রহমত রহমান: পুঁজিবাজারে বিমা খাতের তালিকাভুক্ত কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি পাঁচটি খাতে এ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। ভ্যাট পরিশোধে কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সকে দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ) একটি ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটি কৌশল ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পায় এনবিআর। এরই অংশ হিসেবে মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির দাখিলপত্র ও কাগজপত্র তলব করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদের নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির চার বছরে প্রায় ছয় কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উঠে আসে।
নিরীক্ষায় পাঁচটি খাতে এ ফাঁকি উঠে আসে। এর মধ্যে এজেন্সি কমিশন হতে প্রায় এক কোটি ৯৪ লাখ টাকা, রি-ইন্স্যুরেন্স কমিশন হতে প্রায় দুই কোটি টাকা, বাতিল করা এমআর হতে প্রায় ৩৩ হাজার টাকা, সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় বা খরচের ওপর প্রায় ২৪ লাখ টাকা ও স্থান-স্থাপনা ভাড়ার ওপর প্রায় ৬৯ হাজার টাকাসহ মোট চার কোটি ৯ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ভ্যাট আইন অনুযায়ী সঠিক সময়ে ভ্যাট পরিশোধ না করায় দুই শতাংশ হারে সুদ প্রায় এক কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সুদসহ প্রতিষ্ঠানটি মোট ছয় কোটি টাকার বেশি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
ফাঁকিকৃত ভ্যাট পরিশোধে গত ১৯ জুলাই কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ) কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান সই করা প্রাথমিক দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। নোটিসে প্রতিষ্ঠানটি লিখিত জবাব বা ব্যক্তিগত শুনানিতে আগ্রহী হলে ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রতি এনবিআরের এক চিঠিতে বাণিজ্যিক আমদানিকারক কর্তৃক ইন্স্যুরেন্স ট্যারিফ মূল্য কম দেখিয়ে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা বলা হয়, বিভিন্ন বিমা কোম্পানি বিমা ট্যারিফ কম দেখানোর পাশাপাশি ঋণপত্রের আংশিক কভার নোট ইন্স্যুরেন্স, রি-ইন্স্যুরেন্স না করা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ট্যারিফ কোড হওয়ায় তা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ বিধায় যাচাই চলমান রয়েছে। অন্যান্য বিমা কোম্পানির মতো কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের যাচাই-বাছাই শেষ হলে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভ্যাট দক্ষিণ কমিশনারেটের একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে নিরীক্ষা করা হয়। নিরীক্ষায় ছয় কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি অন্য কোনো কৌশলে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে কিনাÑতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ এর বক্তব্য জানতে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ফোন দেওয়া হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। এ বিষয়ে কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএনএম ফজলুল করীম মুন্সী শেয়ার বিজকে বলেন, ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি জানা নেই। তথ্য আমার কাছে নেই। আমাদের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) বিষয়টি বলতে পারবে। তবে কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের সিএফও মাইন উদ্দিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বিমা খাতের কোম্পানি হিসেবে ১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় কর্ণফুলি ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। গত জুন শেষে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মধ্যে ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ ও বাকি ৫৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।
কোম্পনিটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে কর-পরবর্তী কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ছয় কোটি ১২ লাখ টাকা। সমাপ্ত হিসাববছর শেষে ২০১৭ সালে বিনিয়োগকারীদের পাঁচ শতাংশ নগদ ও ছয় শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৪ টাকায়।

Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 12:14 am
ভ্যাট ফাঁকিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স
পত্রিকা,শেষ পাতা ♦ প্রকাশ: