Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:01 pm

ভ্যাট ফাঁকি দিয়েই ব্যবসা করছে ‘আয়েশা’স বিউটি পার্লার’, নিবন্ধন নেয়নি বনানী শাখা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আয়েশা’স মেকওভার সেলুন অ্যান্ড স্পা। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় এই বিউটি পার্লারের দুইটি শাখার বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা)। এর মধ্যে রাজধানীর বনানীতে এই বিউটি পার্লারের শাখার ভ্যাট নিবন্ধন নেই। প্রতিষ্ঠানটির দুইটি শাখার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) ভ্যাট ফাঁকির মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ড. মইনুল খান জানান, ‘রাজধানীর ওয়ারী ও বনানীতে আয়েশা’স মেকওভার সেলুন এন্ড স্পা এর দুটো পার্লারে অভিযান চালিয়ে ১৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকার ভ্যাট ফাঁকির অনিয়ম উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দারা। বনানীর পার্লারে ভ্যাট নিবন্ধন না নিয়েই ব্যবসা করছে প্রতিষ্ঠানটি। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় আজ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা করা হয়েছে। আয়েশা’স মেকওভার সেলুন অ্যান্ড স্পা প্রতিষ্ঠানটি ২৯/১, টিপু সুলতান রোড, ওয়ারী, ঢাকায় অবস্থিত (ভ্যাট নিবন্ধন নং-০০২৪৮২৭১১-০৩০১)। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি আরেকটি শাখা হাউস-২৪, ব্লক-এফ, রোড-৮, বনানী, ঢাকায় অবস্থিত হলেও নিবন্ধন না নিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘একজন গ্রাহকের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই গ্রাহক আয়েশা’স মেকওভার সেলুন অ্যান্ড স্পা থেকে সেবা গ্রহণ করলে তাকে কাঁচা চালানে বিল প্রদান করে। পরে তিনি ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ দেন। ১৯ ডিসেম্বর ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক তানভীর আহমেদ এর নেতৃত্বে একটি দল প্রতিষ্ঠানটির বনানী পার্লারে এবং সহকারী পরিচালক আলমগীর হুসেন এর নেতৃত্বে ওয়ারীর পার্লারে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযানের শুরুতে প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত দলিলাদি উপস্থাপনের জন্য অনুরোধ করা হলে, তিনি ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর এবং ভ্যাট সংক্রান্ত কোন দলিলাদি দেখাতে পারেননি। পরবর্তীতে ভ্যাট গোয়েন্দা কর্মকর্তাগণ প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে তল্লাশি করেন। প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গনে প্রাপ্ত ভ্যাট ও বাণিজ্যিক দলিলাদির প্রাথমিক যাচাইয়ে গরমিল এবং ভ্যাট পরিহারের আলামত পাওয়ায় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অধিকতর যাচাই বা পরীক্ষার জন্য ভ্যাট সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করেন।’

মহাপরিচালক বলেন, ‘তদন্ত অনুসারে, আয়েশা’স মেকওভার সেলুন এন্ড স্পা এর ওয়ারী শাখায় ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৭৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬০০ টাকার সেবা প্রদান করে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় সূত্রাপুর ভ্যাট সার্কেলে মাসিক রিটার্নের মাধ্যমে মাত্র ৪৩ হাজার টাকা ভ্যাট প্রদান করে। এক্ষেত্রে সেবা কোড- এস-০৩০.০০ মোতাবেক সমুদয় সেবার বিপরীতে ভ্যাট আইন অনুসারে ১১ লাখ ১০ হাজার ২৯০ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩২ টাকা সুদ প্রযোজ্য।’

তিনি বলেন, ‘অপরদিকে, আয়েশা’স মেকওভার সেলুন অ্যান্ড স্পা এর বনানী শাখায় ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে চলতি ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৩১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪০ টাকার সেবা প্রদান করে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় গুলশান ভ্যাট সার্কেলে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধনের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে সেবা কোড- এস-০৩০.০০ মোতাবেক সমুদয় সেবার বিপরীতে ভ্যাট আইন অনুসারে ৪ লাখ ১০ হাজার ৫৮৮ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ৭৮ হাজার ৫৩৩ টাকা সুদ প্রযোজ্য। এছাড়া আয়েশা’স মেকওভার সেলুন অ্যান্ড স্পা এর বনানী শাখায় ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে চলতি ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে স্থান স্থাপনা বাবদ ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রদান করে। যার বিপরীতে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। এই ফাঁকির উপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১২ হাজার ১৯৬ টাকা সুদ প্রযোজ্য।’

মইনুল খান বলেন, ‘তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯২১ টাকা এবং সুদ বাবদ ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৬১ টাকাসহ ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৬৮২ টাকা পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়। এই রাজস্ব পরিহারের দায়ে ভ্যাট আইন অনুসারে আজ পৃথক দুটো মামলা করা হয়েছে। তদন্তে ওয়ারীর পার্লারের বিরুদ্ধে পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মামলার প্রতিবেদনটি ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ভ্যাট নিবন্ধন ব্যতিরেকে ব্যবসা পরিচালনা করায় এবং ভ্যাট ফাঁকির সাথে জড়িত হওয়ায় বনানীর পার্লারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আয়েশা’স মেকওভার সেলুন অ্যান্ড স্পা বনানী শাখায় ফোন দেয়া হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি।