার্সিটি স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর সঠিকভাবে ভ্যাট পরিশোধ করেনি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর প্রায় ১৬ লাখ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রায় ৪১ লাখ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪৩ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৫৯ লাখ টাকাসহ মোট প্রায় দুই কোটি সাড়ে তিন লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ব্যয় ও স্থান-স্থাপনা ভাড়ার ওপর ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি প্রায় তিন কোটি ৪৫ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ইউনিভার্সিটির ব্যয় ও স্থান-স্থাপনা ভাড়ার ওপর দুই শতাংশ সুদ প্রায় দুই কোটি ৫২ লাখ টাকা। সুদসহ প্রতিষ্ঠানটি প্রায় পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ফাঁকিকৃত ভ্যাট পরিশোধে গত ৩১ জুলাই ভ্যাট দক্ষিণ কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমানের সই করা প্রাথমিক দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়। নোটিসে এ ভ্যাট পরিশোধ ও কারণ দর্শানোর জন্য ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে ভ্যাট দক্ষিণের এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, প্রায় ছয় কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। আরও কোনো ফাঁকি আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. আমিনুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা এখনও চিঠি পাইনি। ফাঁকি দিয়ে থাকলে টাকা দিয়ে দেব। আমরা তো মানুষ গড়ার কাজ করি। ফাঁকি দেব কেন?
উল্লেখ্য, কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি (ইইউ)। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি যোগ্য ও আধুনিক গ্র্যাজুয়েট তৈরি করে যাচ্ছে। সে লক্ষ্যে মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে শিক্ষা ঋণ, স্কলারশিপ, ওয়েভার। এছাড়া আশুলিয়ায় প্রায় ২০ বিঘা জমির ওপর অত্যাধুনিক স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ শেষ পর্যায়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যান খন্দকার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক।