ভ্যাট ফাঁকিতে বিএসবি গ্লোবাল ও ব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল প্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। আইএসও-২০০০ সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটির সেবার বিপরীতে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

একইসঙ্গে ব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল নামে অপর একটি এডুকেশন কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। সম্প্রতি ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযানের পর এ ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন ও দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, পড়াশোনা, টিউশন ফি ব্যবস্থাপনা, ভিসা প্রসেসিং এবং পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি সহযোগিতা করে থাকে। ১৯৯৩ সাল থেকে এটি যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি এশিয়া এবং ইউরোপ ছাড়াও ইউএসএ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশের ইউনিভার্সিটিগুলো শিক্ষার্থী প্রেরণ করে থাকে।

এছাড়া উত্তরার ব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল আইএলটিএস, টোফেল ও অন্যান্য কোচিং এবং বিদেশি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি-সংক্রান্ত সহায়তা করে থাকে। দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এডুকেশন কনসালটেন্সি সেবার আড়ালে প্রতিষ্ঠানটি বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ পায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ সেপ্টেম্বর ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়।

ড. মইনুল খান জানান, উত্তরার প্রতিষ্ঠানটির নাম ব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল (বাড়ি ২১, ফ্ল্যাট ১বি, ঈসা খাঁ রোড, সেক্টর ৬, উত্তরা)। এই প্রতিষ্ঠানটি কোনোরকম ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়াই শিক্ষাসংক্রান্ত ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির সার্ভিসের মধ্যে রয়েছেÑআইএলটিএস, টোফেল ও অন্যান্য কোচিং এবং বিদেশি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি-সংক্রান্ত সহায়তা দেওয়া। উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও চীনের কয়েকটি ইউনিভার্সিটির সঙ্গে তাদের সমঝোতা অনুযায়ী স্থানীয় ছাত্রদের ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর বিনিময়ে তারা ফি ও কমিশন বাবদ টাকা গ্রহণ করে। কিন্তু এই সার্ভিস ভ্যাটযোগ্য হলেও তারা কোনো ভ্যাট নিবন্ধনই নেয়নি এবং ভ্যাট প্রদান করেনি। প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, ব্রিজ গত দুই বছরে প্রায় ৪ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। তারা ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করেনি। এই দুই বছর তারা ২৮ লাখ টাকার সেবা বিক্রি করেছে।

ড. মইনুল খান জানান, বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক গুলশান-২ নম্বর মোড়ে প্লট ২২ রব টাওয়ারের চতুর্থ তলায় অবস্থিত। এই প্রতিষ্ঠানটিও অনুরূপ শিক্ষা সহায়তা প্রদান করে। ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজের সাতটি শাখার মাধ্যমে তারা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বিএসবি ভ্যাটের নিবন্ধন নিলেও তারা প্রকৃত বিক্রির হিসাব গোপন করেছে।

প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, বিএসবি নিবন্ধন গ্রহণ করলেও গত তিন বছরে প্রকৃত ৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সেবা বিক্রয়ের তথ্য গোপন করেছে। এতে তারা প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ টাকা ফাঁকির সঙ্গে জড়িত। এই প্রতিষ্ঠানটি ছাত্রদের কাছ থেকে টিউশন ফি সংগ্রহ করে বিদেশে টাকা পাঠাতেন। এই টাকা লেনদেনে অন্য কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, এটি একটি সেবা ও পরামর্শকমূলক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভর্তি ভিসা, ইমিগ্রেশন, ভ্রমণ, দেশে ও বিদেশে ভর্তির সব তথ্য নিয়ে কাজ করে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, সাইপ্রাস ও হাঙ্গেরিসহ বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। বিএসবি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছেÑক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কিংস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেট্রোপলিটন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলসন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যামব্রিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অব এভিয়েশন, ক্যামব্রিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার ইত্যাদি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০