Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 1:30 am

ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে স্কলাস্টিকার বিরুদ্ধে মামলা

রহমত রহমান: দেশের প্রথম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও অ্যাসেন্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্কলাস্টিকার বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মামলা হয়েছে। সম্প্রতি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (উত্তর)-এর গুলশান বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ও উপ-কমিশনার একেএম সুলতান মাহমুদ এ মামলা করেন।
মামলায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সাড়ে ১১ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ১৮ মাসে স্কলাস্টিকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি, ভর্তি ফি, আবেদন ফি ও আইডি কার্ড ফির সঙ্গে এ ভ্যাট নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়নি। এর আগে চলতি ১১ মার্চ ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে স্কলাস্টিকার বারিধারা কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কেনাকাটা ও ব্যয়ের ওপর উৎসে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে আরেকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২১ মার্চ দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকায় ‘স্কলাস্টিকার অ্যাকাউন্টে শিক্ষার্থীদের ভ্যাট’ শিরোনামে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
মামলার প্রতিবেদনে বলা হয়, এনবিআর ২০১৪ সালের (৫ জুন) প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ওপর ভ্যাট আরোপ করে এসআরও জারি করে। ২০১৫ সালে রিট করা হলে ২০১৬ সালের ১২ জুন উচ্চ আদালত তা স্থগিত করেন। ২০১৬ সালে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে তা এ আদেশ স্থগিত করা হয়। পরে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালত সরকার পক্ষে রায় দেন। এর মধ্য দিয়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে সরকারের ভ্যাট আদায়ের বাধা কেটে যায়।
আদালতের রায় অনুযায়ী ভ্যাট পরিশোধে স্কলাস্টিকাকে দুই দফায় নোটিস জারি করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কোনো সাড়া দেয়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো দাখিলপত্র জমা দেয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১১ মার্চ স্কলাস্টিকার বারিধারা কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে কাগজপত্র জব্দ ও পর্যালোচনা করে ফাঁকি উদ্ঘ্াটন করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্কলাস্টিকা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১২ মাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি হিসেবে প্রায় ৭৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা নেয়। এছাড়া ভর্তি ফি তিন কোটি ৮২ লাখ টাকা, আবেদন ফি দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা, আইডি ফি এক লাখ ২১ হাজার টাকাসহ মোট প্রায় ৮৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে; যার ওপর সাড়ে সাত শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য। সাড়ে সাত শতাংশ হারে এর ওপর ২০১৭-১৮ অর্থবছর ভ্যাট প্রায় ছয় কোটি ২৫ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় ৫৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়। এর মধ্যে টিউশন ফি প্রায় ৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, ভর্তি ফি প্রায় এক কোটি ৭২ লাখ টাকা, আবেদন ফি দুই লাখ টাকা, আইডি কার্ড ফি এক লাখ ১৩ হাজার টাকা। প্রায় ৫৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার ওপর পাঁচ শতাংশ হারে প্রযোজ্য ভ্যাট প্রায় দুই কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮ মাসে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৩৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকার সেবা প্রদান করেছে। যার মোট প্রযোজ্য ভ্যাট প্রায় ৯ কোটি সাত লাখ টাকা। ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের ওপর দুই শতাংশ হারে সুদ প্রায় দুই কোটি ২২ লাখ টাকা। সুদসহ প্রযোজ্য ভ্যাট প্রায় ১১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ ভ্যাট স্কলাস্টিকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে জমা না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ফাঁকি দিয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে না বলে দাবি করেছেন ব্যবস্থাপক আহসান। তবে স্কলাস্টিকার কার্যালয় থেকে জব্দ করা কাগজপত্রে দেখা যায়, স্কলাস্টিকার পাঁচটি শাখায় প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভ্যাট নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে ধানমন্ডির একটি ভাড়া বাড়িতে চালু হয় স্কলাসটিকা টিউটোরিয়াল। ২০০১ সালে ঢাকার উত্তরায় নিজস্ব ভবনে ‘প্লে’ গ্রুপ থেকে ‘ও’ লেভেল পর্যন্ত চালু হয়ে কিছুদিন পর ‘এ’ লেভেলে উন্নীত হয়। বর্তমানে ধানমন্ডি, মিরপুর, উত্তরায় ও গুলশানে পাঁচটি শাখা রয়েছে।