Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:53 pm

ভ্যাট রিটার্ন বেড়েছে ৩৪.৮১% আর রাজস্ব ২২.০৩%

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনায় কুপোকাত অর্থনীতি। রাজস্ব আহরণের বেশিরভাগ ক্ষেত্র প্রায় বন্ধ। মার্চে দেশে করোনা সনাক্ত হয়। মার্চের শেষে সাধারণ ছুটির সাথে বন্ধ হয়ে যায় বেশিরভাগ রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্র। এপ্রিল মাস পুরোটাই প্রায় বন্ধ। এর মধ্যেও এপ্রিল মাসে ভ্যাটের রিটার্ন (দাখিলপত্র) ও রাজস্ব আহরণ আশানুরূপভাবে বেড়েছে। ১৫ মে পর‌্যন্ত ভ্যাট রিটার্ন মার্চের চেয়ে বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর রাজস্ব আহরণ বেড়েছে ২২ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এপ্রিল মাসের ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে ১৫ এপ্রিল শুক্রবার দেশের ২৫২টি ভ্যাট সার্কেল অফিস খোলা ছিল। নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী, প্রতি মাসের ভ্যাট দাখিলপত্র পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জমা দিতে হয়। অন্যথায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে। আইনি বাধ্যবাধ্যতা থাকায় আর করদাতাদের সুবিধার্থে শুক্রবার ছুটির দিনেও সব ভ্যাট সার্কেল খোলা হয়।

এনবিআর সূত্র জানায়, শতভাগ স্বাস্থ্য বিধি মেনেই এপ্রিল মাসের ভ্যাট রিটার্ন ও রাজস্ব নেওয়া হয়। আগত করদাতাদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে দেওয়া হয় সেবা। জনসমাগম করতে দেওয়া হয়নি। অফিসে প্রবেশমুখে হাত ধোঁয়া, স্যানিটাইজার ও স্প্রে করার ব্যবস্থা করা হয়। কর্মকর্তারা সুরক্ষা সামগ্রী পরিধান করে সেবা দেন। সারা দেশে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তবুও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি রিটার্ন দাখিল ও রাজস্ব আহরণ হয়েছে।

আরো পড়ুন-২৫২ ভ্যাট সার্কেল নেয়া হচ্ছে রিটার্ন, নেই অভিযোগ [1]

সূত্র জানায়, ১৫ মে পর্যন্ত সারা দেশে রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৪২ হাজার ৬০০; যা আগের মাসের (মার্চ) ১১ হাজার বেশি। শতকরা হিসেবে দাখিলপত্র বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর এ সময় রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৩ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা; যা আগের মাসের চেয়ে ৭০০ কোটি টাকা বেশি। শতকরা হিসেবে রাজস্ব বেড়েছে ২২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

অপরদিকে, ভ্যাট লক্ষ্যমাত্রার অধিকাংশ যোগান দেয় বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর শাখা। এপ্রিল মাসে এলটিইউ রিটার্ন দাখিল করেছে ১৪৩টি প্রতিষ্ঠান। ৫২টি অনলাইনে ও ৭২টি ম্যানুয়াল। আর রাজস্ব আহরণ হয়েছে এক হাজার ৯৯৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে দুইটি সিগারেট কোম্পানি থেকে রাজস্ব এসেছে এক হাজার ১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, এপ্রিল মাসের রিটার্ন ও রাজস্ব আহরণের এ হিসাব সাময়িক। বন্ধ থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান রিটার্ন দাখিল ও রাজস্ব পরিশোধ করতে পারেনি। মাস শেষে রাজস্ব ও দাখিলপত্রের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। তবে বেশিরভাগ জেলায় করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। ফলে কোন কোন জেলায় লকডাউন কিছু শিথিল করা হলেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দোকানপাট, শপিংমলসহ শিল্প-কারখানা খোলা হয়নি। ফলে ভ্যাটের রিটার্ন ও রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরো বলেন, অনলাইনে রিটার্ন সংখ্যা আগের মাসের চেয়ে বেড়েছে। প্রতিমাসেই বাড়ছে। করোনা প্রার্দুভাবে সার্কেলে গিয়ে রিটার্ন দাখিলে করদাতা ও ভ্যাট কর্মকর্তা-দু’পক্ষের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করলে সেই ঝুঁকি থাকে না। সেক্ষেত্রে প্রতিটি কমিশনারেট করোনা মহামারির মধ্যে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে করদাতাদের উদ্ধুদ্ধ করছেন। এর ফলও পাচ্ছেন তারা।

যশোর ভ্যাট কমিশনার মো. জাকির হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, এ কমিশনারেটের আওতাধীন ১০ হাজার ৬৬৭ করদাতার মধ্যে এপ্রিল মাসের ৮ হাজার ৯৬৩ করদাতা দাখিলপত্র জমা দিয়েছে। এ কমিশনারেটের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কমপ্লায়েন্স হার ৮৪ শতাংশ। আর অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের হার শতভাগ। আর এপ্রিল মাসে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২২ কোটি টাকা। লকডাউনের কারণে প্রতিষ্ঠানের সমস্যা হচ্ছে।

কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনার মো. আজিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, এ কমিশনারেটের আওতাধীন নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬ হাজার ৭৫৪টি। এপ্রিল মাসে রিটার্ন দাখিল করেছে ২ হাজার ৫৬৪টি। এর মধ্যে অনলাইনে ২ হাজার ৩৭২টি, ম্যানুয়াল ১৯২টি। গতবছর একই মাসে রিটার্ন দাখিল হয়েছে এক হাজার ৫২৭টি। এপ্রিল মাসে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৩১৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা গতবছর একই সময় ছিল ২৯২ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, এ কমিশনারেটের আওতাধীন সব জেলা লকডাউন। ওষধ, সিগারেটসহ উৎপাদনশীল বড় কয়েকটি কারখানা চালু রয়েছে। বাকি দোকানপাট, হোটেল, রেস্তোঁয়া, শপিংমল, মার্কেটসহ সব বন্ধ। ফলে রাজস্ব আহরণ প্রভাব পড়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন রিটার্ন দাখিলে অভ্যস্থ হচ্ছে। যার ফলে এপ্রিল মাসে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৯ শতাংশ রিটার্ন জমা পড়েছে।

এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশ লকডাউন। সাত দফায় ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে সাধারণ ছুটি। ঈদকে সামনে রেখে দোকানপাট, হোটেল, রেস্তোঁরা, শপিংমল, উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় বিকিকিনি বেড়ে যেত। বেড়ে যেত ভ্যাট আহরণ। কিন্তু সব বন্ধ থাকায় ভ্যাট আহরণ এপ্রিল মাসে যেমন শিকে উঠেছে, তেমনি মে মাসেও শিকে উঠবে।

কর্মকর্তারা আরো জানান, লকডাউনের মধ্যে রাজস্ব তথা ভ্যাট আহরণে কিছু খাত আশার আলো দেখাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল অপারেটর, সুপারশপ, ওষধ, খাদ্য পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, সিগারেট, ব্যাংক, ইন্টারনেট প্রভূতি। এসব খাত থেকে ভ্যাট আহরণ বাড়তে পারে। বন্ধের মধ্যেও এসব প্রতিষ্ঠান মনিটরিং করছেন ভ্যাট কর্মকর্তারা।

###